সিপিএমের মূল লড়াই তৃণমূলের সঙ্গে। আর সেই লড়াইয়ে সিপিএমের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়েছে কংগ্রেস এবং বিজেপি। জোট বাঁধলেও তৃণমূলের এই বিরোধীরা দলীয় প্রতীকে নয়, বরং নির্দল হিসেবে লড়াইয়ে নেমেছেন।
মানবাজারের কামতা জাঙ্গিদিরি পঞ্চায়েতের ১২টি আসনের নির্দল প্রার্থীদের সমর্থন করছেন ওই তৃণমূল বিরোধী জোট। কেন এই অবস্থা। কারণটা খুব স্পষ্ট। এই পঞ্চায়েত এলাকা বেশ কয়েক বছর ধরে তৃণমূলের অন্যতম শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত। ২০০৩ সালে এখানকার পঞ্চায়েত তৃণমূল পায়। ২০০৮ সালেও তার পরিবর্তন হয়নি। তখন এই পঞ্চায়েতের আসন ছিল ১১টি। তৃণমূল ৯টি ও সিপিএম ২টি আসন পেয়েছিল। এ বার ওই পঞ্চায়েতে ১টি আসন বেড়ে হয়েছে ১২। পঞ্চায়েত সমিতির এলাকার ৩টি আসনের মধ্যে তৃণমূলের ২টি ও সিপিএমের ১টি ছিল। এ বার পঞ্চায়েত সমিতির আসনের সংখ্যা অপরিবর্তিত। তবে এখানে আর বিরোধী জোট সমর্থিত নির্দল প্রার্থী নেই। সিপিএম ২টি এবং কংগ্রেস ওই দু’টির একটিতে প্রার্থী দিয়েছে। বিরোধীরা বলছেন, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব স্থানীয় ভাবে এই সব জোট মেনে নেবে। কিন্তু পঞ্চায়েতের উপরের দু’টি স্তরে তাঁরা ‘সাপে-নেউলে’।
সিপিএমের কামতা জাঙ্গিদিরি লোকাল কমিটির সম্পাদক সিপিএমের ইন্দ্রজিত্ মাহাতোর ব্যাখ্যা, “তৃণমূলের প্রতি মানুষের মোহভঙ্গ হয়েছে। তাই তৃণমূল বিরোধী ভোট এককাট্টা করা দরকার ছিল। সাধারণ বাসিন্দাদের ইচ্ছাকে তাই মর্যাদা দিতে নির্দল প্রার্থীদের আমরা সমর্থন করছি। এটা স্থানীয় স্তরেই ঠিক করা হয়েছে।”
স্থানীয় রাজনীতির কারবারিরা জানাচ্ছেন, তৃণমূলকে বেগ দিতে এই অঞ্চলে তৃণমূল বিরোধী জোট গড়া হয়েছে। এই জোটে সিপিএম যেমন রয়েছে তেমনি কংগ্রেস, বিজেপি-সহ অন্য ছোট দলগুলিও রয়েছে। কংগ্রেসের মানবাজার ব্লক সভাপতি শঙ্করীপ্রসাদ মাহাতোর ব্যাখ্যা, “ওই অঞ্চলে স্থানীয় স্তরের নেতা ও কর্মীরা মিলে এই জোট হয়েছেন। পঞ্চায়েত নির্বাচনে স্থানীয় ভাবে এমন জোট হয়েই থাকে।” তাঁর মতেই সায় দিয়েছেন বিজেপি-র ব্লক সভাপতি দীপু বাউরি। তিনি বলেন, “তৃণমূল বিরোধী ভোট ভাগাভাগি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই প্রতি আসনে আমরা আলাদা করে প্রার্থী না দিয়ে একজন করে নির্দল প্রার্থী দিয়ে তাঁদের সমর্থন করছি।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণীন্দ্র গোপ বলেন, “এই রকম অবস্থা জেলার বাকি ১৬৯ পঞ্চায়েতে হয়নি। তবে কংগ্রেস বা বিজেরি-র সঙ্গে আমাদের মতাদর্শগত বিরোধ থাকলেও, স্থানীয় স্তরে জোট গড়ার ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত ভোটে কিছু স্বাধীনতা দেওয়া হয়। কিন্তু এতে দলের কাজে বা শৃঙ্খলা বজায় রাখতে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সে দিকে আমাদের নজর রয়েছে।” তবে ওই বিরোধী জোটকে পাত্তা দিতে নারাজ তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি নীলকমল মাহাতো বলেন, “মানবাজার ব্লকের মধ্যে কামতা জাঙ্গিদিরি অঞ্চলে সবথেকে বেশি উন্নয়ন হয়েছে। খরচেও সবার প্রথমে রয়েছে। উন্নয়নের জন্য মানুষ আমাদের পাশে থাকবে। আমরা ১২টি আসনই পাব।” |