হাঙ্গামার দিনেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছিলেন তাকে গ্রেফতার করার। তারও ছ’দিন পরে বিহার পুলিশের হাতে ধরা পড়ল ব্যারাকপুর কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত শিবু যাদব। বৃহস্পতিবার দুপুরে শিবু-সহ ন’জনকে বিহারের চম্পারণ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানান ব্যারাকপুর কমিশনারেটের স্পেশ্যাল অপারেশন গ্রুপের তদন্তকারীরা।
ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার সঞ্জয় সিংহ বলেন, “আমরা অন্যান্য রাজ্যের পুলিশকে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। বিহার পুলিশই শিবুকে গ্রেফতার করেছে।” কমিশনার জানান, এ দিন দুপুরে একটি টাটা সুমো নিয়ে পূর্ব চম্পারণের সুগলি থানা এলাকার রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল শিবুরা। গাড়িটিতে পশ্চিমবঙ্গের নম্বর প্লেট দেখে বিহার পুলিশের সন্দেহ হয়। গাড়িটিকে
দাঁড় করিয়ে তল্লাশি চালাতেই
শিবুকে পাওয়া যায়। আজ, শুক্রবার শিবুকে ট্রানজিট রিমান্ডে কলকাতায় আনা হবে। কাল, শনিবার তাকে আদালতে তোলা হবে বলে জানান ব্যারাকপুরের কমিশনার।
এর আগে খুনের ঘটনায় দুই অভিযুক্ত তৃণমূল কাউন্সিলর মহম্মদ ইকবাল (মুন্না) এবং শম্ভুনাথ কাও-ও গ্রেফতারি এড়াতে ভিন্ রাজ্যে গা-ঢাকা দিয়েছিলেন। মহম্মদ ইকবালকে বিহারের ডেহরি-অন-শোন এবং কাও-কে উত্তরপ্রদেশের বালিয়া থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
গত ৬ জুন ব্যারাকপুর সদর বাজারে খুন হন শিবু ঘনিষ্ঠ জিতুলাল তাঁতি (২৮)। ওই রাত থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ব্যারাকপুর সদর বাজার ও মণিরামপুর অঞ্চল। পরের দিন সকালেও ব্যারাকপুরে তাণ্ডব চালায় শিবুর ঠ্যাঙাড়ে-বাহিনী। ঘটনার ছবি তুলতে গিয়ে আক্রান্ত হন দুই চিত্রসাংবাদিক। ওই ঘটনায় শিবুর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির সাতটি ধারায় মামলা শুরু করে পুলিশ। ইতিমধ্যেই সদর বাজার এলাকার বাসিন্দাদের একাংশও শিবু এবং তার বাহিনীর দাদাগিরির প্রতিবাদে গণস্বাক্ষর সংবলিত একটি স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসনের কর্তাদের কাছে। ওই স্মারকলিপিতে খুনের হুমকির কথাও আছে।
ব্যারাকপুর কাণ্ডে সাংবাদিকদের মারধরের ঘটনায় অবশ্য শিবুকে অভিযুক্ত করা হয়নি। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কংগ্রেস নেতা ও আইনজীবী সম্রাট তপাদার বলেন, “এখন শাসক দলের গোষ্ঠী-কোন্দল ঢাকতে শিবুকে ধরার নাটক করছে পুলিশ। শিবু তৃণমূলের প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় এত দিন এলাকাতেই ছিল। এখন বিহার থেকে ধরার কথা বলা হচ্ছে। সাংবাদিকদের মারধরের ঘটনায় খুব সাবধানে তাকে বাদও দেওয়া হল। যাতে তার জামিন পেতে সুবিধা হয়।” যাঁর সঙ্গে শিবুর বিরোধ, সেই তৃণমূল নেতা তথা আইনজীবী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যও বলেন, “সাংবাদিকদের মারধরের মামলায় শিবুকে কেন বাদ দেওয়া হল, বুঝলাম না। তবে ওকে আনা হলে এবং মামলাটা আদালতে উঠলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে।” পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, সাংবাদিকদের মারার ঘটনায় শিবুর নামে এফআইআর করা হয়নি বলেই তাকে ওই মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
|