তৃণমূলে যোগ দুই সিপিএম প্রার্থীর |
নিজস্ব সংবাদদাতা • দুর্গাপুর |
মনোনয়ন জমা দিয়েছেন সিপিএমের হয়ে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে রীতিমতো প্রচারও শুরু করে দিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎই রবিবার সন্ধ্যায় তৃণমূলের এক অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে কাঁকসার গোপালপুর পঞ্চায়েতের দুই প্রার্থী নিতাই ঘোষ ও তাপসী বাউড়ি জানালেন, আর সিপিএম নয়, এ বার তাঁরা তৃণমূলে। তবে সিপিএম নেতৃত্বের দাবি, সন্ত্রাস সৃষ্টি করে তৃণমূল তাঁদের দুই প্রার্থীকে নিজেদের দলে যোগ দিতে বাধ্য করেছে।
এ বছর বামুনাড়ার ২০ ও ২১ নম্বর আসন থেকে সিপিএমের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেন নিতাইবাবু ও তাপসীদেবী। দলের তরফে তাঁদের সমর্থনে প্রচারও শুরু হয়। নিজেরাও বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভোট দেওয়ার আর্জি জানাচ্ছিলেন। কিন্তু রবিবার সন্ধ্যায় ছবিটা বদলে যায়। তৃণমূলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সহ-সম্পাদক দেবদাস বক্সী এবং ব্লক সভাপতি অশোক মুখোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে একটি অনুষ্ঠানে তাঁরা সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। কিন্তু মনোনয়ন জমার পরে এমন সিদ্ধান্ত কেন? নিতাইবাবুর দাবি, “সিপিএমের হয়ে প্রচারে বেরিয়ে দেখি, কেউ আমাদের কথা শুনছেন না। সিপিএমের প্রতি তীব্র ঘৃণার কথা বলছেন। সবাই এককাট্টা। তাই তৃণমূলে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” দেবদাসবাবুরও দাবি, “মানুষের ঘৃণার জন্যই সিপিএম সব আসনে প্রার্থী খুঁজে পায়নি। দেরিতে হলেও দুই সিপিএম প্রার্থী আমাদের দলে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁদের সাধুবাদ জানাই।” |
তাপসী বাউড়ি ও নিতাই ঘোষ।—নিজস্ব চিত্র। |
সিপিএমের অবশ্য পাল্টা দাবি, এই দুই প্রার্থীর পরিবারের সদস্যেরা বামুনাড়ায় একটি বেসরকারি ইস্পাত কারখানায় ঠিকা কর্মীর কাজ করেন। গত কয়েক দিন ধরে তাঁদের কারখানায় ঢুকতে বাধা দিচ্ছে তৃণমূল। দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা কাঁকসার প্রাক্তন জোনাল সম্পাদক বীরেশ্বর মণ্ডলের কথায়, “কাজ হারানোর ভয়ে ওই দু’জন এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন। তৃণমূলের সন্ত্রাসের ভয়ে প্রকৃত তথ্য প্রকাশ্যে বলতে পারছে না ওরা।” তৃণমূল নেতা দেবদাসবাবু বলেন, “মুখ পুড়েছে সিপিএমের। মুখ লুকোতে এ সব বলছে।”
মনোনয়ন জমা দেওয়া ও প্রত্যাহার পর্ব জুড়েই কাঁকসায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে সিপিএম প্রার্থীদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠছিল। প্রথমে ব্লকের ছ’টি পঞ্চায়েত, ২১টি পঞ্চায়েত সমিতি এবং দু’টি জেলা পরিষদ আসনে প্রার্থী দিয়েছিল সিপিএম। কিন্তু মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময় পেরোলে দেখা যায়, বিদবিহার পঞ্চায়েতের ১২টি আসন থেকেই সরে গিয়েছেন সিপিএম প্রার্থীরা। এ ছাড়া আমলাজোড়া পঞ্চায়েতের ৭টি এবং গোপালপুর পঞ্চায়েতের ৬টি আসন থেকেও মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন সিপিএম প্রার্থীরা। তৃণমূলের লাগাতার হুমকির জন্যই এমন সিদ্ধান্ত, দাবি করেন কিছু প্রার্থী।
এ দিনের ঘটনায় নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কিছু বদল হবে কি না, তা জানতে চাওয়া হলে জেলা নির্বাচনী দফতর সূত্রে জানানো হয়, মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের পর্ব শেষ হয়েছে আগেই। ইতিমধ্যে ৭ নম্বর ফর্ম ছাপা হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ, ব্যালটে ওই দুই প্রার্থীকে দেখা যাবে সিপিএমের প্রতীকেই। তবে তৃণমূলের দাবি, তাতে কোনও অসুবিধা হবে না। কারণ ইতিমধ্যেই ওই দু’জন এলাকায় লিফলেট বিলি করে ভোটারদের তৃণমূল প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার আর্জি জানাচ্ছেন। |