আক্ষেপ তপন দত্তের পরিবারে
মেয়ের চাকরি হয়নি, কেউ খোঁজটুকুও নেয়নি
রোজ সকালে লিকার চা খাওয়ার অভ্যাস ছিল। আজও গ্লাসে চা ভরে স্বামীর ছবির সামনে রাখেন প্রতিমাদেবী।
বৃহস্পতিবার সকালে পশ্চিম শান্তিনগরের বাড়িতে রুটিন সেই কাজটা করার পরে খবরের কাগজে চোখ বুলিয়েই চুপ হয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ পরে বললেন, “আমরাও তো বিচারই চেয়েছিলাম। সরকার চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু কিছুই পেলাম না। কামদুনির পরিবার সাহায্যের প্রতিশ্রুতি ফিরিয়েছে। কিন্তু বিচার পাবে কি?”
২০১১ সালের ৬ মে বালি লেভেল ক্রসিংয়ের সামনে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হয়েছিলেন তৃণমূল নেতা তপন দত্ত। তাঁর পরিবারের তরফে অভিযোগ করা হয়েছিল, এলাকার একটি জলাভূমি ভরাটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করেই তিনি খুন হয়েছেন। ঘটনার মাস খানেক পরে নিহত তপনবাবুর বাড়িতে আসেন রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষদস্তিদার। তপনবাবুর ছোট মেয়ে পূজার হাতে এক লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন। সঙ্গে, বড় মেয়ে প্রিয়ঙ্কাকে পরিবেশ দফতরে একটি চাকরি দেওয়ার আশ্বাস।
কী হল সেই চাকরির? চুপ করে রইলেন প্রতিমাদেবী ও প্রিয়ঙ্কা। শেষে বললেন, “এ সব বলে কী হবে বলুন তো! চাকরি দেওয়ার নামে তো লড়াইটাকে চাপা দিতে চেয়েছিল সরকার। আজ সেটা বুঝতে পারছি।” প্রতিমাদেবীর অভিযোগ, মন্ত্রী যে সময় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেই সময় প্রিয়ঙ্কা স্নাতক স্তরে পড়াশোনা করছিল। বলা হয়েছিল, পড়া শেষ হোক। প্রিয়ঙ্কা বলেন, “এটা ঠিক, পারিবারিক কারণে পড়া শেষ করতে পারিনি। তবে স্নাতক না-হয়েও তো গার্ডেনরিচে নিহত পুলিশকর্মীর মেয়েকে চাকরি দেওয়া হল। আসলে ওঁরা আমাকে চাকরিটা দিতে চাননি।”
মেয়ের সঙ্গে তপন দত্তের স্ত্রী প্রতিমা দত্ত। বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র
ওই প্রতিশ্রুতির পরে কখনও সুদর্শনবাবুর সঙ্গে কথা হয়েছে?
প্রতিমাদেবী জানান, ৬-৭ মাস পরে মন্ত্রী এক বার তাঁদের ডেকে বলেছিলেন, পরিবেশ ভবনে একটি ক্যান্টিন চালু হবে। তাঁর এজেন্সি দেওয়া হবে প্রিয়ঙ্কাকে। ক্যান্টিন দেখভাল করবেন অন্য লোকেরা। প্রিয়ঙ্কা মাসে মাসে কিছু টাকা পাবেন। ওই প্রস্তাব মানেননি প্রতিমাদেবী। পারিবারিক কেব্ল টিভির ব্যবসা আঁকড়েই দিন কাটাচ্ছেন।
কামদুনির ধর্ষিতা কলেজছাত্রীর পরিবার মুখ্যমন্ত্রীর মুখের উপরে যে ভাবে সরকারি চাকরি ও সাহায্যের প্রতিশ্রুতি প্রত্যাখ্যান করেছে, তাকে অভিবাদন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ওরা ঠিকই করেছে। এ সব চাকরি, ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সাময়িক ভাবে স্বজনহারা মানুষের মন ভোলানো হয়। তার পর আর কেউ খবর নেয় না।’’ যে লোকটি এক সময় তৃণমূলেরই বিভিন্ন পদে ছিলেন, তিনি খুন হওয়ার পরেও দলের কোনও নেতা খোঁজ নেননি বলে অভিযোগ দত্ত পরিবারের। “তিন বার দেখা করতে চেয়ে আবেদন করলেও মুখ্যমন্ত্রী দেখা করেননি। আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক, শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সাক্ষাতের সময় দিয়েও দেখা করেননি।”
তপনবাবুর খুনের পরে শুরু হয়েছিল সিআইডি তদন্ত। কিন্তু ক্রমশ তদন্তেও ভাটা পড়তে শুরু করে বলে পরিবারের অভিযোগ। ওঁদের আক্ষেপ, ‘‘যে মুহূর্তে রাজ্যের এক মন্ত্রীর নাম এই ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে গেল, তখন থেকেই সব ধামাচাপা পড়তে শুরু করল।” এখন প্রতিমাদেবী আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। তাঁর দাবি, তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হোক সিবিআই-কে।
কী বলছেন তৃণমূল নেতারা?
পরিবেশমন্ত্রী এখন বিদেশে। তাই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে এলাকার তৃণমূল বিধায়ক ও রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ওনারা আমার সঙ্গে কথা বলেননি। কোন মন্ত্রী কী বলেছেন, তা আমি জানি না। তবে মুখ্যমন্ত্রীর উপর আস্থা হারিয়ে ওঁরা ভুল করেছেন।” হাওড়া জেলা-সভাপতি ও কৃষি বিপণনমন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, “বিচার শেষ হওয়ার আগেই বিচার পাইনি, এটা বলা ঠিক নয়।”
সামনে পঞ্চায়েত নিবার্চন। এক সময়ের তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য প্রতিমাদেবী নির্বাচনেও দাঁড়াতে আগ্রহী হননি। তাঁর কথায়, ‘‘আমি এখন আর কোনও দল করি না। কোনও ক্ষতিপূরণ চাই না। চাই শুধু স্বামীহত্যার বিচার।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.