বাড়ি মনে নেই, হাসপাতালই এখন ঠিকানা মা-মেয়ের
ঠিকানা ছিল তিরুবনন্তপুরম মানসিক হাসপাতাল। তিনি একা নন, সঙ্গে বছর আড়াইয়ের একটি শিশু কন্যা। হাসপাতালের ঘেরাটোপে অন্য অপ্রকৃতস্থতার মাঝে ক্রমেই সুস্থ হয়ে ওঠা মা-মেয়ের পক্ষে আর থাকা কি ঠিক হবে? চিকিৎসকেরা এমনই ভাবছিলেন। সেই সময়েই জলেশ্বরী নামের তরুণী মা জানিয়ে দেন, মনে পড়ে গিয়েছে বাড়ির ঠিকানা, বর্ধমান। তার বেশি কিছু মনে পড়ছে না তাঁর। চিকিৎসকেরা আর ঝুঁকি নেননি। নিকটবর্তী বহরমপুর মানসিক হাসপাতালেই পাঠানো হয় জলেশ্বরীকে।
সেই থেকে জলেশ্বরী বহরমপুরেরই বাসিন্দা হয়ে উঠেছেন যেন। তবে সেই মানসিক হাসপাতালেও প্রায় সুস্থ এক জনকে রেখে দেওয়া কি ঠিক হবে, তার উপর সঙ্গে রয়েছে আড়াই বছরের একটা ফুটফুটে শিশু। তাই মা-মেয়েকে পাঠানো হয়েছে বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
আর ক্রমেই সেই হাসপাতালের এক জন হয়ে উঠেছেন মা-মেয়ে।
মেয়েটিকে দেখভালের বাড়তি দায়িত্ব এখন নার্স দিদিদের। তাঁদের দেওয়া পুতুল আর অন্যান্য খেলার সামগ্রী নিয়েই দিব্যি কাটছে তার। হাসপাতালের দোতলায় মহিলা বিভাগের নার্স-আয়া দিদিদের কোলে কোলে ঘুরে একরত্তি দীপ্তির সকাল থেকে রাত কাটছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য দেখভালের জন্য ২৪ ঘন্টার এক জন প্রৌঢ় আয়াও রেখে দিয়েছেন।
হাসপাতালের আদরেই বড় হচ্ছে দীপ্তি। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।
বহরমপুর মানসিক হাসপাতালের সুপার পবিত্রচন্দ্র সরকার বলেন, “বর্ধমান সিজেএম আদালতের বিচারক সেলিম আহমেদ আনসারির নির্দেশে গত ১৬ মে জলেশ্বরী নামে ২৭-২৮ বছরের ওই মহিলাকে বহরমপুর মানসিক হাসপাতালে ভর্তির জন্য নিয়ে আসে বর্ধমানের পুলিশ। কিন্তু মায়ের সঙ্গে শিশু সন্তান রাখার মত কোনও পরিকাঠামো মানসিক হাসপাতালে নেই। ওইটুকু শিশুকে মানসিক রোগীদের সঙ্গে রাখা নিরাপদ নয়। শিশুর নিরাপত্তার কথা ভেবে মা ও মেয়েকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রাখার কথা ভাবা হয়।”
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই মহিলার বাড়ি বর্ধমানে, বাবা ফলে মাল দীর্ঘ দিন আগে মারা গিয়েছেন। তাঁর কথা অনুযায়ী বাড়িতে রয়েছেন মা আরতি মাল ও দুই ভাই সনাতন ও বাদাম। পবিত্রবাবু বলেন, “বর্ধমানের কোন গ্রামে বাড়ি জলেশ্বরী জানাতে পারেনি। তবে কোনও ভাবে ওই মহিলা তিরুবনন্তপুরম চলে যায়। সেখানেই তাকে রাখা হয় তিরবন্তপুর মানসিক হাসপাতালে। সেখানে জলেশ্বরী সুস্থ হয়ে উঠলে মানসিক হাসপাতালের সুপার কোট্টায়াম সিজেএম আদালতকে লিখিত ভাবে জানান। আদালত ওই মহিলাকে বাড়ি পৌঁছনোর নির্দেশ দেন। পরিবারের সদ্যসদের খুঁজে পাওয়া না গেলে তাঁর পুনর্বাসনেরও নির্দেশ দেন।”
মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার তথা সহ-অধ্যক্ষ মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মায়ের সঙ্গে শিশুসন্তানকে দেখে আমাদের ভাল লাগে। আমি চাইনি শিশু বিভাগে অসুস্থ বাচ্চাদের সঙ্গে তাকে রাখা অমানবিক হবে। তখন মায়ের কাছ থেকে মেয়েকে বিচ্ছিন্ন না করে এক সঙ্গে রাখার কথা মাথায় আসে। কিন্তু এখন সুস্থ হলেও মা এক সময়ে মানসিক রোগী ছিলেন। তিনি যদি সন্তানের যথাযথ যত্ন নিতে না পারেন এবং কোনও অঘটন ঘটে যায়, সে কথা মাথায় রেখে আমাদের ব্যবস্থা নিতে হয়।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.