|
|
|
|
|
|
|
নাটক: আফ্রা ইয়া রুজ মিগোজারাদ
দেশ: ইরান
পরিচালক: বাহারাম বাইজাই
সাল: ২০১০
রুদ্ররূপ মুখোপাধ্যায় |
|
|
একটা বিরাট বাড়ি। তার মধ্যে একটা বিশাল হলঘর। সেখানে ঢুকে বসতে হবে। অন্ধকার। কানের পাশে কারা ফিসফিস করে কথা বলছে। অনেক ক্ষণ পর হঠাৎ একটানা মন্ত্রোচ্চারণের মতো হতে থাকল। থামল এক সময়। আবার নৈঃশব্দ্য। হঠাৎ ঘরের মধ্যে যেন বিস্ফোরণ হল। আগুন জ্বলে উঠল ঠিক মাঝখানটাতে। সকলে চিৎকার করে উঠল। কেউ কাঁদতে লাগল। একটা দরজা খুলে গেল এবং একটি মেয়ে বেরিয়ে এসে বলল এই ঘরটাতে আসুন। সকলে আগুন থেকে বাঁচতে সেই ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই এক রাশ ক্যামেরার ঝলক। চোখ ধাঁধিয়ে গেল। নাগাড়ে ক্যামেরা ঝলকাচ্ছে। এই সময় পাশের ঘরের মেয়েটি অদ্ভুত ভাবে নেচে উঠল। সেই নাচ বাজনার সঙ্গে ক্রমে চটুল। এক সময় ঘরের আলো নিভে গিয়েছে। শুধু ক্যামেরার আলো। মেয়েটির নাচ সাপের মতো হয়ে উঠছে। নাচতে নাচতে মেয়েটা একটা কবিতা বলছে: ‘মৃত্যু, মৃত্যুই চাই মৃত্যু না হলে বাঁচবার উপায় নাই মৃত্যুই চাই।’ হঠাৎ ঘরময় অনেক সাপ। চিৎকার করছে সকলে। আবার একটা দরজা খুলে যেতেই কিচ্ছু না ভেবে সবাই দৌড়চ্ছে সেখানে। এ ঘর নিশ্ছিদ্র অন্ধকার। হঠাৎ শব্দ করে লোহার দরজাটা বন্ধ হয়ে গেল। এ বার দেখা গেল দুজন লোক ঝগড়া করছে। একটু পরেই বোঝা গেল ওরা কে আগে কাকে মারবে, তা-ই নিয়ে কথা হচ্ছে। তার পর, ওরা কেন একে অন্যকে মারবে, সেটা বলতে আরম্ভ করল। হঠাৎ ঘরের একটা দেওয়াল আলোকিত হয়ে উঠল এবং প্রোজেকশনে দেখা গেল লেনিনের মূর্তি ভাঙা হচ্ছে এবং সর্পরানি মেডুসা হা হা করে হাসছে। হঠাৎ একটি লোক অন্য লোকটিকে ছুরি মেরে দিল ও লোকটি মরে গেল। রক্তে ভেসে যাচ্ছে শব। জীবিত লোকটি মৃত লোকটির উপর বসে বসে হাফিজের কবিতা বলছে। হাফিজের বিখ্যাত ভালবাসার গান গাইছে। এমন সময় আর একটা দরজা খুলে এক বাটলার এল। সে বলল, বাঁ দিকের দরজা দিয়ে গেলে বাচ্চার কাটামুন্ডু দেখা যাবে, ডান দিক দিয়ে গেলে দেখা যাবে গণহত্যা। কোন দরজা খুলব? তখনই এক মহিলা এসে শিশুহত্যার গুণাগুণ সম্বন্ধে বলতে আরম্ভ করল। দর্শকদের মধ্যে কেউ কেউ কেঁদে ফেলল। কেউ কেউ চিৎকার করল। সবাইকে জোর করে ঠেলে দেওয়া হল একটা ঘরে। সেখানে সারবদ্ধ মহিলা, পুরুষ। পুরুষদের কাটবে মহিলারা। সব পুরুষ খাটে বাঁধা। মহিলারা নাচতে আরম্ভ করে। হঠাৎ হেলিকপ্টারের শব্দ, পতনের আওয়াজ, বিস্ফোরণ এবং তার পর সব চুপ। এ বার বাইরে বেরোবার দরজা খোলে। চৌকাঠে পা দিতে গিয়ে অনেকের চিৎকার। চৌকাঠের বাইরে সার সার কাটা শিশুর মাথা! এক দল ছেলে নাচতে থাকে। বলতে থাকে যুদ্ধের গল্প। বাজনা বাড়ে। এক সময় সব থামে। ওরা দর্শককে চলে যেতে বলে। |
|
এটাই একটা থিয়েটার। ঘটে চলেছে ইরানের একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে। নির্দেশক বলছেন: ‘রোজকার আদানপ্রদানটা নষ্ট হচ্ছে। রোজকার যুদ্ধ আর আধিপত্যবাদ আমাদের অথর্ব করে দিচ্ছে। তাই এখানে সংলাপ নেই শুধু শরীর। এক মাস ধরে মহলায় প্লেটো, পাসোলিনি, সুসান তাসলিমি, চমস্কিদের লেখা পড়ে পড়ে শরীরে আবেগটা ধরার চেষ্টা করেছি। আমাদের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য ‘নন-থিয়েট্রিকাল’ স্পেস বাছার অনেক কারণ। প্রথমত, আমরা কোনও দারুণ নির্মিত নাটক চাইনি। দর্শকদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছি। ‘কথা’ মানে আমার কাছে প্রতিক্রিয়া। দ্বিতীয় কারণটা হল, এটি শহর থেকে বেশ দূরে। শহরের লোকেরা এসেই অচেনা জায়গায় পড়বে এবং তাতে তাদের স্নায়ু অত্যন্ত স্পর্শকাতর হয়ে উঠবে। তিন, বাড়িটি অতি প্রাচীন। এর প্রাচীনতার মধ্যেও কেমন ফিসফিসানি ব্যাপার আছে। আমার লক্ষ্য ছিল, মানুষকে বলা: নিশ্চিন্ত থাকলে মরা লোকটির মতো হবে। অত নিশ্চিন্ত হয়ো না। একটু অস্থির হও।’
পারফরমাররা বলছেন, স্পেসটায় একটায় পরিশুদ্ধি ঘটে ওঁদের ভাষায় ‘মেটাফিজিকাল পার্গেশন’। ওঁরা যে কষ্টটা পাচ্ছেন সেটা পৌঁছে দিচ্ছেন জনতার কাছে। নাটকটা দেড় ঘণ্টার, দেখতে পান এক বারে ৩৮ জন মানুষ। প্রখ্যাত সমালোচক বলেন, এই নিরীক্ষা ফর্মে নয়, কনটেন্টে। কী বলব, সেটা ভাবতে ভাবতেই ‘কী ভাবে বলব’-টা স্পষ্ট হয়েছে। যুদ্ধের যে প্রতিদৈনিক কষ্টের মধ্যে ওঁরা আছেন, সেটা দর্শককে পৌঁছে দিচ্ছেন। তার ইমপ্যাক্ট এতটাই, নাট্যশেষে ওই কাটামুন্ডুগুলো যে আসলে ফাইবারের, তা বোঝার সাধ্য তখন কারও থাকে না। দর্শকদের চোখে তখন পৃথিবীব্যাপী হিংসার ভয়ালতার ছায়া। কোথাও বলা হল না ইরাক, ইরান, গাজা, আফগানিস্তানের কথা, কিন্তু স্পষ্ট হল সব। |
|
২৭ জুন ২১০০ |
আবার প্রমাণিত হল, কঠোর আইন করেও নারী নির্যাতন রোধ করা সম্ভব নয়। মঙ্গল গ্রহে যে আইনের বলে নারী নির্যাতনের হার ০.০২%-এ নেমে এসেছে, এই দেশে সেই আইন ব্যর্থ হল।
মঙ্গলের ধর্ষণ নিয়ন্ত্রণ আইনের অনুকরণে এ দেশে ‘দামিনী রক্ষাকবচ আইন-২০৯৭’ প্রণয়ন করা হয়। এই আইন অনুসারে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হলে, প্রথমে অপরাধীর লিঙ্গান্তর করে ‘ক্লিনিকাল পানিশমেন্ট’ দেওয়া হয়। এর পর সংশোধনাগারে অপরাধীর করা অত্যাচারের মাত্রা অনুযায়ী তার উপর নির্যাতন চালানো হয় পুরুষ রোবট দ্বারা। (কিন্তু অপরাধী যদি ধর্ষণ করে খুন করে থাকে, তাকে অত্যাচারের শেষে হত্যা করা হয় না। কারণ তা হলে তা মৃত্যুদণ্ডের শামিল হবে। এই নিয়ে প্রচুর বিতর্ক চলছে।)
প্রযুক্ত হওয়ার তিন বছরের মধ্যেই আইনটি মুখ থুবড়ে পড়ল। সম্প্রতি পাঠিহার সংশোধনাগারে, ‘রূপান্তরিত’ তিন বন্দিনী এইচ.আই.ভি-তে আক্রান্ত হয়েছেন। তদন্তে প্রকাশ, প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নিয়মিত সংশোধনাগারে এসে রোবটের কস্টিউম পরে সাজাপ্রাপ্তদের ধর্ষণ করতেন। এর ফলেই সংরক্ষিত অঞ্চলে এড্স-এর বিস্তার ঘটেছে।
দুর্বল মহিলা সমিতি মহাশূন্যে লেজার-ক্যান্ড্ল হাতে মহামিছিল করে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাঁদের দাবি, ‘দামিনী রক্ষাকবচ আইন-২০৯৭’ বাতিল করতে হবে। সমিতির সভানেত্রী বলেছেন, ‘লিঙ্গান্তরিত অপরাধীরা নারী। তাঁদের উপর অত্যাচার নারীজাতির মর্যাদাকেই ক্ষুণ্ণ করেছে। এই কালা আইনের জন্য নারী নির্যাতন আরও বাড়ছে। কারণ, অনেক রূপান্তরকামী পুরুষ সরকারি খরচে লিঙ্গান্তরিত হবার জন্য নারী নির্যাতন করছেন।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘ভুল দিয়ে ভুলের মোকাবিলা করা যায় না, শুভ চেতনা দিয়েই নারীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।’ বিকাশ মোদক, আড়িয়াদহ |
|
|
|
|
দশ জন বিখ্যাত লোকের জিনিসপত্তর উপল সেনগুপ্ত |
|
|
১ |
২ |
৩ |
মা দুগ্গার বাইক |
কাকাবাবুর মোজা-জোড়া |
কুম্ভকর্ণের লাঞ্চ |
|
|
৪ |
|
কুট্টুসের মোবাইল ফোন |
৫ |
৬ |
পিনোকিয়ো’র পলিউশন মাস্ক |
ড্রাকুলার টুথব্রাশ |
|
|
|
৭ |
রাবণের সানগ্লাস |
৮ |
৯ |
হুঁকোমুখো হ্যাংলার প্যান্ট |
হনুমানের বুকের এক্স-রে
|
|
|
১০ |
কন্ধকাটার মাংকিক্যাপ |
|
|
|
• দেশের ‘ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন’-এর ঘোষণা: ভারত ভবিষ্যতে বানাতে চলেছে রোবট সেনা। ছিরিছাঁদ, পোশাকআশাক সব মানুষের মতোই, আসলে ওয়ার-প্রোগ্রামিং করা যন্ত্রমানব। গুণে-মানে মানুষের থেকে বহু গুণ এগিয়ে থাকবে, শত্রুকে চিনে নেবে পলকে, বিপদের পূর্বাভাস জানানোয় জ্যোতিষীও ফেল। গোড়ায় মানুষই গাইড, রোবট-সতীর্থকে সে-ই চেনাবে শত্রু ও বন্ধুর ফারাক। টেকনোলজি-কেরামতিতে ক্রমে ধারালো হবে যন্ত্রের মগজাস্ত্রও, তখন যুদ্ধক্ষেত্রে মানুষ ব্যাকবেঞ্চার, সামনে তুলকালাম করবে রোবট-বাহিনীই। প্রকল্পের উদ্দেশ্য, একুশ শতকীয় হাই-টেক যুদ্ধে, বোমা নিষ্ক্রিয় করতে, বা তেজস্ক্রিয় বিকিরণের সাইটে রোবটকে এগিয়ে দিয়ে মানুষের প্রাণহানি যথাসাধ্য কমানো। অর্থাৎ যুদ্ধ ব্যাপারটা ভোল পালটে কম্পিউটার গেম-মার্কা ব্যাপার দাঁড়াবে। মানুষরা স-টেনশন দাঁড়িয়ে দেখছে স্বদেশি রোবট জেতে না বিদেশি। কবে ভারত-পাক রোবট-যুদ্ধ তুঙ্গ টিআরপি নিয়ে টিভিতে দেখাবে (ফিক্সিং-বেটিংও হবে), অপেক্ষা। রক্তারক্তি নেই, হারজিত শেষে টন টন লোহার রোবট-নাড়িভুঁড়ি কেজি-দরে বেচেও লাভ। শুধু প্রযুক্তির গড়বড়ে টার্মিনেটর-ট্রান্সপোর্টারোপম রোবটরা ফ্রাংকেনস্টাইন-মনস্টার কেতায় মানুষকেই উড়িয়ে-গুঁড়িয়ে দিলে কেলো!
• লন্ডনে ‘ডমিনোজ’-এ পরীক্ষা হল পিৎজা ডেলিভারির নয়া যন্ত্রের, নাম ডমিকপ্টার। ব্যাপক প্রযুক্তিধন্য, স্বয়ংক্রিয় ও উড়ুক্কু এ যন্ত্র দশ মিনিটে দু’খানা পিৎজা পৌঁছে দেবে আপনাকে। স্রেফ ঘরে বসে ফোনে অর্ডার টেপা, তার পর চোঁ চাঁ ছাদে। ডেলিভারি বয় বাইক ফটফটিয়ে পৌঁছনোর ঢের আগে কপ্টার বনবনিয়ে জানান দেবে, সন্ধের টিপিন হাজির। শিশু-কল্পনার ইমেজ সত্যি হওয়ার মুখে। বিখ্যাত ব্র্যান্ডের ফাস্ট ফুড যাতে ক্রেতার হাতে ফাস্টেস্ট পৌঁছনো যায়, তাই ডাকসাইটে ড্রোন নির্মাণ-সংস্থা অ্যারোসাইট ও এজেন্সি-টি’র প্ল্যানমাফিক এই কুল কীর্তি। বাইকের তেলখরচা নেই, জ্যামে বা অতি-তাড়ায় গাড্ডায় পড়ে ক্রেতার হাতে টাইমে না পৌঁছনোর প্রশ্ন নেই। লন্ডনের আকাশে কেউ ঘুড়িও ওড়ায় না যে ভোকাট্টা হবে। ‘ইয়ো সুশি’ নামের আর এক দোকানও চালু করেছে ফ্লাইং ওয়েটার iTray, রিমোট-কন্ট্রোল চালিত বার্গারবান ট্রে উড়ে এসে আপনার রেস্তোঁরা-টেবিল জুড়ে বসবে, নামিয়ে নিতেই ফের উড়ান ম্যানেজারমুখো। কর্তারা খুশি, শুধু কর্মী-মহলে অসন্তোষের দানা, তুখড় যন্ত্র মানেই তো লাখ ওয়েটারের চাকরি নট। আর বিচ্ছু জঙ্গি না আবার ফাঁকতালে কপ্টারে পিৎজা-বার্গার সাইজ পেটো পাঠায়! |
|
|
মাঝারি
১. যা হওয়ার চেয়ে খারাপ হওয়াও ভাল।
২. যার পড়ার সময় কম, ফেসবুক
করার সময় বেশি। |
|
সর্বজান্তা মিডিয়োকার হে, পেছনপক্ক মিডিয়ো
ঝুলিময় রাখো রবি-কোটেশন, বুলু-ফিলিমের সিডি’ও
ধর্মে, জিরাফে, কাশির সিরাপে, পাতি পপকর্ন ফুলিয়ে
রোখ দেখলেই জোঁক ছেড়ে দাও, শার্প চোখ দাও ঠুলিয়ে |
|
|
• ‘সহজ’ থেকে দূরে থাকো। মরে যাওয়া, হেরে যাওয়া, ঠকানো, মাঝারি হওয়া এগুলো সহজ। স্কট আলেকজান্ডার
• মিডিয়োক্রিটির প্রজাতন্ত্রে, জিনিয়াস বিপজ্জনক।
রবার্ট গ্রিন ইংগারসল
• এই পৃথিবীতে, জিনিয়াসের চেয়েও উঁচুতে উঠবে সেই প্রতিভা, যে মাঝারির সামান্য ওপরে, ধুরন্ধর, আর কম স্পর্শকাতর। চার্লস হর্টন কুলে
• টাটকা মাঝারিয়ানার চাহিদা সর্বযুগে সবচেয়ে বেশি।
পল গগ্যাঁ
• উত্তম, নিশ্চিন্তে হাঁটো অধমের সাথে
মধ্যম দেখিলে গুরু লাফায়ো তফাতে
মধ্যম জপিবে, ‘কেন ঝুঁকি, আত্মচাপ?
চড়ে পড়ো নিরাপদ পপুলিস্ট ধাপ!’
ধীরে ধীরে শুষে নেবে অগ্নি, স্পর্ধাঝাঁপ
মধ্যমের সঙ্গ তাই সর্বাধিক পাপ
• মিডিয়োক্রিটির বহুবচন: মিডিয়া
জিমি ব্রেসলিন
• ফুটবলের রাজা মেসি
ইতিহাসের রাজা মিডিয়োক্রেসি
|
|
|
আপনিও লিখে পাঠাতে চান ভবিষ্যতের একটা রিপোর্ট? ঠিকানা:
টাইম মেশিন,
রবিবাসরীয়,
আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা ৭০০ ০০১ |
|
|
|
|
|
|
|