মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ, পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের তৎপরতা সত্ত্বেও প্রায় দু’বছর ধরে কার্যত বন্ধ আরামবাগের অতিরিক্ত মোটরযান দফতর। দফতরটি চালুর দাবিতে মহকুমাশাসকের অফিসে গাড়ি-মালিকদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ লেগেই রয়েছে। কেননা, গাড়ি সংক্রান্ত কাজকর্ম মেটাতে মালিকদের যেতে হচ্ছে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরের চুঁচুড়ায় ওই দফতরের জেলা কার্যালয়ে। কিন্তু কবে থেকে আরামবাগের দফতরটি পুরোদমে চালু হবে, প্রশাসনের কাছ থেকে তার কোনও সদুত্তর মেলেনি।
মহকুমায় দিন দিন গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। গাড়ি-মালিকদের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে ২০০৩ সালের ১২ অগস্ট মহকুমাশাসকের দফতর চত্বরে চালু করা হয় অতিরিক্ত মোটরযান দফতরটি। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দফতরে যে কাজগুলি হওয়ার কথা ছিল, তা হল গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন, কর জমা, গাড়ির ‘ফিটনেস’ দেখা ইত্যাদি। শুরুতে সেই সব কাজ কিছু দিন হলেও পরিষেবা ক্রমশ অনিয়মিত হয়ে পড়ে।
গত দু’বছর ধরে শুধু প্রতি মঙ্গলবার দু’জন করে কর্মী এসে গাড়ির ‘ফিটনেস’ দেখেন। তারও শংসাপত্র আনতে গাড়ির মালিকদের চুঁচুড়ার অফিসে যেতে হয়। আর বাদবাকি কোনও কাজ হয় না।
গত বছর ৩০ নভেম্বর সিঙ্গুরে এক প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত জেলা প্রশাসনের কর্তা এবং পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রকে আরামবাগে অতিরিক্ত মোটরযান দফতরটি তাড়াতাড়ি চালু করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
দিন দু’য়েক পরে মদন মিত্রের কাছে আরামবাগের তৃণমূল বিধায়ক কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরাও বিষয়টি নিয়ে তদ্বির করেন। বিধায়কের দাবি, সেই সময়ে মন্ত্রী তাঁকে তাড়াতাড়ি কাজ শুরু করার আশ্বাস দিয়েছিলেন।
কিন্তু এখনও তা চালু হল না। মহকুমার বেশ কিছু গাড়ি-মালিকের অভিযোগ, একে তো এখানকার অতিরিক্ত মোটরযান দফতরে কোনও কাজ হয় না, তার পরে দীর্ঘ সময় এবং অর্থ ব্যয়ের পরে চুঁচুড়ার কার্যালয়ে গেলেও অনেক সময়েই পরিষেবা মেলে না। হয়রানও হতে হয়। আরামবাগের দফতরটির বেহাল দশার জন্য সরকারি নিষ্ক্রিয়তা এবং জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা।
গাড়ি-মালিকদের পক্ষে আরামবাগের বাসিন্দা সৌরভ দাস বলেন, “লাইসেন্স পুননর্বীকরণের জন্য অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে যেতে হচ্ছে চুঁচুড়ায়। কাগজপত্র যথাযথ না থাকায় রাস্তায় পুলিশ জরিমানাও করছে। এখানকার দফতরটি চালু হলে এই সমস্যা হত না।” অসিত ঘোষ নামে ওই এলাকার আর এক গাড়ি-মালিকেরও বক্তব্য একই। তাঁর কথায়, “দফতরটি চালু হলে হয়রানি বন্ধ হত। মনে হয় প্রশাসন ইচ্ছা করেই দফতরটি চালু করছে না।”
এ নিয়ে মহকুমাশাসক অরিন্দম রায় বলেন, “দফতরটি চালু করতে আমাদের কাছে যে পরিকাঠামো চাওয়া হয়েছিল, তা সম্পূর্ণ করে দিয়েছি অনেক আগেই। এর পরেও কেন দফতরটি চালু হয়নি, তা আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরই বলতে পারবে।” জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের আধিকারিক সৈকত দাস বলেন, “আরামবাগের দফতরটিতে কম্পিউটারের সার্ভার বসানো-সহ বেশ কিছু প্রস্তাব সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। পঞ্চায়েত ভোট মিটলে তদ্বির করা হবে।” তবে, কোনও রকম নিষ্ক্রিয়তা বা গাফিলতির অভিযোগ তিনি মানতে চাননি। |