টেসি-র দৌলতে সন্তান পেলেন পুরুষাঙ্গহীনও
বাবা হলেন আদিত্য বিশ্বাস!
পুরুষাঙ্গ প্রায় নেই আদিত্যর (নাম পরিবর্তিত)! অণ্ডকোষের অস্তিত্বও নামমাত্র। আবার, সেই কোষের মধ্যে শুক্রাণুগুলিও আলাদা করে চিহ্নিত করা যেত না। তাঁর শরীরটা পুরুষের। তবু নিজেকে ‘পুরুষ’ ভাবতে কষ্ট হত। সেই আদিত্য বিশ্বাস বাবা হয়ে যেন নিজের পুরুষকারই ফিরে পেয়েছেন! শিশুর জন্মের দিন অপারেশন থিয়েটার থেকে বেরিয়ে ডাক্তারবাবু যখন সদ্যোজাতকে দেখালেন, তখন এত দিনের সব কষ্ট যেন কান্না হয়ে ঝরে পড়ল বছর ৪২-এর যুবকের চোখে।
বিয়ে হয়েছিল ১৬ বছর আগে। আদিত্যবাবুর কথায়, “স্ত্রী সব জেনেই আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলেন। সন্তানের আশা কোনও দিনই ছিল না। সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করে দিলেন ডাক্তারবাবুরা,”বলতে গিয়ে অবোধ শিশুর মতো চকচক করে উঠল তাঁর দুই চোখ।
জন্মের সময়ে তাঁর পায়ুদ্বার ছিল না। ছোটবেলায় সেটা তৈরি করতে গিয়েই একাধিক ভুল অস্ত্রোপচারে প্রায় বাদ পড়ে যায় পুরুষাঙ্গ। চিকিৎসকের কথায়, “তাঁর পুরুষাঙ্গ বা পেনিস ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল। অণ্ডকোষ বা টেস্টিস-এর অতি অল্পই অবশিষ্ট ছিল। তা-ও চামড়ার নীচে এমন ভাবে, যে বাইরে থেকে বোঝারই উপায় ছিল না। অণ্ডকোষের ভিতরে শুক্রাণুগুলিও আলাদা করে চিহ্নিত করার অবস্থায় ছিল না।”
হাসপাতালে আদিত্যবাবুর সদ্যোজাত সন্তান।—নিজস্ব চিত্র
তবে? আদিত্যর চিকিৎসক গৌতম খাস্তগীরের কথায়, “ওঁর ক্ষেত্রে ‘টেস্টিকিউলার স্পার্ম এক্সট্র্যাকশন’ বা ‘টেসি’ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছিল। অস্ত্রোপচার করে অণ্ডকোষ থেকে কিছু টিস্যু বের করে আনার পদ্ধতিকেই বলে ‘টেসি।” গৌতমবাবু জানান, আদিত্যবাবুর অণ্ডকোষ বাইরে থেকে দেখতে পাওয়া যাচ্ছিল না বলে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করা হয়। তাতে দেখা গেল, মলদ্বারের ওপরের দিকে একটা চামড়া (পেরিনিয়াম)-র নীচে সেটা রয়েছে বটে, কিন্তু তা পূর্ণ আকারের নয়। কোষের মধ্যে অপরিণত অবস্থায় মিশে থাকায় শুক্রাণুগুলিকেও আলাদা করে দেখা যাচ্ছিল না।
তিনি জানান, প্রথমে অস্ত্রোপচার করে অণ্ডকোষ থেকে কিছু টিস্যু বের করে আনা হয়। তার পর সেই টিস্যুগুলি আধুনিক মাইক্রোস্কোপের তলায় রেখে অপরিণত শুক্রাণুগুলো খুঁজে বের করে তা গবেষণাগারে বিশেষ রাসায়নিকের মধ্যে সংরক্ষণ করা হয়। আগেই তাঁর স্ত্রীর দেহ থেকে একাধিক ডিম্বাণু বের করে রাখা হয়েছিল। গবেষণাগারে সেই শুক্রাণু-ডিম্বাণুর নিষেকে ভ্রূণ তৈরি করে স্ত্রীর গর্ভে প্রতিস্থাপন করা হয়। প্রথম বার সেই চেষ্টা ব্যর্থ হলেও দ্বিতীয় বার তা হয়নি। গত মে মাসে সুস্থ সন্তান হয়েছে আদিত্য দম্পতির। আর পুরো কাজটা করতে খরচ হয়েছে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা।
ঘরে এক মাসের একরত্তি। স্বামী-স্ত্রী চোখে হারাচ্ছেন নবজাতককে। তবু এখনও স্বপ্ন মনে হচ্ছে দু’জনের! আদিত্যবাবুর কথায়, “আত্মীয়-বন্ধুদের করুণা আর ব্যাঙ্গের পাত্র ছিলাম। আত্মবিশ্বাসটাই হারিয়ে গিয়েছিল। এখন যেন সব শক্তি ফিরে পেয়েছি।”
কলকাতার বন্ধ্যাত্ব-বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই শহরে হাল আমলে প্রয়োগ হচ্ছে ‘টেসি’ পদ্ধতি। যাঁদের যৌনাঙ্গ কোনও ভাবে বিকৃত হয়ে গিয়েছে বা নেই, শুধু বিকৃত অণ্ডকোষে সামান্যতম শুক্রাণুর অস্তিত্ব রয়ে গিয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিতে সন্তান পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। তবে নতুন এই পদ্ধতি নিয়ে মানুষের ধারণা প্রায় নেই বললেই চলে। এ রাজ্যের কোনও সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে এর প্রয়োগ হয় না। হাতেগোনা বেসরকারি হাসপাতালেও ‘টেসি’ পদ্ধতির ব্যবস্থা রয়েছে।
স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, “টেসি কলকাতায় নতুন। খুব কম চিকিৎসকেরই এটা করার প্রশিক্ষণ রয়েছে। এর জন্য যে মাইক্রোস্কোপ ব্যবহার হয়, তার দাম প্রায় সাড়ে ছ’কোটি টাকা। অত্যন্ত সাবধানে, দক্ষতার সঙ্গে এটা করতে হয়। আমি নিজেই এখনও করতে শুরু করিনি।” আর এক স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সতর্কবাণী, “সঠিক ভাবে এর প্রয়োগ না হলে অণ্ডকোষে হেমারেজ হয়ে নেফ্রোসিস হয়ে যেতে পারে। তাতে গোটা অণ্ডকোষটাই বাদ দিতে হতে পারে। অন্য এক বিশেষজ্ঞ-চিকিৎসকের মতে, “টেসি প্রয়োগে যথেষ্ট সাবধানতা দরকার। শুধু একটি সন্তানের জন্য হঠকারি না হওয়াই ভাল।”
আদিত্যবাবুদের বাড়ি এখন দু’মাসের পুঁচকেকে নিয়ে জমজমাট। তাঁর স্ত্রী অনন্যা (নাম পরিবর্তিত) ছেলে সামলাতে-সামলাতেই বললেন, “আমি ভাগ্য মানি। ভাবতাম, যা হওয়ার তা হবে। কিন্তু যা হল, তা সত্যিই ভাবিনি।” ছেলে পেয়ে এখন অনন্যার আবদার, “ভাবছি, পরের বছর একটা মেয়ের জন্য চেষ্টা করব। দেখি ভাগ্যে আছে কি না!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.