প্রার্থী নেই বিরোধীদের
সমস্যায় ভরা পাঁচগাছিয়ায় ক্ষমতায় আসছে তৃণমূলই
ভোট এলে প্রচারে নানা কাজের প্রতিশ্রুতি দেন প্রার্থীরা। জিতলে সব না হোক, কিছু প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়। ভোটের আগে মানুষের মন পেতেও শাসকপক্ষ নানা কাজে গতি আনে। প্রচারে যাওয়া প্রার্থীদের কাছে নানা দাবিদাওয়া পেশের সুযোগও পান বাসিন্দারা। কিন্তু এ বার তাঁদের এলাকায় সেই সুযোগ নেই বলে খানিকটা হতাশ বারাবনির পাঁচগাছিয়া পঞ্চায়েতের বাসিন্দারা।
নর্দমা থেকে উপচে পড়ে আবর্জনা।
আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে পাঁচগাছিয়ার সাতটি আসনের কোনওটিতেই তৃণমূলের প্রার্থীরা ছাড়া অন্য কেউ মনোনয়ন দেননি। ফলে, এই পঞ্চায়েতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হতে চলেছে তৃণমূল। গত পাঁচ বছরও এই পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় ছিল তারাই। পঞ্চায়েত সমিতিতেও এই এলাকার দু’টি আসনে কোনও প্রার্থী নেই বিরোধীদের। সিপিএমের অভিযোগ, তাঁদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তৃণমূলের লোকেরা হুমকি দেওয়ার ফলেই শেষ পর্যন্ত তাঁদের কেউ মনোনয়ন দিতে পারেননি বলে দাবি সিপিএম নেতাদের। যদিও তৃণমূলের দাবি, এলাকায় তারা গত পাঁচ বছর ধরে যা কাজ করেছে তা দেখেই অন্য দলের হয়ে আর কেউ প্রার্থী হতে চাননি। বাসিন্দাদের একাংশ অবশ্য এলাকার উন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয়ে অন্য রকম মত জানাচ্ছেন। এলাকা ঘুরেও দেখা গেল, এখনও বহু জায়গায় রাস্তা নেই, আবর্জনা সাফ হয় না, কাঁচা নর্দমার জল ও বর্জ্য দূষণ ছড়াচ্ছে, অপরিষ্কার পুকুরের জলই ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন বাসিন্দারা, খুঁটি পোঁতা হলেও আসেনি বিদ্যুৎ।
নিমধাওড়ার বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, মাত্র ছ’মাস আগেই ৬ লক্ষ টাকা খরচে এলাকায় দু’টি কালভার্ট গড়া হয়। কিন্তু এরই মধ্যে সেগুলি ভেঙে গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা বারিক বাউড়ি জানান, এলাকায় প্রায় ৭০টি পরিবার বসবাস করে। কিন্তু পাড়ায় একটিও পাকা নর্দমা নেই। কাঁচা নালাগুলির কোনটিই নিয়মিত সাফাই হয় না। ফলে আবর্জনা উপচে এলাকা দূষিত করে। এই পরিবেশে শিশু ও বয়স্ক মানুষজন অসুস্থ হচ্ছেন বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। বস্তির একমাত্র রাস্তাটি এখনও পাকা হয়নি। জানা গেল, বর্ষায় সেখানে এক হাঁটু জল দাঁড়িয়ে যায়। অথচ নিমধাওড়া এলাকাটি পঞ্চায়েত অফিস থেকে মেরেকেটে তিনশো মিটার দূরে। প্রবীণ বাসিন্দা বৃন্দা বাউড়ির ক্ষোভ, “সমস্যা বলার জন্য পছন্দ মতো প্রতিনিধি নির্বাচনও এ বার আমাদের হাতে রইল না।”
বেহাল রাস্তা। এমনই হাল যাত্রী প্রতীক্ষালয়ের।
পঞ্চায়েত অফিস থেকে কিলোমিটার খানেক দূরে রয়েছে সেনর্যালে বি ব্লক। পানীয় জল থেকে নিকাশি, সমস্যা সব কিছুতেই। মুখ থুবড়ে পড়েছে সজলধারা প্রকল্প। পরিস্থিতি এমনই যে সরকারি উদ্যোগে তৈরি কুয়োগুলির জলও ব্যবহারের জো নেই। কয়েকটি চাপাকল আছে, কিন্তু বেশিরভাগ সময়েই খারাপ হয়ে থাকে। বি-ব্লক ছাড়িয়ে নিচুবস্তি এলাকায় গিয়ে দেখা যায় অপরিচ্ছন্ন পুকুরের জলই ভরসা বাসিন্দাদের। স্থানীয় বাসিন্দা সমীর রুইদাস বলেন, “দশ বছর ধরে এই পুকুর পরিষ্কার করে দেওয়ার জন্য আবেদন করছি। কিন্তু কেউ কথা শুনছেন না।”
দূষণ পাঁচগাছিয়া পঞ্চায়েতের একটি বড় সমস্যা। কোলিয়ারির দূষণ, পাথরভাঙার দূষণ, ভাঙা রাস্তায় গাড়ি যাতায়াতের জন্য দূষণ, যেখানে সেখানে জমা আবর্জনার ছড়ানো দূষণে বিপর্যস্ত জনজীবন। স্থানীয় বাসিন্দা বারিদবরণ মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “পাথরভাঙা ক্রাশার যন্ত্রের ধুলোয় শ্বাসকষ্ট হয়। পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত ব্যবস্থা তো নেননি, উল্টে আরও ক্রাশার যন্ত্র বসানোর অনুমোদন দিচ্ছেন।” কোলিয়ারির দূষণ প্রতিরোধের জন্য বনসৃজনের দাবি তুলেছিলেন এলাকাবাসী। কিন্তু পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ কান দেননি বলে অভিযোগ। পাঁচগাছিয়া মোড় থেকে ব্যাঙ্ক মোড় পর্যন্ত একমাত্র রাস্তাটি প্রায় ৯ বছরেরও বেশি সময় বেহাল পড়ে। প্রতি বর্ষায় এক হাঁটু জলকাদায় ভরে থাকে। পাঁচগাছিয়া বাসস্ট্যান্ডে যাত্রী প্রতিক্ষালয় কয়েক বছর ধরে ভেঙে পড়ে আছে। সংস্কারের দাবি উঠলেও পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের কোনও হেলদোল দেখা যায় না, দাবি বাসিন্দাদের।
এলাকাবাসীর একাংশের ক্ষোভ, নানা দাবি থাকা সত্ত্বেও জনপ্রতিনিধি বাছার ব্যাপারে এ বার তাঁদের কোনও ভূমিকা থাকছে না। পঞ্চায়েত আবার হাতে আসতে চলেছে, এই আনন্দে ইতিমধ্যে এলাকায় মিছিল করে ফেলেছেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা। কেন এই সব দাবিপূরণ হয়নি, সে প্রশ্নে বিদায়ী পঞ্চায়েত প্রধান সঞ্জয় বাউড়ির আশ্বাস, আগামী পাঁচ বছরে সব কাজ করে দেওয়ার চেষ্টা হবে। তৃণমূলের ব্লক নেতা পাপ্পু উপাধ্যায়েরও দরাজ আশ্বাস, সরকারি ভাবে দায়িত্ব পেলেই কাজে হাত দেবে তাদের পঞ্চায়েত।

ছবি: শৈলেন সরকার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.