কলকাতা জুড়ে সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কে এক সপ্তাহ ধরে ‘এ-পজিটিভ’ গ্রুপের রক্ত পাওয়া যাচ্ছে না। স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা বলছেন, রক্তদান শিবিরের সংখ্যা কমে যাওয়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এমনকী, মানিকতলা কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্কেও ওই গ্রুপের রক্তের আকাল। বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের ব্লাড ব্যাঙ্কগুলোর অবস্থা আরও খারাপ। পরিস্থিতি এমনই যে, জরুরি অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রেও রোগীর পরিবারকে ওই গ্রুপের দাতা নিয়ে আসতে বলছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
গরমে রক্তের অভাব হয়েই থাকে। তবু ‘এ-পজিটিভ’ গ্রুপের রক্ত মোটামুটি সহজেই পাওয়া যায়।
সেই গ্রুপের রক্তের এমন অস্বাভাবিক অভাব কী ভাবে হল, তা নিয়েই উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্যকর্তারা। |
স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশ এবং রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতেরা এর জন্য দায়ী করেছেন পঞ্চায়েত নির্বাচনকে। পশ্চিমবঙ্গ ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অপূর্ব ঘোষের কথায়, “বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও তাদের সাহায্যপ্রাপ্ত ক্লাবগুলোই রক্তদান শিবিরের আয়োজন করে। কিন্তু এখন তারা ভোটের কাজে ব্যস্ত। তাই জেলা তো বটেই, কলকাতাতেও একের পর এক শিবির বাতিল হচ্ছে।” রক্তদান আন্দোলনের কর্মী দীপঙ্কর মিত্রও বলেন, “শহর লাগোয়া এলাকায় যে সব রক্তদান শিবির হয়, মূলত সেখান থেকেই কলকাতার ব্লাডব্যাঙ্কগুলি রক্ত সংগ্রহ করে। ওই এলাকাগুলি পঞ্চায়েত এলাকার মধ্যে। ফলে আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে গত এক মাস ধরে ওই সব এলাকায় শিবির আয়োজনে ভাটা পড়েছে।”
ব্যাগের আকালও এই রক্ত-সঙ্কটের অন্যতম কারণ বলে জানাচ্ছেন স্বাস্থ্য দফতরের রক্ত-নিরাপত্তা বিভাগের কর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, “প্রথম দিকে গোটা রাজ্যে ডবল ও ট্রিপল ব্যাগের অভাব ছিল। এর ফলে রক্তের উপাদান আলাদা ভাবে তৈরি করা যায়নি। তার জন্য যাঁরা কেবল রক্তের উপাদান চেয়েছেন, তাঁদেরও হোল-ব্লাড দিতে হয়েছে। এতে মজুত রক্তে টান পড়েছে। তার পর সিঙ্গল ব্যাগের অভাব শুরু হয়। এতেও মার খায় রক্তসংগ্রহ। একই সঙ্গে রাজ্যে প্রয়োজনের তুলনায় ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান ও মেডিক্যাল অফিসার কম থাকায় বহু ক্ষেত্রে রক্তদান শিবির করতে চেয়েও তার আয়োজন করতে উঠতে পারেনি অনেক সংগঠন।
একাধিক সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতিতে ‘এ-পজিটিভ’ গ্রুপের এক ইউনিট রক্তের বদলে তাঁরা এক জন করে ‘ডোনার’ চাইছেন। অর্থাৎ, ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে এক ইউনিট রক্ত নিলে তার বদলে রোগীর পরিবারের তরফে সমপরিমাণ রক্তদান করতে হবে। তা না পারলে এ-পজিটিভ গ্রুপেরই অন্য কোনও দাতা জোগাড় করে আনতে বলা হচ্ছে রোগীর বাড়ির লোককেই। |