|
|
|
|
|
সহজ ট্রেডমিল ঝুঁকির ওয়ার্ক আউট
না-জেনে না-বুঝে ট্রেডমিলে ওয়ার্ক আউট করা মানেই মস্ত ঝুঁকি নেওয়া।
সাবধান হওয়ার উপায় বাতলালেন ফিটনেস বিশেষজ্ঞ চিন্ময় রায়। |
|
শরীর সুস্থ রাখতে আজকাল অনেকেই বাড়িতে ট্রেডমিল কিনে রাতারাতি ওয়ার্ক আউট শুরু করে দিচ্ছেন। শোরুম-এ শুধু স্টপ, স্টার্ট বাটন আর স্পিড-এর অপারেশন জেনে নিয়ে বাড়িতে ওয়ার্ক আউট শুরু করে দেবেন না কিন্তু।
অভিনেতা, বছর সাঁইত্রিশের আবির গোস্বামী ছিলেন ফিটনেস নিয়ে অত্যন্ত সচেতন। জিমে ওয়ার্ক আউট করছিলেন। মুহূর্তে হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে স্তব্ধ হয়ে গেল আবির-এর ট্রেডমিল আর টিভি সিরিয়ালের দৌড়। প্রশ্ন উঠে গেল নানা মহলে। ডাক্তার বা সার্টিফায়েড ফিটনেস বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ না করে ট্রেডমিলে হাঁটা বা দৌড়ানো ঠিক কতটা যুক্তিপূর্ণ?
ভুলটা তা হলে কার? যিনি না-বুঝে ট্রেডমিল করছেন তাঁর, না জিম কর্তৃপক্ষের?
ভুলটা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দু’জনেরই। শতকরা ৯৫ ভাগ জিমে সার্টিফায়েড ট্রেনার নেই। ভর্তির সময় চল্লিশোর্ধ্ব কোনও মানুষ, ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল, রক্তচাপ, থাইরয়েড, আর্থ্রাইটিস-এ ভুগছেন কি না বা নিয়মিত কোনও ওষুধ খাচ্ছেন কি না, এ সব অধিকাংশ জিম-এ জিজ্ঞেস করা হয় না। কারও হৃদরোগজনিত সমস্যা আছে কি না তার নথি রাখা হয় না।
যাঁরা দীর্ঘ দিন ধরে ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তাঁদের পক্ষে ট্রেডমিলে খুব জোরে অনেক ক্ষণ ধরে হাঁটা বা দৌড়নোয় ঝুঁকি থাকে বইকী। পরিণামে হতে পারে মৃত্যুও। তাই হিসেব কষে ট্রেডমিলে হাঁটতে বা দৌড়োতে হবে।
আমেরিকান কলেজ অফ স্পোর্টস মেডিসিন বলছে, বসে বসে যাঁরা জীবনযাপন করেন, তাঁরা অধিকাংশ সময়ে হার্ট রেট-এর ৫০% হারে ট্রেডমিল শুরু করুন। সর্বাধিক হার্ট রেট অঙ্কের হিসেবে এ ভাবে কষে নিন। ২২০ - আপনার বয়স= আপনার সর্বাধিক হার্ট রেট। আপনার বয়স যদি ৪০ বছর হয়, তা হলে আপনার সর্বাধিক হার্ট রেট হল ২২০-৪০= ১৮০ বিটস প্রতি মিনিটে। এর পঞ্চাশ শতাংশ হল ৯০ বিটস প্রতি মিনিটে। জিমে নিয়ম করা দরকার নতুন মেম্বার নিতে গেলে ডাক্তারের কাছ থেকে ফিটনেস ট্রেনিংয়ে জয়েন করার সার্টিফিকেট নিয়ে আসা। |
|
অভিনেতা আবির গোস্বামী জিমে
ট্রেডমিল
ওয়ার্ক আউট করছিলেন। মুহূর্তে
হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে
স্তব্ধ হয়ে গেল আবির-এর
ট্রেডমিল আর টি.ভি সিরিয়ালের দৌড় |
|
মোটোরাইজড ট্রেড মিলে হার্ট রেট মনিটর থাকে। স্টিলের একটা হাতল আছে, যেটা এক-দু’মিনিট পর হাত দিয়ে ধরলে হার্ট রেট স্ক্রিনে ভেসে ওঠে। আপনার বয়স অনুপাতে যা হার্ট রেট হওয়া দরকার, তার বেশি হলে ট্রেডমিলের গতি কমিয়ে দিন। গতি কমিয়ে ওয়ার্ক আউটের তীব্রতা কমানোর পরও যদি হার্ট রেট দু’চার মিনিট পর বেশি দেখায়, তখন ট্রেডমিল বন্ধ করে বিশ্রাম নিন। বিরতি দিয়ে নির্দিষ্ট হার্ট রেটে হাঁটুন বা জগিং করুন।
মাঝারি মানের ট্রেডমিলে হার্ট রেট মনিটর অনেক সময় সঠিক হার্ট রেট দেখায় না। তাই গলার কাছে ক্যারোটিড আর্টারি বা রিস্টের রেডিয়াল আর্টারিতে তর্জনী আর মধ্যমা দিয়ে নিজেই হার্ট রেট মাপুন ১০ সেকেন্ড। তার পর ৬ দিয়ে গুণ করে বুঝে নিন আপনার এক্সারসাইজ হার্ট রেট।
আমেরিকান কলেজ অব স্পোর্টস মেডিসিন বলছে সারা দিন মানুষ যেন সর্বাধিক হার্ট রেটের ৫০-৯০ শতাংশের মধ্যে ওয়ার্ক আউট করে। যাঁদের হার্টের অসুখ আছে এবং ডাক্তার কার্ডিওভাসকুলার ট্রেনিং মানে হাঁটা, জগিং করতে বলছেন, তাঁরা ট্রেনিংয়ের সময় বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। করোনারি আর্টারি ডিজিজে ডাক্তার আপনাকে ওয়ার্ক আউটের পরামর্শ দেবেন। তার মাত্রাটা ঠিক করাই আসল ব্যাপার। হার্ট কতটা ধকল নিতে পারবে সেটাও বোঝা দরকার।
অ্যারিদ্মিয়া, অর্থাৎ অনিয়মিত হার্ট রেট (যা একটা হার্টের অসুখ) আছে জেনেও ট্রেডমিলে দীর্ঘ ক্ষণ তীব্র ওয়ার্ক আউট করলে মাথা ঘুরে বিপদ হতে পারে।
হার্টের অসুখ ধরা না-পড়া অবস্থায় ট্রেডমিলে, মাঠে বা পার্কে ট্রেনিং করলেও বিপদ অনিবার্য। তাই বয়সটা কম হলেও হার্টকে অবহেলা করবেন না। ঠিকঠাক চেক-আপ করিয়ে তবেই ওয়ার্ক আউট বা দৌড়োদৌড়ির এক্সারসাইজ করার সিদ্ধান্ত নিন।
ডায়াবেটিস থাকলে ট্রেডমিলে বেশি ক্ষণ হাঁটাচলা করলে রক্তে সুগারের মাত্রা নেমে যায়। এতে প্যালপিটেশন ছাড়াও প্রচুর ঘাম হতে পারে। হাতের কাছে তাই চিনি মেশানো জল রাখা দরকার।
রক্তচাপ বেশি থাকলে দু’তিন সপ্তাহ সর্বাধিক হার্ট রেটের ৫০-৬০ শতাংশ হারে ট্রেডমিল করে অভিযোজিত হোন। পরে দরকার মতো তীব্রতা বাড়ান। যাদের রক্তচাপ কম, তারা বেশি নিরাপদ। দীর্ঘক্ষণ হাঁটাহাঁটি করলে এদের মাথা ঘুরতে পারে। একটু নুন মেশানো জল কাছে রাখবেন। এমার্জেন্সিতে কাজে লাগবে।
ওয়ার্কআউটের ক্ষেত্রে ২০-৩০ বয়সিরাই বেশি অসাবধানী। এঁদের অনেকের হয়তো হার্টের কোনও অসুখ ধরা পড়েনি। যেমন লেফ্ট ভেন্ট্রিক্যুলার হাইপারট্রফ্রি। এটা নিয়ে অতিরিক্ত হাঁটাহাঁটি করে যদি হাটের্র উপর বেশি ধকল পড়ে, তখন বুকে ব্যথা মানে অ্যানজাইনা হতে পারে। হাইপারট্রফ্রিক অবস্ট্রাকটিভ কার্ডিও মায়োপ্যাথি একটা রোগ যা ধরা না পড়লে অজান্তে বিপদ আসতে পারে। এই রোগ থাকলে ট্রেনিংয়ের সময় মূল ধমনী (অ্যাওর্টা) আরও সরু হয়ে জীবন সংশয় ঘটাতে পারে। ডায়াবেটিস নিয়ে ট্রেডমিলে বেশিক্ষণ হাঁটাচলা করলে রক্তে সুগারের মাত্রা নেমে যায়। এতে প্যালপিটেশন- ঘাম হতে পারে। হাতের কাছে তাই চিনি মেশানো জল রাখা দরকার।
যাঁদের রক্তচাপ বেশি, তাঁরা গোড়ার দিকে দু’তিন সপ্তাহ ম্যাক্সিমাম হার্ট রেটের ৫০-৬০ শতাংশ হারে ট্রেডমিল করে অভিযোজিত হোন। তার পর দরকার মতো তীব্রতা বাড়ান।
যাদের রক্তচাপ কম, তারা অনেকটা নিরাপদ। তবে দীর্ঘ হাঁটাহাঁটি করলে এঁদের মাথা ঘুরতে পারে। একটু নুন মেশানো জল কাছে রাখবেন। খেয়ে নিলে ভাল লাগবে।
ট্রেডমিলে দৌড় বা হাঁটাকে বলা হয় অ্যাসিস্টেড এক্সারসাইজ। মাঠে দৌড়টা ন্যাচারাল। আর মেশিন সেটা কৃত্রিম ভাবে তৈরি করছে। হার্টের সমস্যা থাকলে ট্রেডমিল করা যাবে না এমনটা নয়, তবে অতিরিক্ত সাবধানতা নিতে হবে। কখন কোন এক্সারসাইজটা করা দরকার, সেটার সম্যক ধারণা তৈরি করাটা ভীষণ প্রয়োজন।
জিম ট্রেনিং শুরুর আগে যদি হার্ট ডিজিজ থাকে, তবে কী কী ওষুধ খাচ্ছেন তা জানান এবং জেনে নিন জিমে সার্টিফায়েড ট্রেনার আছে কিনা।
|
সচেতন থাকুন |
• যদি বুকের বাঁ-দিকে ব্যথা বা বুকের আশেপাশে জ্বালা বা অস্বস্তি হয়, যেটা
আপনার কাছে অস্বাভাবিক মনে
হচ্ছে, তখন ওয়ার্ক আউট বন্ধ করে দিন
• হঠাৎ যদি শ্বাসকষ্ট শুরু হয়
• মাথা ঘুরলে বা ঝিমঝিম করলে
• প্যালপিটেশন অর্থাৎ বুক দুরুদুরু করলে •
দু’পায়ে ক্র্যাম্পের মতো অনুভূতি হলেও বন্ধ করে
দিতে হবে |
|
|
|
|
|
|