সম্পত্তি লিজ দিয়ে বিপাকে পুরসভা
৪ নম্বর ওয়ার্ড। ১৩ বিঘা জমির উপরে পুরসভা ১ কোটি ১৩ লক্ষ টাকা খরচ করে গড়ে তোলে একটি ‘মেডিসিন হোলসেল মার্কেট’। মাত্র ২০ লক্ষ ৫০ হাজার টাকায় পুরসভা তাকে ৩৩ বছরের লিজে কলকাতার এক ব্যবসায়ীর হাতে তুলে দেয়। যদিও তিন বছরের মধ্যেই হাল ছেড়ে সেই ব্যবসায়ী চম্পট দেন বলে অভিযোগ। অভিভাবকেরাই এখন চাঁদা তুলে চালাচ্ছেন সেই স্কুল।
৬ নম্বর ওয়ার্ড। ৪৯ লক্ষ ২৭ হাজার টাকায় পুরসভার গড়ে তুলেছিল একটি হোলসেল মাছ বাজার। তাকে লিজ দেওয়া হয়েছে মাত্র ৮ লক্ষ ১২ হাজার টাকায়। এই জায়গাটি একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলকে লিজ দেওয়া হয়েছিল। সেখানে ছাত্রাবাস গড়ে তোলা হয়েছিল। অনেকদিন ধরে সেটি বন্ধ। ১৫ নম্বর ওয়ার্ড। এলাকায় ‘বিয়ে বাড়ি’ বলে পরিচিত পুরসভার একটি ডরমিটরি। বর্তমানে এর মূল্য কোটি টাকার কাছাকাছি হলেও মাত্র ১৮ লক্ষ টাকায় একটি নার্সিংহোমকে লিজ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। জনগণের টাকায় তৈরি ওই সরকারি ভবন এখন ব্যবহৃত হচ্ছে ব্যক্তিগত ব্যবসার কাজে। ওই ভবন নিয়ে অভিযোগ, এলাকার এক প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা মোটা টাকার বিনিময়ে ওই নার্সিংহোমের মালিককে লিজ পাইয়ে দিয়েছেন।
সিউড়ি পুরসভার অবস্থা এখন কতকটা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার উপেন চরিত্রের মতো। পুরসভার নিজস্ব দফতরটি ছাড়া একটি বড় অংশের সম্পত্তিই কার্যত লিজের নামে ‘বেদখল’ হয়ে গিয়েছে। ‘বিক্রি’ হয়ে গিয়েছে। এমনকী এমন অভিযোগও উঠছে, সম্পত্তিগুলি পুরসভার কাছ থেকে জলের দরে নিয়ে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সেগুলিকে নিজেদেরই সম্পত্তি বলে দেখিয়ে মোটা টাকার কিছু ব্যাঙ্ক ঋণ নিয়ে কেটে পড়েছেন। ফলে রোজগারের রাস্তা অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছে পুরসভা।
পরিস্থিতির কথা মেনে নিলেও পুরসভার তৃণমূল পুরপ্রধান উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় এ নিয়ে নিজের অসহায়তার কথা বলে কার্যত হাত তুলে নিয়েছেন। এ দিকে বেশির ভাগ কাউন্সিলরই এ নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। তবে ইয়াসিন আখতারের মতো দু’ এক জন কাউন্সিলর বোর্ড মিটিংয়ে নিজেদের আপত্তির কথা জানিয়েছিলেন। এ দিকে কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে খোলাখুলি ভোট দেওয়ার বিনিময়ে কার্যত ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন পুরপ্রধান নিজেই। তাঁর কথায়, “পুরভোটে কাউন্সিলরেরা ৮-১০ লক্ষ টাকা খরচ করে জেতেন। তার মানে প্রতিটি ওয়ার্ডের সিংহভাগ মানুষকে হয় নগদ টাকা কিংবা দামী জিনিস উপহার দিতে হয়। ভোটে জিতে কাউন্সিলর তো টাকা কামাবেই।” বর্তমান পুরপ্রধান বিষয়টি আগের কংগ্রেস পরিচালিত বোর্ডের আমলের দাবি করে নিজের দায় এড়িয়ে গিয়েছেন। যদিও গত বোর্ডের কংগ্রেস পুরপ্রধান তপন সুকুল বলছেন, “সব কাউন্সিলরের মতামত নিয়েই সব কিছু করা হয়েছে। এই ব্যাপারে ভাল বলতে পারবেন তত্‌কালীন কংগ্রেস ও বর্তমান বোর্ডের তৃণমূল উপ-পুরপ্রধান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়।” সেই উজ্জ্বলবাবুর আবার দাবি, সরকারি ‘ভ্যালুয়ার’ দিয়ে হিসেব করিয়ে পুরসভার ওই সব সম্পত্তি লিজ দেওয়া হয়েছিল। তবে কয়েকটি ক্ষেত্রে লিজ দেওয়ার ক্ষেত্রে গাফিলতির কথা মেনে নিয়ে তিনি বলছেন, “স্কুলের জায়গা ও বাসস্ট্যান্ডের ঘর নিয়ে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। এটার বিহিত করে ছাড়ব।” এই পরিস্থিতিতে পুরভবন ছাড়া পুরসভার একছটাও জায়গা নেই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.