ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি আর পুবের হাওয়ায় কপাল ফিরল জুন মাসের! সেই সঙ্গে বাঙালিরও।
দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি নেমেছে। আর পুবালি হাওয়ার ডাকে বঙ্গোপসাগর থেকে নদীতে ঢুকতে শুরু করেছে ঝাঁক-ঝাঁক ইলিশ। জামাইষষ্ঠীতে বাঙালির কাছে এর চেয়ে সুসংবাদ আর কী-ই বা হতে পারে! ডায়মন্ড হারবারের এক আড়তদার জানিয়েছেন, দু’দিনে ২১ হাজার কেজি ইলিশ নিয়ে ফিরেছে ৩৮টা ট্রলার। দু-এক দিনের মধ্যেই তা বাজারে আসছে।
মৎস্যজীবীরা বলছেন, কয়েক দিন ট্রলার নিয়ে সমুদ্রের একটু ভেতরে গেলেই ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ উঠছে। লম্বাটে নয়, বেশ গোলগাল, চওড়া পেট! গত কয়েক বছরে জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে সাগরে এত ইলিশ ধরা পড়েনি। পুবালি হাওয়া আর ঝিরঝিরে বৃষ্টিই তাঁদের কপাল ফিরিয়েছে বলে দাবি মৎস্যজীবীদের। এবং এই আবহাওয়ার কারিগর বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপ।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের মৎস্য-বিশেষজ্ঞ সুমিত হোমচৌধুরী বলেন, “বর্ষায় এই পুবালি হাওয়াই ইলিশের কাছে মিলনের বার্তা পাঠায়। এ হাওয়া বইলেই ঝাঁকের ইলিশ ভিড় জমায় মোহনায়। তার পরে সার বেঁধে ঢোকে নদীতে। নদীর জলে ডিম পেড়ে আবার ফিরে যায় সমুদ্রে।” |
জালে ইলিশ। বৃহস্পতিবার ডায়মন্ড হারবারে। —নিজস্ব চিত্র |
সুমিতবাবুর ব্যাখ্যা, “যে বার জুন মাসে এই পুবালি হাওয়া থাকে না, সে বার ইলিশের বাজার মন্দা হয়। কারণ, এই সময় নদীতে ঢুকে ডিম পাড়তে না পারলে ইলিশের জীবনচক্র ব্যাহত হয়।” মৎস্য বিজ্ঞানীরা বলছেন, পুবের হাওয়া পরে এলে ইলিশের বড় একটা অংশ আর নদীতে ঢোকে না। যেগুলো ঢোকে তাদের অনেক ডিম নিষিক্ত হয় না। ফলে ইলিশের জোগান কমে যায়। গত কয়েক বছর এটাই হয়েছে।
জোগান বাড়ায় ইলিশ ব্যবসায়ীরা খুশি। ডায়মন্ড হারবারে আড়ত শ্রীমন্ত চক্রবর্তীর। শ্রীমন্তবাবু জানাচ্ছেন, এক মাস ধরেই পুবালি হাওয়াটা বইছে। এ বার ট্রলার ভরে ইলিশ আসছে। গত কয়েক বছর ইলিশ আসতে আসতে জুলাইয়ের অর্ধেকটাই পেরিয়ে যাচ্ছিল। সে ইলিশও লম্বাটে। শ্রীমন্তবাবু জানান, এ বার বর্ষার আগে ভাল বৃষ্টি হওয়ায় মাছের পেট চওড়া হচ্ছে।
আবহাওয়া দফতরের গত ১০ বছরের পরিসংখ্যান বলছে, দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলোয় বর্ষা স্বাভাবিক সময়ের কাছেপিঠে ঢুকলেও, গোটা জুন মাস ঠকিয়েছে। এ বার আর তা হয়নি। ৮ জুন নির্দিষ্ট দিনে বর্ষা যেমন দক্ষিণবঙ্গে ঢুকেছে, তেমনই গত ছয় দিন ধরে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় কোথাও ভারী, কোথাও মাঝারি বৃষ্টি হচ্ছে। বর্ষার দাক্ষিণ্য থেকে বাদ যাচ্ছে না উত্তরবঙ্গও।
আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় হতে কয়েকটি শর্ত লাগে। প্রধান শর্তটি হল পরিমণ্ডলে থাকতে হবে কোনও নিম্নচাপ, নিদেনপক্ষে একটি ঘূর্ণাবর্ত। ২০১১ ছাড়া গত ১০ বছর এই শর্তটি পূরণ হয়নি। ভারী বৃষ্টির জন্য তাই জুলাইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে দক্ষিণবঙ্গকে। গত বছর পরিস্থিতি ছিল আরও ঘোরালো। জুনে বৃষ্টির ঘাটতি ছিল প্রায় ৪৩ শতাংশ।
এই ইলিশ-বান্ধব আবহাওয়া কত দিন থাকতে পারে?
আলিপুর আবাহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপটির অভিমুখ ওড়িশা উপকূলের দিকে। ওই নিম্নচাপ কবে স্থলভূমিতে ঢুকবে তা স্পষ্ট নয়। তবে যত দিন তা সমুদ্রে থাকবে, পুবালি হাওয়া বইবে। দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হবে। উপকূলবর্তী এলাকায় হবে ভারী থেকে মাঝারি বৃষ্টি।
কিন্তু নিম্নচাপটি স্থলভূমিতে ঢুকে গেলে তা দুর্বল হয়ে পড়বে। কমবে পুবালি হাওয়ার তীব্রতা। আবার ফিরে আসতে পারে অস্বস্তিকর আবহাওয়া। পুবালি হাওয়া আর বৃষ্টির জন্য তখন অপেক্ষা করতে হবে পরবর্তী নিম্নচাপের উপরে।
|