আয়করদাতা হিসাবে লিও মেসির সুনামে অতি সম্প্রতি কালি লেগেছে। কিন্তু সেই মানসিক চাপ অগ্রাহ্য করে গত রাতে দেশের জার্সিতে বার্সেলোনার মহাতারকা হ্যাটট্রিক করে বুঝিয়ে দিলেন গোলদাতা হিসাবে তাঁর সুনামে বিন্দুমাত্র কালি লাগানোর উপায় নেই। একইসঙ্গে মেসি মুছে দিলেন তাঁকে নিয়ে একটি জল্পনাও ক্লাব জার্সির মতো জাতীয় জার্সিতে তেমন বেশি গোল পান না আর্জেন্তিনীয় সুপারস্টার।
গুয়াতেমালার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ফ্রেন্ডলি ম্যাচে আর্জেন্তিনার ৪-০ জয়ে মেসির করা তিন গোল এলএম টেন-কে বসিয়ে দিল তাঁর দেশের সর্বকালের সেরা গোলদাতাদের তালিকায় দিয়েগো মারাদোনারও আগে! ফুটবলের রাজপুত্রের নীল-সাদা জার্সিতে ছিল ৯১ ম্যাচে ৩৪ গোল। সেখানে আর্জেন্তিনীয় কিংবদন্তির শুক্রবারের পর দাঁড়াল ৮২ ম্যাচে ৩৫ গোল। আর্জেন্তিনার সর্বকালের সেরা গোলদাতাদের তালিকায় মেসি আপাতত হার্নান ক্রেসপোর সঙ্গে যুগ্ম দ্বিতীয় স্থানে। কিন্তু বয়স মাত্র পঁচিশ, সামনে অনেক বছর ফুটবলজীবন পড়ে আছে বলে বিশেষজ্ঞরা কার্যত নিশ্চিত, মেসি-ই দেশের জার্সিতে সর্বকালের হায়েস্ট স্কোরার হবেন ভবিষ্যতে।
মারাদোনাকে টপকেও অবশ্য মেসি তেমন উচ্ছ্বসিত নন। বরং বলেছেন, “মারাদোনাকে টপকানোটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আসল উদ্দেশ্য ছিল, ভাল ভাবে শেষ করা। আমাদের দলের শরীরী ভাষা ভাল ছিল। ফ্রেন্ডলিটা দলগত ভাবে আমরা ভাল শেষ করেছি। যেটা ছুটিতে যাওয়ার ঠিক আগে মোটেও সহজ ব্যাপার ছিল না।” |
গুয়াতেমালা ম্যাচে আর্জেন্তিনার চারটে গোলের পিছনেই মেসি। নিজে তিনটি গোল করেছেন। অন্য গোলটি করিয়েছেন। অ্যাওয়ে ম্যাচের ১৫ মিনিটে বক্সের ঠিক বাইরে থেকে বাঁ পায়ের অনবদ্য ভলিতে মেসির প্রথম গোল। ৩৬ মিনিটে সতীর্থ অগাস্তো ফার্নান্দেজের করা গোলের রাস্তা গড়ে দেন মেসি-ই। ৪০ মিনিটে পেনাল্টি থেকে নিজের দ্বিতীয়, দলের তিন নম্বর গোল করেন মেসি। দ্বিতীয়ার্ধের চার মিনিটেই লাভেজ্জির পাস থেকে সাইড ভলিতে হ্যাটট্রিক করেন। যেটা মেসির কেরিয়ারে হ্যাটট্রিকের রজত জয়ন্তী। ২৫টি হ্যাটট্রিকের মধ্যে তিনটি মেসি করলেন আর্জেন্তিনার জার্সিতে। এর আগে সুইজারল্যান্ড ও ব্রাজিলের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক ছিল তাঁর। শেষ আঠারো মাসে মেসির গোলের সংখ্যা ১২০। ২০১২-এ ৯১ গোল। ২০১৩-র প্রথম ছ’মাসে ২৯ গোল।
অথচ গুয়াতেমালা ম্যাচের আগে আর্জেন্তিনার দু’টি প্রি ওয়ার্ল্ড কাপ ম্যাচে (কলম্বিয়া ও ইকুয়েডর) মেসি পুরো একশো ভাগ ফিট না থাকায় রিজার্ভ বেঞ্চে ছিলেন। পরে পরিবর্ত নেমে খেলেন। গত রাতে কোচ আলেজান্দ্রো সাবেয়া শুধু মেসিকেই প্রথম দলে ফেরত আনেন। আগেরো, লাভেজ্জি বাদে তেমন নামী তারকাদের আর কাউকে খেলাননি। পরিবর্ত নেমেছিলেন মাসচেরানো। মেসিও হ্যাটট্রিকের পরেই বসে যান। যা দেখে আবার আর্জেন্তিনার প্রাক্তন ফিটনেস কোচ সিনোরিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, মেসি না অত্যাধিক খেলার ফলে ২০১৪ বিশ্বকাপের সময় ফিটনেস সমস্যায় পড়েন! “ছয়-সাতের দশকে ফুটবলারদের ৮০-৯০টা করে ম্যাচ খেলতে হত। এখন মেসির মতো বিশ্বের এক নম্বর ফুটববলারকে ক্লাব-দেশ ধরে বছরে ১২০টা ম্যাচ খেলতে হচ্ছে। যেটা চিন্তার।” |