বন্দিদের তৈরি পাট-সামগ্রী চেয়ে চিঠি পাঠাল তিহাড়
দেশের অন্যান্য রাজ্যে চাহিদা বাড়ছিলই। পাশাপাশি, দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও নিজেদের বাজার তৈরি করে নিয়েছে দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের বন্দিদের তৈরি পাট-সামগ্রী। এ বার দমদম-সহ রাজ্যের বিভিন্ন সংশোধনাগারে তৈরি পাটজাত দ্রব্য নিজেদের ‘গ্রিন হাট’-এ রাখার জন্য পশ্চিমবঙ্গ কারা দফতরে চিঠি পাঠালেন তিহাড় জেল-কর্তৃপক্ষ।
তিহাড় জেলের ‘গ্রিন হাট’-এ বন্দিদের তৈরি সামগ্রীর বিকিকিনির ব্যবস্থা রয়েছে। এত দিন পর্যন্ত সেখানে শুধু তিহাড়ের বন্দিদের তৈরি সামগ্রীই বিক্রি হত। কারা দফতর সূত্রের খবর, তিহাড় জেল চিঠিতে জানিয়েছে, ‘গ্রিন হাট’-এ তাদের বন্দিদের তৈরি জিনিস রাখার পরেও কিছু জায়গা খালি রয়ে যাওয়ায় এ বার দেশের বিভিন্ন রাজ্যের বন্দিদের তৈরি জিনিসপত্রও সেখানে বিক্রি করতে চাইছেন জেল-কর্তৃপক্ষ। সেই উদ্দেশে সম্প্রতি তিহাড় জেল-কর্তৃপক্ষ এ রাজ্যের আইজি (কারা) রণবীর কুমারের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। দমদম জেলের এক আধিকারিকের কথায়, “তিহাড় এ রাজ্যের সংশোধনাগারগুলিতে তৈরি পাটের জিনিসই গ্রিন হাটে রাখতে চেয়ে চিঠিটি পাঠিয়েছে।” ইতিমধ্যেই দমদম সংশোধনাগারে এই কাজে নিযুক্ত বেসরকারি সংস্থাটির কাছে চিঠির একটি অনুলিপি পাঠানো হয়েছে। কারণ, শুধু দমদম জেলের বন্দিরাই পাটের জিনিস তৈরি করেন। কী ভাবে পাটজাত দ্রব্য তিহাড় জেলে পাঠানো যায়, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে কারা দফতরে।
তিহাড় জেলের প্রস্তাবকে প্রাথমিক ভাবে স্বাগত জানিয়েছে রাজ্য কারা দফতর। দফতরের এক কর্তার কথায়, “আমরা তিহাড় জেলে বন্দিদের পাটজাত সামগ্রী পাঠাতে আগ্রহী। সেই প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে।” রাজ্য কারা দফতরের আইজি রণবীর কুমারের বক্তব্য, “শুধু জিনিস পাঠালেই তো হল না। তিহাড়ে ওই সব জিনিসের দাম কত হবে, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করতে হবে। কলকাতা থেকে তিহাড় অবধি পাটজাত সামগ্রী পাঠানোর খরচ আছে। সেই খরচ ধরলে ওই সব সামগ্রীর দামও বাড়বে। খুঁটিনাটি এই সব বিষয় নিয়ে ইতিমধ্যেই তিহাড়-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছি। আলোচনা চূড়ান্ত হলেই দমদম জেলের বন্দিদের তৈরি সামগ্রী তিহাড়ে পাঠাব।”
কারা দফতর সূত্রের খবর, পাঁচ বছর আগে এ রাজ্যের দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারেই প্রথম পাট দিয়ে বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরির প্রশিক্ষণ শুরু হয়। প্রশিক্ষণ দেয় একটি বেসরকারি সংস্থা। ওই সংস্থার কর্ণধার সত্যজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, “২০০৮ সালে আমাদের সংস্থার কাজ দেখে তৎকালীন ডিআইজি (কারা) কমলকুমার মুখোপাধ্যায় মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা বলেন। কিন্তু প্রশিক্ষণ এবং কাঁচামাল কিনতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। টাকার অভাবে তখন মেদিনীপুরে কাজটি শুরু করা যায়নি। কিন্তু নাবার্ড-এর আর্থিক সাহায্যে ২০০৯ সালে দমদম জেলে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়।” তিনি আরও জানান, পরবর্তীকালে দমদমে কাজ শুরুর ক্ষেত্রে সাহায্য করেন তৎকালীন আইজি (কারা) বংশীধর শর্মা। ৩০ জন মহিলা বন্দি বা আবাসিকদের নিয়ে প্রশিক্ষণ শিবির শুরু হয় দমদম জেলে। শেখানো হয় পাট দিয়ে বেণি থেকে শুরু করে ব্যাগ, টুপি, কোস্টার তৈরির কাজ। প্রশিক্ষণ পর্ব শেষ হলে শুরু হয় জেলের মধ্যেই পাটের জিনিসপত্র তৈরির কাজ। তার পর দেশের বিভিন্ন মেলা ও অন্যান্য জায়গায় ওই সব জিনিস পাঠানোর কাজ শুরু হয়।
এখন বেণি থেকে শুরু করে কোস্টার, ব্যাগ, টুপি সবই তৈরি করেন দমদম জেলের সাজাপ্রাপ্ত এবং বিচারাধীন মহিলা বন্দিরা। এই কাজের জন্য নির্দিষ্ট পারিশ্রমিকের বাইরে পৃথক বেতনও দেওয়া হয় তাঁদের। সত্যজিৎবাবু জানান, প্রথম প্রথম বাইরের বাজারে বন্দিদের তৈরি জিনিসের চাহিদা তেমন ছিল না। কিন্তু দু’তিন বছর ধরে সংশোধনাগারের মহিলাদের তৈরি পাটের এই সামগ্রী রাজ্য ছাড়িয়ে দেশ-বিদেশের বাজারে ভাল সাড়া ফেলেছে। বিশেষ করে বিভিন্ন সরকারি মেলায় বিক্রি শুরুর পর থেকেই ওই সব পাটের তৈরি জিনিসের চাহিদা বেড়েছে বলে কারা দফতর সূত্রে খবর। প্রথম দিকে দিল্লি, মুম্বইয়ের বিভিন্ন সংস্থা এই জিনিসগুলি কিনত। এখন দেশের বিভিন্ন রফতানি সংস্থা ওই জিনিস কিনে বিদেশেও বিক্রি করছে। এ বার দেশের সবচেয়ে বড় দেশের বিক্রয় কেন্দ্রেও স্থান পেতে চলেছে বন্দিদের হাতের তৈরি পাটের জিনিস।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.