যানজট এড়াতে কলকাতার সরকারি গাড়ি পরীক্ষার কাজ হবে অন্য জায়গায়। এতে বেলতলার পাবলিক ভেহিক্লস বিভাগ (পিভিডি) ও আলিপুরের আঞ্চলিক পরিবহণ বিভাগ (আরটিও) ঘিরে যানজট কমানো সম্ভব হবে। বিষয়টি নিয়ে মহাকরণের বৈঠকে তৈরি হবে সবিস্তার রূপরেখা।
নিরাপত্তাজনিত কারণে প্রতি বছর যাত্রিবাহী বিভিন্ন গাড়ির যান্ত্রিক পরীক্ষা করা হয়। এর পরে দেওয়া হয় সংশ্লিষ্ট শংসাপত্র (সিএফ)। এর জন্য দৈনিক অন্তত কয়েকশো গাড়ি বেলতলা এবং আলিপুরে জেলাশাসকের অফিস চত্বরে ভিড় করে। ফলে অপরিসর বেলতলা রোড এবং আলিপুরের বেকার রোডে যানজট বেড়ে চলেছে। আলিপুরে ওই চত্বরে পুলিশ ও প্রশাসনের একগুচ্ছ অফিস থাকায় সমস্যা তীব্রতর হচ্ছে। পরিবহণ সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কলকাতায় এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় নথিভুক্ত গাড়ির সিএফ পরীক্ষার জন্য আমরা যথাক্রমে কসবার এবং ঠাকুরপুকুরের সিএসটিসি গ্যারাজের কথা ভেবেছি।” তাঁর মতে, এটা রূপায়িত করতে পারলে ভবিষ্যতে যানজট-জনিত সমস্যা বাড়ার আশঙ্কা কমবে।
২০০৮-এর ৩১ মার্চ পিভিডি-তে নথিভুক্ত গাড়ির সংখ্যা ছিল ৫ লক্ষ ৪৮ হাজার ৪২৩। গত ৩১ মার্চ তা বেড়ে হয়েছে ৮ লক্ষ ১ হাজার ১৮১। ২০০৮-এর ৩১ মার্চ আলিপুরে নথিভুক্ত গাড়ির সংখ্যা ছিল ২ লক্ষ ২৩ হাজার ৫। গত ৩১ মার্চ তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লক্ষ ৩ হাজার ১৬৪। পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, আগের তুলনায় গাড়ির সংখ্যাবৃদ্ধির হার বেড়েছে। ভবিষ্যতে আরও বাড়বে।
কলকাতায় গাড়ির সংখ্যা ও পরিবহণের প্রশাসনিক বিভিন্ন কাজ বাড়তে থাকায় ইতিমধ্যে কসবায় বাইপাস-সংলগ্ন সিএসটিসি-র ডিপোয় পিভিডি-র কিছু কাজ ইতিমধ্যে স্থানান্তরিত হয়েছে। পিভিডি-র ভাইস চেয়ারম্যান সব্যসাচী বাগচী বলেন, “সল্টলেকের সরকারি ডিপোয় শীঘ্রই পিভিডি-র আর একটি বিভাগ তৈরির কথা চলছে। মানিকতলায় সিএসটিসি-র ডিপোতেও পিভিডি-র কিছু কাজ স্থানান্তরিত করার কথা ভাবা হয়েছে।”
প্রয়োজনের তুলনায় পিভিডি-র কর্মী অনেক কম। এই মন্তব্য করে সব্যসাচীবাবু বলেন, “অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে এ কথা জানিয়েছি। লাইসেন্স পুনর্নবীকরণের জন্য অর্থমন্ত্রী সম্প্রতি পিভিডি-তে আসেন। বিষয়টি তিনি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন।” কর্মী কম থাকার কথা স্বীকার করে পরিবহণসচিব বলেন, “আমরা চুক্তিবদ্ধ কর্মী নিয়োগের কথা ভাবছি।”
গাড়ির কর, রেজিস্ট্রেশন, লাইসেন্স, স্মার্ট কার্ড, বিভিন্ন রকম আবেদনপত্র প্রভৃতি খাতে পিভিডি এবং আলিপুরের আয় উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে। ২০১১-১২ অর্থবর্ষে পিভিডি আয় করেছিল ১৬৩ কোটি টাকা। পিভিডি-র এক অফিসার বলেন, “২০১২-১৩-তে তা বেড়ে হয়েছে ২১২ কোটি। একলপ্তে পিভিডি-তে এত আয়বৃদ্ধি এই প্রথম।” আলিপুরে ২০০৮-এর শেষে আয় ছিল ৩৫ কোটি ৩৩ লক্ষ ৮৩ হাজার ১১৮ টাকা। গত ৩১ মার্চ শেষ হওয়া অর্থবর্ষে তা দাঁড়িয়েছে ৬৯ কোটি ৯৪ লক্ষ ১৯ হাজার ১৬২ টাকায়।
রাজ্যে নয়া সরকার ক্ষমতায় আসার পর ঘোষণা করেছিল কলকাতা ও সংলগ্ন অঞ্চলে রাজ্যের বিভিন্ন পরিবহণ নিগমের উদ্বৃত্ত জমির বাণিজ্যিক ব্যবহার হবে। তা এখনও হয়নি। আলাপনবাবুর বক্তব্য, “বিভিন্ন ডিপোর জমির অবস্থা খতিয়ে দেখেছি। বিতর্ক ও প্রশ্ন এড়ানোর চেষ্টায় ভূমি ও ভূমি সংস্কার, আইন এবং অর্থ এই তিন দফতরের সঙ্গে কথাও চলছে। আশা করছি শীঘ্র ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।” |