৩৭ নম্বর রুটের বাসে উঠেছিলেন বেহালার বাসিন্দা বিশ্বনাথ বসু। টিকিট কাটতে গিয়ে বেজায় ফাঁপড়ে পড়লেন তিনি। তাঁর কাছে খুচরো নেই। অন্য দিকে কন্ডাক্টরের দাবি, তাঁর কাছেও খুচরো নেই। অতএব, খুচরোর বদলে তিনি বিশ্বনাথবাবুর হাতে ধরিয়ে দিলেন একটা কুপন। কন্ডাক্টরের বক্তব্য, “পরে যখন এই রুটের বাসে উঠবেন টাকার বদলে কুপন দিয়ে টিকিট কেটে নেবেন।” কিন্তু বিশ্বনাথবাবু তো ৩৭ নম্বর রুটের নিয়মিত যাত্রীই নন। আবার কবে তিনি ৩৭ নম্বর রুটের কোনও বাসে উঠবেন, তার ঠিক নেই। তত দিন এই কুপনের কী হবে? বিশ্বনাথবাবুর আরও বক্তব্য, “এই কুপন তো নোটের মতই। আমাদের দেশে তো রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ছাড়া কারও নোট ছাপানোর ক্ষমতা নেই। তা হলে বাসের মালিকেরা কী ভাবে কুপন ছাপিয়ে বিলি করছেন?”
বিশ্বনাথবাবুর প্রশ্নের জবাব অবশ্য কন্ডাক্টরের কাছে ছিল না। শেষমেশ তাঁর চোখরাঙানির কাছে হার মেনে কুপন পকেটে নিয়েই বাড়ি ফিরতে হয়েছে ৬৬ বছরের বিশ্বনাথবাবুকে।
শুধু বিশ্বনাথবাবু নয়, সম্প্রতি অনেক যাত্রীকেই রাস্তায় বেরিয়ে কুপনের হ্যাপা পোহাতে হচ্ছে। খুচরোর বদলে কন্ডাক্টরেরা যাত্রীদের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন ১, ২ কিংবা ৫ টাকার কুপন। বলে দিচ্ছেন, পরে ওই বাসে উঠে ওই কুপন দেখালে তার বিনিময়ে টিকিট মিলবে। কুপন চালু করার স্বপক্ষে সংশ্লিষ্ট বাস সিন্ডিকেটগুলির যুক্তি, “আমাদের কিছু করার নেই। খুচরোর অভাব। আমরা যাত্রীদের খুচরো দিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারছি না। অগত্যা এই কুপন ব্যবস্থা চালু করতে হয়েছে। এতে কিছুটা হলেও খুচরোর সমস্যার মোকাবিলা করা যাচ্ছে।” বাসমালিকদের দাবি, “বারবার রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে বিষয়টি জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি।”
কলকাতা শহরে খুচরোর অভাব রয়েছে, এমন অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। তাদের পাল্টা দাবি, খুচরোর কোনও অভাব নেই। বাজারেও পর্যাপ্ত পরিমাণে খুচরো রয়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফিসেও খুচরোর জন্য একাধিক ভেন্ডিং মেশিন লাগানো হয়েছে। কিন্তু সেখানে বাসমালিকেরা খুচরো নিতে আসেন না বলে অভিযোগ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের।
কুপন ব্যবস্থা যে বেআইনি, তা অবশ্য মানছে বাসমালিকদের সংগঠন থেকে রাজ্য সরকার সব পক্ষই। বাসমালিকদের সংগঠন বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের নেতা দীপক সরকার বলেন, “সিন্ডিকেট কখনওই কুপন ব্যবস্থাকে অনুমোদন দিতে পারে না। দিচ্ছেও না। কিন্তু আপত্তিও করছে না। কারণ, খুচরোর খুবই সঙ্কট।” একই সুর আর এক বাসমালিক সংগঠন জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেট্সের নেতা তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তিনি বলেন, “আমরা এর দায় নেব না বলে সংশ্লিষ্ট রুটগুলিকে আগেই জানিয়ে দিয়েছি। যদি কেউ করেন, তা হলে তাঁরা নিজের দায়িত্বে করবেন। এখনকার দিনে ওই কুপন জাল করা কোনও ব্যাপারই নয়। এই দায়িত্ব আমরা কী ভাবে নেব!” এ দিকে, কুপন ব্যবস্থা বেআইনি মেনেও স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সরকার কিছু করবে না বলে ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিচ্ছেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। তাঁর কথায়, “বিভিন্ন জায়গায় বাসে কুপন দেওয়া হচ্ছে বলে শুনেছি। এটা আইনত বৈধ নয়। যাত্রীরা যদি এ নিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন তখন আমরা ব্যবস্থা নেব।” |