স্টেডিয়াম তৈরির কাজ থমকে জগৎবল্লভপুরে
মাঠ ঘেরা যাবে না। গ্রামবাসীদের একাংশের এই অনড় দাবিতে বন্ধ হয়ে রয়েছে স্টেডিয়াম তৈরির কাজ। ঘটনাটি হাওড়ার জগৎবল্লভপুর থানার মুন্সিরহাটে।
স্থানীয় শঙ্করহাটি ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের ব্রাহ্মণপাড়ার কোহিনূর ফুটবল মাঠে জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে সাড়ে চার একর সরকারি জমির উপর ২০১০ সালের ৮ ডিসেম্বর শিলান্যাস করা হয়েছিল স্টেডিয়ামটির। পরিকল্পনা ছিল, ওই জমিতে তৈরি হবে হাওড়া জেলা গ্রামীণ ক্রীড়াকেন্দ্র। ফুটবল-ক্রিকেটের পাশাপাশি হবে কবাডির মতো খেলাও। আবাসিক শিবিরের কথাও বলা হয়েছিল সে সময়ে।
জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিক স্তরে বরাদ্দ হয়েছিল প্রায় ২০ লক্ষ টাকা। শিলান্যাসের কিছু দিন পরে কাজ শুরু হয়। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে শেষ হয়ে যায় দোতলা ক্লাব হাউস তৈরির কাজ। খরচ হয় প্রায় সাড়ে ৯ লক্ষ টাকা। কিন্তু সমস্যার শুরু মাঠ ঘেরার কাজ শুরুর পরে। স্টেডিয়াম তৈরির পরে মাঠ ঘেরার কাজ করতে হবে এই দাবিতে কাজ বন্ধ করে দেন গ্রামবাসীদের একাংশ। স্টেডিয়ামের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বন্ধ হয়ে গিয়েছে স্থানীয় থানা লিগ।
কিন্তু কেন এই বাধা? স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই মাঠেই বাঁধা হয় গরু-বাছুর। আশেপাশের জমিতে চাষ হওয়া ধান ও অন্যান্য ফসল আনার সহজ রাস্তা হল ওই মাঠ। গ্রামবাসীদের একাংশের অভিযোগ, ওই মাঠে পাঁচিল দেওয়া হয়ে গেলে তাঁদের যাতায়াত বন্ধ হয়ে যাবে। ওই মাঠেই খেলা করেন স্থানীয় ব্রাহ্মণপাড়া, পাইকপাড়া, ঘনশ্যামবাটী, সন্তোষবাটী, যাদববাটীর কিশোর-যুবকেরা। মাঠ ঘেরা হয়ে গেলে সেটাও বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা তাঁদের। ওই মাঠেই এলাকার কিছু অবস্থাপন্ন চাষি তাঁদের ফসল শুকানোর কাজ করেন। ক্রীড়াকেন্দ্র তৈরি হয়ে গেলে সেই কাজ আর করা যাবে না এই আশঙ্কায় তাঁরা প্রচার শুরু করেন।

তৈরি হয়েছে ক্লাবহাউস। আর এগোয়নি কাজ। —নিজস্ব চিত্র।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্বাস আলি, শেখ সিরাজুলেরা বলেন, “মাঠে স্টেডিয়াম করায় আমাদের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু আগে মাঠ ঘেরা চলবে না। কারণ ঘেরা হয়ে গেলেই মাঠ তালা দিয়ে রাখা হবে।” তাঁদের আশঙ্কা, ওই মাঠেই হয় এলাকার স্কুলগুলির ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। মাঠ ঘেরা হয়ে গেলে সেটা করতেও সমস্যা হবে।
কিন্তু মাঠ ঘেরা না হলে স্টেডিয়াম হবে কী করে? গ্রামবাসীদের একাংশই বলছেন সে কথা। মনসা পণ্ডিত, নুর আলম বলেন, “মাঠ না ঘিরলে স্টেডিয়াম হবে কী করে? যাঁরা এই কথা বলছেন তাঁদের বিষয়টি বুঝিয়ে অবিলম্বে স্টেডিয়ামের কাজ শুরু করা দরকার।” কলকাতার মাঠে দীর্ঘদিন খেলা স্থানীয় ফুটবলার শেখ জাহাঙ্গির বলেন, “ওই মাঠে অবিলম্বে স্টেডিয়াম হোক। তা হলে অনেক ভাল খেলা দেখতে পাবেন এলাকার মানুষ।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, স্থানীয় মানুষের মধ্যে যাঁরা বাধা দিয়েছিলেন তাঁদের অনেকেই পরে মাঠ ঘেরায় সম্মতি দেন। কিন্তু তারপরে প্রশাসনিক স্তরেই উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। যাঁরা এখনও মাঠ ঘেরায় রাজি নন, প্রশাসন চেষ্টা করলেই তাঁদের বোঝাতে পারে।
জগৎবল্লভপুর পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী কর্মাধ্যক্ষ নাদুচরণ বাগ বলেন, “যে মাঠে স্টেডিয়াম তৈরির কথা হয়েছে ওটা সরকারি জমি। হাওড়া জেলার গ্রামীণ ক্রীড়াকেন্দ্র তৈরির জন্য ২০১২ সালের জুলাই মাসে মাঠ ঘেরার কাজ শুরু করা হয়। কিন্তু গ্রামবাসীদের বাধায় কাজ এগোয়নি।”
জগৎবল্লভপুর থানা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক অমর ঘোষের কথায়, “গ্রামবাসীদের বাধায় এখন স্টেডিয়াম তৈরির কাজ বন্ধ। আমরা প্রাথমিক ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্ত ব্যর্থ হয়েছি। প্রকল্পটাই এখন বন্ধ হওয়ার মুখে।” তাঁর আপেক্ষ জেলা প্রশাসন আরও উদ্যোগী হলে হয়ত কাজটা এই ভাবে বন্ধ হয়ে যেত না।” থানা ক্রীড়া সংস্থা সূত্রে খবর, দোতলা ক্লাব হাউসটি তৈরি হলেও সেখানে নেই বিদ্যুৎ সংযোগ, জল। মাঠ ঘেরা না হওয়ায় প্রথম পর্যায়ে বরাদ্দ হওয়া টাকাও খরচ করা যায়নি। ফলে দ্বিতীয় পর্যায়ের টাকাও পাওয়া যাবে না।
তবে জেলা প্রশাসনের একাংশ অবশ্য কাজ বন্ধ হওয়ার কথা স্বীকার করছেন না। বিদায়ী সভাধিপতি মীনা ঘোষ মুখোপাধ্যায় বলেন, “স্টেডিয়াম তৈরির কাজ বন্ধ হয়নি।”
স্টেডিয়াম তৈরির ব্যাপারে হাওড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যকরী সভাপতি দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “সরকারি স্তরে সুপারিশ করে স্টেডিয়াম তৈরির ব্যবস্থা হয়েছিল। কিন্তু তারপর আর কাজ এগোয়নি। আমাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগও করেনি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.