মনোনয়ন জমার সময় এক দিন বাড়লেও সব আসনে প্রার্থী দিতে পারল না বিরোধীরা। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তুফানগঞ্জ মহকুমায় মনোনয়ন জমা নেওয়া হয়। তুফানগঞ্জ ১ এবং ২ নম্বর ব্লকে অফিস তো বটেই, মহকুমা শাসকের দফতর লাগোয়া চত্বরে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন হয়। তুফানগঞ্জ ১ ব্লকে জেলা পরিষদে ২টি পঞ্চায়েত সমিতির ৫টি ও গ্রাম পঞ্চায়েতের ৬টি আসনে এ দিন বিজেপি প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দেন। তুফানগঞ্জ ২ ব্লকে এদিন দলের প্রার্থীরা কোন আসনে মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি। সব মিলিয়ে ওই মহকুমায় গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩৩৩ আসনের মধ্যে বিজেপি ৬৬ আসনে দুই পঞ্চায়েত সমিতির ৬টি আসনের মধ্যে ৩৩ টি আসনে ও জেলা পরিষদের ৬টির মধ্যে ৩ টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে।
বিজেপি তুফানগঞ্জ ২ ব্লকের জেলা পরিষদে ৩টির একটিতেও প্রার্থী দিতে পারেনি। তুফানগঞ্জ ২ পঞ্চায়েত সমিতি ২৯ আসনের ৬টিতে প্রার্থী দেওয়া গিয়েছে তুফানগঞ্জ ২ ব্লকের রামপুর ১ রামপুর ২ ও ফলিমারি গ্রাম পঞ্চায়েতে কোনও আসনেই প্রার্থী দিতে পারেনি তারা। বুধবার বিজেপি পুলিশের নামে অসহযোগিতার অভিযোগ করেছে। বিজেপি-র অভিযোগ, নির্দিষ্ট বাড়িতে দেড় শতাধিক প্রার্থী একসঙ্গে জড়ো হয়ে খবর দিলেও পুলিশ পাহারা দিয়ে তুফানগঞ্জ মহকুমা শাসকের দফতরে পৌঁছনোর ব্যবস্থা করেনি। ওই প্রার্থীরা মহকুমা শাসকের দফতরে নির্ধারিত সময়ের পরে গিয়ে ফিরতে বাধ্য হন। |
বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের অভিযোগ, “মনোনয়নের প্রথম দিন থেকেই তুফানগঞ্জ মহকুমা জুড়ে সন্ত্রাস চালাচ্ছে তৃণমূল। তৃণমূলের বাইক বাহিনী। পুলিশকে বলেও লাভ হয়নি। সেই জন্যই আমরা নির্বাচনের দিন পিছিয়ে মনোনয়নের দিন আরও তিন দিন তুফানগঞ্জ সহ রাজ্যে সর্বত্র বাড়াতের নির্বাচন কমিশনে দাবি জানানো হয়েছে। বিজেপির জেলা সম্পাদক নিখিল দে-এর অভিযোগ, “গোড়ায় তুফানগঞ্জের ব্লক এবং এসডিও অফিসের সামনে মনোনয়ন জমায়েত করে বাধা দেওয়া হয়। এখন প্রার্থীদের হুমকি দিয়ে বাড়ি থেকে বেরোতে দেওয়া হচ্ছে না।” কংগ্রেসের তরফে এদিন তুফানগঞ্জ ১ ও ২ ব্লকে গ্রাম পঞ্চায়েতের মাত্র ৫টি আসনে মনোনয়ন জমা দেওয়া হয়। তবে গ্রাম পঞ্চায়েতে ৩৬টি, পঞ্চায়েত সমিতির ৭টি ও জেলা পরিষদের ৬টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে কংগ্রেস। মহকুমা কংগ্রেস নেতা দেবেন বর্মার অভিযোগ, “তৃণমূল কংগ্রেসের বাইক বাহিনীর দৌরাত্ম্যে এ দিন বাড়ি থেকে আমাদের প্রার্থীরা বের হতে পারেননি। না হলে দ্বিগুণ প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিতেন।”
এক সময়ের লালদুর্গ বলে পরিচিত তুফানগঞ্জ মহকুমায় সিপিএমের তরফেও গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির ৫৪ টি আসনে প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। বামেদের আশঙ্কা, শতাধিক আসনে প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা করাতে পারেননি। সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য অনন্ত রায় বলেন, “তৃণমূল এদিনও সন্ত্রাস চালায়। রাস্তায় বেশ কয়েকজন প্রার্থীদের মারধর করা হয়। গ্রামে বাইক নিয়ে দাপিয়ে বেড়ায়। বলরামপুর ১, বলরামপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের কোন আসনেই প্রার্থী দেওয়া যায়নি।”
তৃণমূল অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে। জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “অভিযোগ ভিত্তিহীন। যাঁদের জনসমর্থন নেই, তাঁরা প্রার্থী দিতে পারবেন না এটাই স্বাভাবিক। ফলে এক মাস সময় বাড়ালেও ওদের লাভ হবে না।” প্রশাসনের তরফে দাবি করা হয়েছে তুফানগঞ্জে বাড়তি দিনের মনোনয়ন পর্ব নির্বিঘ্নেই হয়েছে। কোচবিহারে জেলাশাসক মোহন গাঁধী বলেন, “তুফানগঞ্জে মনোনয়ন ঘিরে অশান্তির খবর নেই। প্রাথমিক ভাবে তুফানগঞ্জ ১ নম্বর ব্লকে এ দিন ৩০টির বেশি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে বলে খবর এসে গিয়েছে। তবে চূড়ান্ত হিসাব রাতের মধ্যে চলে আসবে।”
|