রামিজ রাজা, জাভেদ মিয়াঁদাদ, আমির সোহেল, ইনজামাম উল হক, সেলিম মালিক, ইমরান খাননামগুলো মনে পড়লে কেমন যেন শিহরণ জাগে। ওরাই তো জিতেছিল ১৯৯২-এর বিশ্বকাপ। সেই পাকিস্তান আর এই পাকিস্তান? বলতে বাধ্য হচ্ছি, জাস্ট নেওয়া যাচ্ছে না।
শনিবার এজবাস্টনে পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ের যা হাল দেখলাম, তাতে গত প্রজন্মের যে ক্রিকেটারদের নাম করলাম, তাদের মাথা হেঁট হয়ে যেতে পারে অনায়াসে। পাকিস্তানের এমন দুর্দশা কখনও দেখেছি কি না মনে পড়ছে না। জানি না, এদের কি দেখে দেশের জার্সি গায়ে চড়ানোর সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে যাঁরা এদের সুযোগ দিয়েছেন, তাঁদের বিচক্ষণতা নিয়ে প্রশ্ন তোলাই যায়। পাকিস্তানের এত খারাপ ব্যাটিং! সত্যিই অবিশ্বাস্য। পাশাপাশি ভারতের ব্যাটিং দেখুন। সাড়ে এগারো ওভারেই ৬৩ রান তুলে ফেলল রোহিত, ধবন, কোহলিরা। পাকদের বোলিংকেও নির্বিষ প্রামাণ করে দেওয়ার পথে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। |
বার্মিংহ্যামে কোহলির দুরন্ত ক্যাচ। ছবি: এএফপি |
যে দলে একটাও বিশ্ব মানের ব্যাটসম্যান নেই, সেই দলের ব্যাটিং আর কতই বা ভাল হবে? যে দু’জনকে এই মুহূর্তে সেই মানের বলা যায়, ইউনিস খান ও মহম্মদ ইউসুফ, সেই দু’জনকেই তো দেশে রেখে এসেছে ওরা। শোয়েব মালিকের কথা বলছেন? তার কী হাল, সেই সম্পর্কে একটা তথ্য দেওয়া যাক। শোয়েব তার শেষ ওয়ান ডে সেঞ্চুরিটি করেছে চার বছর আগে, ২০০৯-এ। সেই ম্যাচের পর আরও ৩২টি ম্যাচ খেলেছে সে। তাতে তার গড় ১৮। এমন ফর্মে থাকা একজন ব্যাটসম্যান যে পাকিস্তানের হয়ে মাঠে নামতে পারছে, এটাই তো বিস্ময়ের। মিসবা উল হকের কথা বলবেন? সে তো নিজের জন্য ছাড়া খেলেই না। শনিবার যে ব্যাটিং দেখাল সে, তা দেখে এ ছাড়া অন্য কিছু মনে হওয়ার কোনও উপায়ই নেই। মনে হচ্ছিল, পাকিস্তানের রান বাড়ুক, সেটা তার কাছে যতটা গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ তার নিজের টিকে থাকা। সেই জন্যই তো তার স্কোর ৩৩ বলে ২২। এর মধ্যে মাত্র একটা বাউন্ডারি। তার ওপর স্ট্রাইক রোটেট করতেও পারে না ঠিক মতো। বিপদে দলকে যে টেনে তুলবে কেউ, তেমন ব্যাটসম্যানই নেই এই দলে।
আসাদ শফিকের (৪১) চেষ্টা দেখে ভাল লাগল। কিন্তু ওর সততা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। যে ভাবে আউট হওয়ার পরও সমানে ব্যাট দেখিয়ে বলার চেষ্টা করে গেল, বলটা ব্যাটে লেগেছে, তাতে এই নিয়ে প্রশ্ন তো তুলতেই হবে। ব্যাটসম্যান নিজেই সবচেয়ে ভাল বুঝতে পারে যে, তার ব্যাটে বল ছুঁয়েছে কি না। শফিককে বলছি না যে, আম্পায়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানোর আগেই সে ড্রেসিং রুমের দিকে হাঁটা লাগাক। কিন্তু এই মিথ্যাচার করা উচিত নয়। এমনিতেই সারা ক্রিকেট দুনিয়া জুড়ে পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের সততা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে (ভারতীয়রাও যদিও এখন এই ব্যাপারে তেমন পিছিয়ে নেই)। তার ওপর যদি মাঠে এ রকম আচরণ করে তারা, তা হলে তো তাদের ওপর থেকে আরওই আস্থা উঠে যাবে সারা বিশ্বের। জানি না, এই পাকিস্তান কিভাবে নিজেদের ফের আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনতে পারবে। |
|
|
রঙিন বার্মিংহ্যাম। ম্যাচ শুরুর আগে মাঠমুখী ভারত-পাক ব্রিগেড। ছবি: দেবাশিষ সেন |
|
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই চিরকাল একটা যুদ্ধ যুদ্ধ ব্যাপার। কিন্তু শনিবার সে সব উধাও। ৪০ ওভারে ১৬৫ রানের পুঁজি নিয়ে আর এই ভারতের বিরুদ্ধে কী লড়বে ভারত? ধোনিরা যতটা উন্নত, মিসবারা ততটাই অনুন্নত। এ যেন ভারত-পাক নয়, ভারত-কিনিয়া ম্যাচ। এজবাস্টনের আবহাওয়ার সঙ্গে ম্যাচের অবস্থার কি অদ্ভুত মিল। সব কিছুই স্যাঁতসেঁতে। এমন চলতে থাকলে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের উত্তেজনাটাই চিরকালের মতো হারিয়ে যাবে।
পাকিস্তানের ব্যাটিং-এর এত নিন্দা করছি বলে আবার ভাববেন না ভারতীয় বোলারদের কোনও কৃতিত্বই নেই। ভুবনেশ্বর কুমার যা ফর্ম দেখাচ্ছে, তাতে যে কোনও বাঁ হাতি বোলারই এ বার থেকে ওর সামনে ব্যাট করতে নেমে কাঁপবে। সে ক্রিস গেইলই বলুন বা নাসির জামশেদ। তবে ইশান্ত সম্পর্কে হতাশা একটুও কাটল না। আচ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে থাকার পরও ও নিউকামারের মতো। বরং এই আবহাওয়া ও পরিবেশে জাডেজা ও অশ্বিন অপ্রত্যাশিত ভাবেই ভাল।
যা দেখছি, তাতে ভারত এই টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন না হলেই অবাক হব।
|
ভারতকে থামাতে পারে একমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকা |
• এ দিন তেমন পরীক্ষার সামনে না পড়লেও বলতে হবে ভারতের ব্যাটিং অপ্রতিরোধ্য। পাক বোলিংকেও নির্বিষ করে দিল।
• ভুবনেশ্বর কুমার যা ফর্ম দেখাচ্ছে, তাতে যে কোনও বাঁ হাতি ব্যাটসম্যানই এ বার থেকে ওর সামনে ব্যাট করতে নেমে কাঁপবে। তবে ইশান্ত সম্পর্কে হতাশা কাটল না। আট বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে থাকার পরও ও নিউকামারের মতো। বরং এই আবহাওয়া ও পরিবেশে জাডেজা ও অশ্বিন অপ্রত্যাশিত ভাবেই ভাল।
• যা দেখছি, তাতে ভারত এই টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন না হলেই অবাক হব। এই টুর্নামেন্টে অন্য দলগুলির মধ্যে ধোনিদের রোখার ক্ষমতা রয়েছে একমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকার। বাকিদের সেই সাধ্য নেই।
• পাকিস্তানের এমন দুর্দশা কখনও দেখেছি কি না মনে পড়ছে না। জানি না, এদের কী দেখে দেশের জার্সি গায়ে চড়ানোর সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে যাঁরা এদের সুযোগ দিয়েছেন, তাঁদের বিচক্ষণতা নিয়ে প্রশ্ন তোলাই যায়।
• আসাদ শফিকের (৪১) চেষ্টা দেখে ভাল লাগল। কিন্তু ওর সততা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। যে ভাবে আউট হওয়ার পরও সমানে ব্যাট দেখিয়ে বলার চেষ্টা করে গেল, বলটা ব্যাটে লেগেছে, তাতে এই নিয়ে প্রশ্ন তো তুলতেই হবে। |
|