পড়ার মাসুল ১৪ মেয়ের প্রাণ: পোড়ানো হল জিন্নার বাড়ি
পাকিস্তানে বাসে বোমা, হামলা হাসপাতালেও
সুদীর্ঘ চিকিৎসার পরে মালালা ইউসুফজাই সেরে উঠেছেন। তবে পাকিস্তানের কোয়েটায় জঙ্গি হানায় শনিবার যে ২৫ জনের মৃত্যু হল, তাঁদের মধ্যে অন্তত ১৪ জনের নাম মালালা হতে পারত। কারণ এঁরা সবাই কট্টরবাদী জঙ্গিদের ফরমান উপেক্ষা করে, দিনে-রাতে সন্ত্রাসের সঙ্গে নিত্য ঘর করেও পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
পাকিস্তানে জঙ্গি নিশানা এ বার একটি মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় এবং তার কাছের একটি হাসপাতাল।
না, সর্দার বাহাদুর খান মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুমে এ দিন ঢুকে পড়েনি বটে জঙ্গিরা। তারা বরং বেছে নিয়েছিল ছাত্রী-শিক্ষিকা বোঝাই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বাস-কে। ক্লাস শেষ হওয়ার পরে বিকেল তিনটে নাগাদ বাড়ি ফেরার বাসে উঠেছিলেন ওঁরা। বাসটি ক্যাম্পাস ছেড়ে বেরনোর আগেই তাতে বিস্ফোরণ ঘটে। বাসের মধ্যেই মারা যান ১৪ জন ছাত্রী। ২২ জনেরও বেশি গুরুতর আহত। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে বোলান মেডিক্যাল কমপ্লেক্স। স্বাভাবিক ভাবেই আহতদের দ্রুত সেখানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তখনও কেউই জানতেন না, জঙ্গিরা তত ক্ষণে ঘাঁটি গেড়েছে ওই হাসপাতালেই। অনেকটা যে রকম ভাবে ২৬/১১-য় ছত্রপতি শিবাজী স্টেশনে তাণ্ডব চালানোর পরে আজমল কসাবরা সরে গিয়েছিল মাদাম কামা হাসপাতাল চত্বরে।
জঙ্গি হানায় নিহতের দেহ নিয়ে যাচ্ছেন নিরাপত্তাকর্মীরা। শনিবার কোয়েটায়।
বিকেল সাড়ে চারটে। আহতদের ভর্তি করানোর প্রক্রিয়া শেষ হতে না হতেই হাসপাতাল চত্বর কাঁপতে লাগল গুলি-বোমার কান ফাটানো আওয়াজে। পরের পাঁচ ঘণ্টার জন্য বোলান হাসপাতালটি কার্যত জঙ্গিদের হাতেই অবরুদ্ধ হয়ে থাকল। রোগী-নার্স-ডাক্তার মিলিয়ে প্রায় ৩৫ জনকে পণবন্দি করে রাখে জঙ্গিরা। চার জঙ্গি-সহ মোট ১১টি প্রাণের বিনিময়ে রাতের দিকে হাসপাতালের দখল নেয় নিরাপত্তা বাহিনী। পুলিশ সূত্রের খবর, নিহতদের মধ্যে রয়েছেন কোয়েটার ডেপুটি কমিশনার আব্দুল মনসুর কাকার এবং চার জন নার্সও।
কারা ঘটাল এই আক্রমণ? বালুচিস্তান প্রদেশ তথা কোয়েটা শহর বেশ কয়েক বছর ধরেই সন্ত্রাসের শিরোনামে। বালুচ জাতীয়তাবাদী, নানা গোষ্ঠী-সম্প্রদায়ের মৌলবাদী জঙ্গি এবং তালিবান সকলেই এই এলাকায় পুরোদমে সক্রিয়। আল কায়দা ঘনিষ্ঠ লস্কর-ই-জাঙ্গভি শিয়া সংখ্যালঘু হাজারা সম্প্রদায়ের উপরে বারবার হামলা চালিয়েছে। এ বছরের জানুয়ারি মাসে একটি স্নুকার ক্লাবে হামলায় ৯২ জন এবং ফেব্রুয়ারি মাসে আর একটি বিস্ফোরণে ৯০ জন মারা যান। এ বছরের তৃতীয় বৃহত্তম হামলাটি হল আজ। যদিও এর দায় এখনও স্বীকার করেনি কেউ।
বালুচিস্তানে শনিবার দিনটা শুরুই হয়েছিল নাশকতা দিয়ে। কোয়েটা থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে শৈলশহর জিয়ারাত। ১৯৪৮ সালে অসুস্থ হওয়ার পরে এই শহরেই একটি বাড়িতে দীর্ঘ দিন থেকেছেন মহম্মদ আলি জিন্না। বাড়িটিকে হেরিটেজের মর্যাদা দিয়েছিল পাক সরকার। আজ ভোরে সেই বাড়ি লক্ষ করে তিনটি গ্রেনেড ছোড়ে জঙ্গিরা। তার পরে একটি মোটরসাইকেলে রাখা বিস্ফোরক থেকে পরপর পাঁচটি বিস্ফোরণ। আগুন লেগে বাড়িটির বড় অংশই পুড়ে যায়। নিহত হন রক্ষী এক জন পুলিশও। এই ঘটনার দায় নিয়েছে ইসলামি জঙ্গি সংগঠন বালুচিস্তান ন্যাশনাল আর্মি।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় এবং হাসপাতালে আক্রমণ কারা, কী উদ্দেশ্যে চালাল, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে। এ ঘটনা কি শুধুই শিয়া হাজারাদের উপরে ক্রমান্বয়ে আক্রমণের তালিকায় আরও একটি সংযোজন? নাকি মেয়েদের শিক্ষা নিয়ে সরব হয়ে যে ভাবে সোয়াট উপত্যকায় তালিবানি হামলার শিকার হয়েছিল কিশোরী মালালা ইউসুফজাই, এ তারই আর একটা পর্ব? মেয়েদের পড়াশোনার উপরে মৌলবাদী প্রত্যাঘাত? মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকারা নিশানা হওয়াতে এই সম্ভাবনা কোনও মতেই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। বাসে বিস্ফোরণ ঘটানোর পরে যে ভাবে জঙ্গিরা আহতদের চিকিৎসাস্থলেও হানা দিল, তাতে সন্দেহ আরও দৃঢ় হচ্ছে।
প্রায় আট জন জঙ্গি হাসপাতালের একাধিক জায়গায় ঘাঁটি গেড়েছিল বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। বাসে বিস্ফোরণে আহত, উদ্ধারকারী এবং পরিজনেরা যখন হাসপাতালের এমার্জেন্সি রুমে ভিড় করেছেন, তখন ওই ঘরটির বাইরেই প্রথম বিস্ফোরণটা শোনা যায়। তার পর নানা প্রান্ত থেকে গুলি আর বোমার শব্দ। এমার্জেন্সি এবং লাগোয়া বেশ কয়েকটি ঘরে রোগী, রোগীর পরিবার এবং নাসর্র্-ডাক্তাররা মিলে ঘরের দরজা বন্ধ করে দেন। বাইরে টহল দেওয়া জঙ্গিদের হাতে পণবন্দিতে পরিণত হন রোগীরা। জনৈক হিদায়েতুল্লা খান তাঁর ভাগ্নীকে দেখতে এসেছিলেন। তিনি জানান, কেউ আলমারি, কেউ টেবিলের নীচে ঢুকে প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করছিলেন।
দ্রুত এলাকা ঘিরে ফেলে পুলিশ ও আধাসামরিক সীমান্ত বাহিনী ফ্রন্টিয়ার কর্পস। কিন্তু হাসপাতালে ঢুকতে গেলেই পড়তে হচ্ছে জঙ্গিদের গুলির সামনে। কেউ কেউ ছাদ থেকে গুলি চালাচ্ছিল। তখন আকাশে চক্কর কাটতে শুরু করে ফ্রন্টিয়ার কর্পস-এর হেলিকপ্টার।
জিন্নার বাড়ির আগুন নেভাচ্ছে পাক দমকলবাহিনী। জিয়ারাতে।
বাধ্য হয়ে জঙ্গিরা ছাদ থেকে নামে। শুরু হয় মাটিতে দাঁড়িয়ে লড়াই।
দু’টি মানববোমা নিজেকে উড়িয়ে দেয়। প্রায় পাঁচ ঘণ্টার লড়াইয়ের পর হাসপাতাল জঙ্গিমুক্ত হয়। চার জঙ্গি সংঘর্ষে নিহত, এক জন জীবিতাবস্থায় আটক।
পাকিস্তানে নির্বাচনের পর সবেমাত্র ক্ষমতায় এসেছেন নওয়াজ শরিফ। এ দিনের ঘটনা তাঁর প্রশাসনের কাছে প্রথম বড় পরীক্ষা বলে মনে করা হচ্ছে। বালুচিস্তান সরকারকে সব রকম সাহায্য করার জন্য অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী চৌধুরি নিসারকে নির্দেশ দিয়েছেন শরিফ।

ছবি: এএফপি



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.

s