টিকিট দেয়নি তৃণমূল, প্রধান এ বার নির্দল প্রার্থী
দু’দশক ধরে পঞ্চায়েত সদস্য এবং তিন বছর প্রধান থাকার পরেও এ বার দলীয় প্রতীক পেলেন না বুদবুদ পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান কাশীনাথ চট্টোপাধ্যায়। জোড়া ফুল নয়, এ বারে পঞ্চায়েত সমিতিতে তিনি লড়ছেন জোড়া পাতা প্রতীকে। কাশীনাথবাবুর কথায়, “তিন দশকের রাজনৈতিক জীবনে কপালে এটাও ছিল!”
বুদবুদ পঞ্চায়েতে মোট আসন ১৭টি। গতবার সিপিএমের ৭টি ও সিপিআইয়ের ২টি আসন মিলে ক্ষমতা দখল করে বামফ্রন্ট। ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে জোজিলা লাইন এলাকায় অবৈধ দখলকারীদের উচ্ছেদ করেন সেনা কর্তৃপক্ষ। তাতে এলাকার প্রায় শ’খানেক বাসিন্দা কার্যত গৃহহীন হয়ে পড়েন। অভিযোগ, বামফ্রন্ট পরিচালিত পঞ্চায়েতের কাছ থেকে সেই সময় কোনও সাহায্য পাননি তাঁরা। এর প্রতিবাদে পঞ্চায়েতের তৎকালীন বিরোধী নেতা তৃণমূলের কাশীনাথবাবুর নেতৃত্বে প্রধানের অপসারণ চেয়ে অনাস্থা আনেন সদস্যেরা। সিপিআই পঞ্চায়েত সদস্য সচ্চিদানন্দ সদা নিজেও তৃণমূলের পক্ষ নেন। পরে প্রকাশ্য সভায় তৃণমূলে যোগও দেন তিনি। অনাস্থা ভোটে সিপিএম প্রধান ক্ষেত্রনাথ ঘোষকে হারিয়ে নতুন প্রধান নির্বাচিত হন কাশীনাথবাবু। তিন বছর প্রধান হিসাবে কাজ করার পরে এ বারও টিকিট বাঁধা, এমনটাই ভেবেছিলেন কাশীনাথবাবু। তৃণমূল সূত্রেও জানা গিয়েছে, গত ৩০ মে দুর্গাপুরের ভিড়িঙ্গিতে তৃণমূল কার্যালয়ে জেলা (শিল্পাঞ্চল) কমিটির বৈঠকে চূড়ান্ত হওয়া প্রার্থী তালিকাতে তাঁর নাম ছিল। ৮ জুন দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় দুর্গাপুরে বৈঠক করে যান। তখনও কাশীনাথবাবু জানতেন, তিনি থাকছেন। কিন্তু ১০ জুন, মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন তিনি জানতে পারেন, পঞ্চায়েত সমিতির ৯ নম্বর আসনে তাঁর জায়গায় দল থেকে প্রার্থী করা হয়েছে অনুপ চট্টোপাধ্যায়কে। সেদিনই নির্দল প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
কাশীনাথ চট্টোপাধ্যায়।—নিজস্ব চিত্র।
কাশীনাথবাবুর আদি বাড়ি কলকাতায় হলেও বাবার কাজের সুবাদে বুদবুদে আসেন তাঁরা। পরে পাকাপাকি ভাবে থেকে যান। কাশীনাথবাবু জানান, বরাবরই তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভক্ত। ১৯৮৪ সালে যাদবপুর লোকসভা নির্বাচনে মমতার হয়ে মিছিলেও হেঁটেছেন বলে তাঁর দাবি। বয়স তখন আঠেরোও পেরোয়নি। পরে কংগ্রেস প্রার্থী হিসাবে বুদবুদ পঞ্চায়েতের সদস্য নির্বাচিত হন তিনিু। ১৯৯৮ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল গড়তেই তিনি যোগ দেন দলে।
এ বার নির্দল হিসাবে লড়লেও নিজেকে তৃণমূল কর্মী হিসাবেই ভাবছেন তিনি। তাঁর কথায়, “কে আসল তৃণমূল এই নির্বাচনে তা প্রমাণ করে দেব। আমি তো জিতবই। পাশাপাশি বাকি আসন থেকে তৃণমূল প্রার্থীদের জিতিয়ে আনার জন্যও যা করার করব।” এ কথা শুনে তাঁর আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল প্রার্থী অনুপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমার লড়াই সিপিএমের সঙ্গে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শ পাথেয় করেই আমার সঙ্গে বাকিরাও জিতবেন। নির্দল প্রার্থীর সমর্থনের দরকার নেই।” দলীয় নেতত্বের তরফেও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর অনুরোধ করা হয় তাঁকে। দলের জেলা সভাপতি (শিল্পাঞ্চল) অপূর্ব মুখোপাধ্যায় বলেন, “কাশীনাথবাবুর ক্ষেত্রে মিস কমিউনিকেশন হয়ে গিয়েছে। বাকিদের মতো তাঁকেও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে অনুরোধ করা হয়েছে।”
তবে ব্লক সভাপতি জনার্দন চট্টোপাধ্যায় কাশীনাথবাবুর বিরুদ্ধে দলীয় নির্দেশ অগ্রাহ্য করার অভিযোগ এনেছেন। তিনি বলেন, “উনি পঞ্চায়েত সমিতিতে লড়বেন না বলে জানিয়েছিলেন। হঠাৎ আমি যে আসনে দাঁড়াব ঠিক করেছিলাম সেই আসনে মনোনয়ন জমা দেন।” দলের একাংশের দাবি, কাশীনাথবাবু দলের ব্লক সভাপতি জনার্দন চট্টোপাধ্যায় এবং জেলা (শিল্পাঞ্চল) সহ-সম্পাদক পরেশ পালের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের শিকার। পরেশবাবু এ বার জেলা পরিষদের প্রার্থী। তাই নিজে সামনে না থেকে কাশীনাথবাবুকে দিয়ে লড়াই জিইয়ে রাখার চেষ্টা করছেন বলেও দলের একাংশের দাবি। জনার্দনবাবু বলেন, “পরেশবাবুকে বলেছি, কোনও নির্দল প্রার্থীর সঙ্গে সখ্যতা রাখা যাবে না। দলীয় প্রার্থীদেরই সমর্থন করতে হবে।” পরেশবাবু অবশ্য বলেন, “জেলা কমিটির চূড়ান্ত করা তালিকায় বেশ কিছু রদবদল করেছেন ব্লক সভাপতি। ফলে কাশীনাথবাবুর মতো কেউ কেউ নির্দল হিসাবে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছেন। আমি দলীয় নির্দেশ মেনে চলতে বাধ্য।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.