স্বদেশিদের বিরুদ্ধেই এ বার বল বিকৃতির অভিযোগ উইলিসের
য়ার্নার-গেটের পর আবার বিতর্কে ইংল্যান্ড টিম। এ বার প্রাক্তন ইংরেজ বোলারই বল বিকৃতির অভিযোগ আনলেন অ্যালেস্টার কুকদের বিরুদ্ধে। এলেবেলে কেউ নন, বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন ইংল্যান্ডের প্রাক্তন ফাস্ট বোলার তথা অধিনায়ক বব উইলিস।
টেস্টে ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারিদের তালিকায় এখনও দু’নম্বরে থাকা উইলিস দু’দিন মাত্র আগেই ওভালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ম্যাচে ইংল্যান্ড বোলারদের বিরুদ্ধে বল বিকৃতি ঘটানোর অভিযোগ তুলে এ দিন চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করেছেন, “ঢাক-ঢাক গুড়-গুড় করার কিছু নেই। সে দিনের ম্যাচের অন্যতম আম্পায়ার আলিম দার গোটা ব্যাপারটা জানেন। ইংল্যান্ডের এক বোলার বল খুঁটছিল। আমি সেই প্লেয়ারের নাম করব না। কিন্তু ওই কারণেই শ্রীলঙ্কা ইনিংসের মাঝে অভাবিত বল বদলানো হয়েছিল।”
বৃহস্পতিবার ইংল্যান্ডের ১৯৩-৭ তাড়া করার মাঝপথে শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যান সঙ্গকারা আম্পায়ারকে বলের চেহারা নিয়ে অভিযোগ জানান। তখন শ্রীলঙ্কা ১১৯-২। কিন্তু কুকের নেতৃত্বে ইংল্যান্ড দল বল বদলের প্রতিবাদ জানান। রিভার্স সুইং পাওয়ায় ইংরেজ বোলাররা তখন লঙ্কা-বধের প্রবল আশায়। কিন্তু ইংরেজদের প্রতিবাদ ধোপে টেকেনি। বল পাল্টে দেন আম্পায়াররা। ইংল্যান্ডও ম্যাচ সাত উইকেটে হারে। ম্যাচের পর ক্ষুব্ধ কুক বলেন “বল বদলের সিদ্ধান্ত আম্পায়ারদের। কিছু সিদ্ধান্ত অনেক সময় সঠিক নয় জেনেও সেটা মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।”
ম্যাচের মাঝে বল বদলানো নতুন নয়। অনেক সময়ই ব্যাটসম্যানদের তুলোধোনায় বলের আকৃতি নষ্ট হলে সেটা পাল্টে খেলা হওয়াই নিয়ম। সাধারণত ফিল্ডিং টিমই বল বদলের অনুরোধ জানায়। কিন্তু ওভালে অনুরোধটা এসেছিল ব্যাটিং দলের তরফে। এখানেই সন্দেহ উইলিসের। “কুক কি আমাদের বাচ্চা মনে করছে? ফিল্ডিং দলের ক্যাপ্টেন হয়েও ও চায়নি বলটা পাল্টানো হোক। তার পরও বল কেন পাল্টে ফেলা হল? নখ দিয়ে খুঁটে বা অন্য কোনও ভাবে বল বিকৃত করলে সেটা ক্রিকেটের আইনবিরুদ্ধই,” বলেছেন উইলিস।

বিতর্কিত সেই মুহূর্ত। শ্রীলঙ্কা ম্যাচে আম্পায়ারদের সঙ্গে কুক।
যা নিয়ে কুক পাল্টা বলেছেন, “ইংল্যান্ড বোলাররা পরিশ্রম এবং দক্ষতার জোরেই বল সুইং করাতে পারে।” ইংল্যান্ডের ওয়ান ডে টিমের কোচ অ্যাশলে জাইলস আরও একধাপ এগিয়ে বলেছেন, “আমরা বল বিকৃত করিনি। অন্য কোনও বিষয়ে কথা বলুন। আমাদের সামনে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা ম্যাচ রয়েছে। জিততেই হবে। এই সময়ে ভুলভাল বিষয় হেডলাইনে উঠে আসাটা হতাশাজনক।” তা হলে উইলিস কেন নিজের দেশের দলের বিরুদ্ধেই এত বড় অভিযোগ আনলেন? জাইলস বলেন, “মানুষের যা খুশি বলার অধিকার রয়েছে। আমরা তো কাউকে চুপ করাতে পারব না।” তবে সে দিনের ম্যাচ অফিসিয়ালরা আইসিসি-র কাছে কোনও অভিযোগ না জানানোয় আইসিসি-র বক্তব্য তা হলে আর তদন্তের প্রশ্ন কোথায়?

বল বিকৃতির পাঁচ কথা
মাইক আথার্টন, ১৯৯৪
‘ডার্ট ইন পকেট অ্যাফেয়ার’। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে লর্ডস টেস্টে পকেটে মাটি নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক মাইক আথার্টন। বলে সেই মাটি ঘষার ছবি ধরা পড়ে টেলিভিশন ক্যামেরায়। বল বিকৃতির অভিযোগ অস্বীকার করেন আথার্টন। বলেন, পকেটে ‘ধুলো’ ছিল যা দিয়ে হাতের ঘাম শুকোচ্ছিলেন। ম্যাচ রেফারিকে ‘ধুলো’র কথা না জানানোর দায় তাঁর দু’হাজার পাউন্ড জরিমানা হয়।

ওয়াকার ইউনিস, ২০০০
পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা-দক্ষিণ আফ্রিকা ত্রিদেশীয় সিরিজে বল বিকৃতির দায়ে এক ম্যাচ বহিষ্কৃত হন ওয়াকার ইউনিস। তিনিই প্রথম ক্রিকেটার যিনি এই অপরাধে সাসপেন্ড হন। টিভি রিপ্লেতে ওয়াকার ও আজহার মেহমুদকে নখ দিয়ে বলের সিম খুঁটতে দেখে শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ম্যাচ রেফারি জন রিড।

সচিন তেন্ডুলকর, ২০০১
দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে সেন্ট জর্জেস পার্কে দ্বিতীয় টেস্টের তৃতীয় দিন টিভি ক্যামেরায় দেখা যায় সচিন বলের সুতোয় নখ দিয়ে কিছু একটা করছেন। সচিন দাবি করেন, তিনি বল পরিষ্কার করছিলেন। কিন্তু ম্যাচ রেফারি মাইক ডেনেস সরাসরি বল বিকৃতির অভিযোগে সচিনকে এক টেস্ট ম্যাচ সাসপেন্ড করেন। ঘটনার অবশ্য এখানেই শেষ নয়। ওই ম্যাচে বীরেন্দ্র সহবাগকেও অতিরিক্ত আবেদন করার জন্য এক ম্যাচ সাসপেন্ড করার পাশাপাশি ভারত অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়-সহ আরও চার জনকেও শাস্তি দেন ডেনেস। সঙ্গে ছয় ক্রিকেটারের ম্যাচ ফি-র ৭৫ শতাংশ জরিমানাও হয়। ভারতীয় শিবিরের প্রবল প্রতিবাদ এবং সংবাদমাধ্যমের হইচইয়ে বিষয়টা বিশাল আকার নেয়। ডেনেসের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের প্রতি বর্ণবৈষম্যের অভিযোগ ওঠে। যার জেরে সাদা-কালোয় প্রায় দু’ভাগ হতে বসেছিল ক্রিকেট বিশ্ব। তৃতীয় টেস্টেও ম্যাচ রেফারি ছিলেন ডেনেস। তবে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বোর্ড-সরকার জোড়া চাপে শেষ পর্যন্ত তাঁকে তৃতীয় টেস্ট থেকে সরিয়ে নিতে বাধ্য হয় আইসিসি।

লর্ডসগেট ২০০৬
লর্ডস টেস্টে পাকিস্তান দলের বিরুদ্ধে বল বিকৃতির অভিযোগে মাঠের দুই আম্পায়ার ড্যারেল হেয়ার ও বিলি ডকট্রভ ইংল্যান্ডকে পাঁচ পেনাল্টি রান দেওয়ার পাশাপাশি বল বদলে দেন। ঘটনার প্রতিবাদে পাকিস্তান দল চা বিরতির পর মাঠে নামতে অস্বীকার করায় ম্যাচে ইংল্যান্ডকে জয়ী ঘোষণা করে দেন আম্পায়াররা। এই ঘটনার জেরে পাকিস্তান অধিনায়ক ইনজামাম-উল-হক ক্রিকেটকে কলঙ্কিত করার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হলেও পাকিস্তান দলের বিরুদ্ধে বল বিকৃতির অভিযোগ খারিজ করে দেয় আইসিসি।

শাহিদ আফ্রিদি, ২০১০
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে একটি ম্যাচে ফিল্ডিং করার সময় বল হাতে পেয়ে তাতে কামড় বসান আফ্রিদি। সেই দৃশ্য আবার টিভি ক্যামেরায় স্পষ্ট ধরা পড়ে। কিন্তু নিজের স্বপক্ষে আফ্রিদি নির্দ্বিধায় বলে দেন তিনি বলের গন্ধ শুঁকছিলেন। আফ্রিদিকে দু’টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচে সাসপেন্ড করা হয়েছিল।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.