নিচুতলার কর্মীরা অলিখিত জোটের রাস্তায় হেঁটেছেন, কাটোয়ার কয়েকটি পঞ্চায়েতের কিছু আসনে তাদের প্রার্থী না থাকার কারণ হিসেবে এমনটাই দাবি করেছে কংগ্রেস এবং তৃণমূল।
কাটোয়ার দু’টি ব্লকে মোট ১৫টি পঞ্চায়েতের ২৫টি আসনে এ বার প্রার্থী দেয়নি তৃণমূল। তাদের ‘শক্ত ঘাঁটি’ হিসেবে পরিচিত এই এলাকায় কংগ্রেসও বেশ কিছু আসনে প্রার্থী দেয়নি। দু’টি দলের নেতাদেরই দাবি, কিছু জায়গায় প্রার্থী দেওয়া যায়নি সাংগঠনিক দুর্বলতার জন্য। বাকি ক্ষেত্রে কারণ নিচুতলার জোট।
কাটোয়া ১ ব্লকের গিধগ্রাম, গোয়াই, করজগ্রাম, খাজুরডিহি, কোশিগ্রাম, শ্রীখণ্ড পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় রয়েছে কংগ্রেস। ব্লকের বাকি তিনটি পঞ্চায়েত সরগ্রাম, আলমপুর ও সুদপুর রয়েছে সিপিএমের দখলে। নিজেদের দখলে থাকা পঞ্চায়েতগুলির সব আসনেই প্রার্থী দিয়েছে কংগ্রেস। গোয়াই পঞ্চায়েতে তৃণমূল ৯টি আসনের মধ্যে তিনটিতে প্রার্থী দিয়েছে। গিধগ্রাম, আলমপুর ও সুদপুর পঞ্চায়েতে যথাক্রমে তিনটি, দু’টি ও পাঁচটি করে আসনে তৃণমূল প্রার্থী দিতে পারেনি। কাটোয়া ১ পঞ্চায়েত সমিতির গিধগ্রাম এলাকার একটি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হচ্ছেন কংগ্রেস প্রার্থী।
অনেকটা একই রকম চিত্র কাটোয়া ২ ব্লকেও। কংগ্রেস পরিচালিত জগদানন্দপুর, পলসোনা ও শ্রীবাটি পঞ্চায়েতের প্রতিটি আসনেই ত্রিমুখি লড়াই। তবে পলসোনায় দু’টি আসনে তৃণমূলের প্রার্থী নেই। গত বার অগ্রদ্বীপ ও গাজিপুর পঞ্চায়েতে কংগ্রেস কোনও প্রার্থী দিতে না পারলেও এ বার অগ্রদ্বীপে ১৩টি আসনের ১০টিতে ও গাজিপুরে অর্ধেক আসনে প্রার্থী দিয়েছে কংগ্রেস। সিপিএমের হাতে থাকা সিঙ্গি পঞ্চায়েতে একটি ও করুইয়ে ৬টি আসনে প্রার্থী দিতে পারেনি তৃণমূল। তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, করুইয়ের দু’টি আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েও প্রত্যাহার করে নিয়েছেন তাদের প্রার্থীরা।
জেলায় প্রায় চল্লিশটি আসনে প্রার্থী দিতে পারেনি তৃণমূল। তার মধ্যে কাটোয়াতেই রয়েছে ২৫টি আসন। তৃণমূলেরই একটি সূত্রের দাবি, কংগ্রেসের ‘দাপটে’ প্রথম থেকেই কাটোয়া ১ ব্লকে তারা সে ভাবে সংগঠন গড়ে তুলতে পারেনি। আগে পূর্বস্থলী বিধানসভা এলাকায় থাকাকালীন কাটোয়া ২ ব্লকের পাঁচটি পঞ্চায়েত এলাকায় তৃণমূলের প্রভাব ছিল। ২০১১ সালে বিধানসভা ভোটের আগে এলাকা পুনর্বিন্যাস হলে কাটোয়া ২ ব্লকের সাতটি পঞ্চায়েতই কাটোয়া বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্ভুক্ত হয়। কাটোয়া ১ ব্লকের তিনটি পঞ্চায়েত মঙ্গলকোট ও দু’টি পঞ্চায়েত কেতুগ্রাম বিধানসভার অন্তর্ভুক্ত হয়। এই এলাকা পুনর্বিন্যাসের পরে তৃণমূল সংগঠন মজবুত করা শুরু করে।
কাটোয়ার তৃণমূল নেতা অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “গোয়াই ও করুইতে সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে প্রার্থী দেওয়া যায়নি। আর বাকি জায়গায় নিচুতলায় অলিখিত জোট হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।” প্রার্থী দিতে না পারা প্রসঙ্গে কংগ্রেসের জেলা সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ সাহার যুক্তি, “সরগ্রামে আমাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা রয়েছে। এ ছাড়া নানা পঞ্চায়েতে কিছু আসনে সিপিএমকে হারাতে তৃণমূলের সঙ্গে অলিখিত সমঝোতা হয়েছে।”
বামেরা অবশ্য গিধগ্রামের কয়েকটি আসন ছাড়া সব আসনেই প্রার্থী দিয়েছে। গিধগ্রামে প্রার্থী দিতে না পারার জন্য সিপিএম দায়ী করেছে ‘সন্ত্রাস’কে। দলের কাটোয়া জোনাল সম্পাদক অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “গিধগ্রামের কৈথনগ্রামে পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থীকে মনোনয়ন প্রত্যাহারে বাধ্য করা হয়েছে।” অলিখিত ‘জোট’ সম্পর্কে তাঁর প্রতিক্রিয়া, “কিছু আসনে প্রার্থী থাকলেও ওই দু’টি দলের মধ্যে গোপন সমঝোতা তো রয়েইছে।” |