থানার বড়বাবুর ঘরে অনড় মেয়েটি জানিয়ে দেয়, “স্যার আমি বিয়ে করব না। পড়াশুনা করব।”
তারপর ধীরে ধীরে যোগ করে, “মাকে বুঝিয়ে আমার বিয়েটা ভেঙে দিন না স্যার!” রুম্পি ঘোষ। বয়স সাকুল্যে ১৪। বাড়ি ধুবুলিয়ার বাহাদুরপুর।
কৃষ্ণনগর কুইন্স গালর্স হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী। গ্রামের বাণেশ্বর ঘোষের সঙ্গে বিয়ে ঠিক করেছেন মা। কিন্তু বিয়েতে কিছুতেই রাজি নয় সে। রুম্পির অভিযোগ, “যখন থেকে বিয়ের কথাবার্তা চলছে তখন থেকেই আমি মাকে বলে দিয়েছিলাম বিয়ে করব না। পড়াশুনা করব। কিন্তু মা কোনও কথাই শুনতে চায়নি। প্রতিবাদ করলে মা আমাকে খুব মারে। এক দিন তো হাতে গরম তেল ছিটিয়ে দিয়েছিল। তাই বাধ্য হয়েই আমাকে আজ এই পথ বেছে নিতে হল।” কী পথ? না, বিয়ের কথা পাড়তেই সটান থানায় হাজির মেয়ে।
পণ দিয়ে বিয়ে করার বিষয়েও চরম আপত্তি তার। টিনের চালের ছোট্ট প্রায় অন্ধকার ঘরটার ভিতরে দাঁড়িয়ে রুম্পি পরিস্কার বলে, “বিয়ের জন্য পণ দেব কেন? বরং সেই টাকা খরচ করে আমি পড়াশুনা করব। তা ছাড়া মা যে ভাবে লোকের কাছে চেয়েচিন্তে পণের টাকা জোগাড় করছেন তাতে মেয়ে হিসাবে আমার খুবই কষ্ট হচ্ছে।” |
রুম্পির বাবা ছিলেন লরিচালক। দুর্ঘটনায় বছর দুয়েক আগে মারা গিয়েছেন। ভাই বিট্টু কৃষ্ণনগরের শঙ্কর মিশনের আবাসনে থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। মা মালতী ঘোষ বছর দুয়েক থেকে গ্রামের একটি জুনিয়র হাইস্কুলে মিড ডে মিলের রাধুনির কাজ করেন। সংসারে চরম অভাব। মালতীদেবীর দাবি, “বাড়ির পাশেই একটা ভাল ছেলে পেয়ে গেলাম। সম্পন্ন পরিবার। মেয়েটা আমার চোখের সামনে সুখেই থাকত।”
বিষয়টি জানার পর স্কুলের দুই শিক্ষিকা ও ধুবুলিয়া থানার পুলিশ সঙ্গে নিয়ে রুম্পির বাড়ি পৌঁছে যান কৃষ্ণনগর মহিলা থানার ওসি অপরাজিতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার। তিনি দীর্ঘ সময় মালতীদেবীর সঙ্গে কথা বলে বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু বিয়ে না করলে মেয়েকে নিজের কাছে রাখতে নারাজ মালতীদেবী। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, “মেয়ে আমার কথা শোনে না। বাড়িতে পুলিশ ডেকে এনেছে। ও মেয়েকে আমি আর বাড়িতে থাকতে দেব না।” প্রতিবেশীদের ভিড় বাড়তে থাকে। প্রতিবেশীরাও মালতীদেবীকে সমর্থন করতে থাকেন।
অবশেষে তিনি বলেন, “বিয়ে করলে মেয়েকে বাড়িতে থাকতে দেব।” ফোঁস করে ওঠে রুম্পি। সে বলে, “বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে রাজি আছি, কিন্তু পড়াশুনা বন্ধ করে বিয়ে করব না।” শেষ পর্যন্ত ওসি ও শিক্ষিকারা রুম্পিকে নিয়ে স্কুলে ফিরে যান। আপাতত তার ঠিকানা স্কুলের হস্টেল। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মহুয়া সরকার বলেন, “আপাতত ছাত্রীটি স্কুলের হস্টেলে থাকছে। প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব। তারপর সিদ্ধান্ত নেব যাতে তার লড়াইটা বিফলে না যায়।” কৃষ্ণনগর মহকুমাশাসক সব্যসাচী সরকার বলেন, “ছাত্রীটিকে স্কুলের হস্টেলে ভর্তি করে দিচ্ছি। আমি মেয়েটির সঙ্গে কথা বলব। ওর কি কি প্রয়োজন জেনে নিয়ে সেই মতো ব্যবস্থা করা হবে। সরকারি তহবিল থেকে তার লেখাপড়ার খরচ দেওয়া হবে।” |