পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন তিনি। এক উপজাতি মেয়ে, ‘হিল উইমেন্স ফেডারেশন’-এর সম্পাদক কল্পনা চাকমা। অভিযোগ, তারই শাস্তি হিসাবে ১৯৯৬-এর ১২ জুন রাত প্রায় একটার সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১১ জনের একটি দল অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে যায় তাঁকে। সেনা ছাউনির বন্ধ দরজার ভিতর থেকে যেটুকু খবর এসেছে, তাতে জানা গিয়েছে, সেই বাহিনীর প্রধান মেজর ফেরদৌস তাঁকে বিয়ে করার জন্য শর্ত দিয়েছিল কল্পনাকে। কল্পনা মানেননি। তার পরে কেটে গিয়েছে ১৭টা বছর। কল্পনা ঘরে ফেরেননি। পরিবারের হাজার অভিযোগের পরেও সামান্য জিজ্ঞাসাবাদটুকুও করা হয়নি মেজর ফেরদৌসকে। |
পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলায় আজও কল্পনা চাকমা অপহরণ দিবস হিসেবে পালিত হয় ১২ জুন। এ বছর ওই দিনটাকেই শহিদুল আলম ও সাইদিয়া গুলরুখের প্রদর্শনী ‘ইন সার্চ অফ কল্পনা চাকমা’র উদ্বোধনের দিন হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল। অভিনব এক আলোকচিত্র-ফরেন্সিক প্রদর্শনী এটি। উদ্বোধন করেন কল্পনার দাদা কালিন্দীকুমার চাকমা, সতেরো বছর আগে চোখের সামনে বোনকে অপহৃত হতে দেখেছিলেন যিনি। শহিদুলের প্রতিষ্ঠিত সংস্থা দৃক-এর আয়োজনে ঢাকায় ধানমন্ডির দৃক গ্যালারিতে প্রদর্শনীটি চলবে ২১ তারিখ পর্যন্ত। পরে প্রদর্শনীটিকে কলকাতায় আনার কথাও ভাবা হচ্ছে। “আমি একে নিছক আলোকচিত্র প্রদর্শনী বলতে রাজি নই। আমি ও সায়দিয়া মৌখিক ইতিহাস, আলোকচিত্র ও ফরেন্সিক গবেষণা পদ্ধতির সাহায্যে সেই অভিশপ্ত রাতটার কিছু দৃশ্য আঁকার চেষ্টা করেছি। গত সতেরো বছর ধরে এ দেশের সরকারের পরে সরকার এসেছে। কিন্তু কল্পনাকে খুঁজতে কেউই উদ্যোগী হয়নি।” বলছেন শহিদুল। তিনি এখন টোকিওয় বিশেষ এক ধরনের ছবি মুদ্রণ পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করছেন। বললেন, ‘‘সেই পদ্ধতিতেই কল্পনার ব্যবহার করা ছোট ছোট জিনিসগুলোর ছবিকে ফরেন্সিক গবেষণার মতো করে দেখার চেষ্টা করেছি। ওর ছোট্ট রিবনটা, মশারিটা, ওর পছন্দের জুতোজোড়া ওগুলোর মধ্যে দিয়েই ধরতে চেয়েছি মানুষটাকে, বুঝতে চেয়েছি ঠিক কী ঘটেছিল।”
কিন্তু এগুলো কি প্রমাণ? শহিদুল তা বলছেন না। তাঁর ছবিগুলো, কল্পনার ব্যবহৃত জিনিসগুলো, তার আত্মীয়দের সাক্ষাৎকার, কিছুই পাথুরে প্রমাণ হতে পারে না, জানাচ্ছেন তিনি। কিন্তু সব মিলিয়ে সেগুলো একটা শান্ত পুকুরে ঢিল ছুঁড়তে পারে, বিশ্বাস করেন তিনি। বছরের পর বছর, বাংলাদেশে সরকারের পরে সরকার যে শান্তিকল্যাণটা বজায় রাখতে চেয়েছে, তাকেই তিনি নাড়িয়ে দিতে চাইছেন।
সেই চাওয়াতেই বোধ হয় এক হয়ে যায় বারাসতের কামদুনি আর চট্টগ্রামের লালিয়াঘোনা, কল্পনার গ্রাম। |