সিপিএম পরিবারে কংগ্রেস প্রার্থী
বৌমার সঙ্গে সম্পর্ক নেই, ঘোষণা জোনাল সম্পাদকের
থাবার্তা? বন্ধ। মুখ দেখাদেখি? নৈব নৈব চ।
এক বাড়ির রান্না অন্য বাড়িতে যাবে না। অসুখ বিসুখ হলে কেউ উঁকিও মারবেন না। অর্থাত্‌ দুই পরিবারের মধ্যে চলবে না কোনও রকমের লেনদেনই।
নিজে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে সিপিএমের সঙ্গে যুক্ত। পরিবারে কেউ কোনও দিন সিপিএমের বাইরে অন্য কাউকে ভোটও দেননি। সেই পরিবারের বৌমা কিনা পঞ্চায়েত ভোটে কংগ্রেসের প্রার্থী? এলাকায় তাই লিফলেট বিলিয়ে ছেলের পরিবারের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা ঘোষণা করলেন বিড়ম্বিত বাবা তথা বীরভূমের রামপুরহাট-১ ব্লকের সিপিএম জোনাল সম্পাদক!
গোলাম কুদ্দুস নামে ওই জোনাল সম্পাদকের যুক্তি, “ছেলে-বৌমার এই সিদ্ধান্তকে আমি নীতিগত ভাবে সমর্থন করতে পারিনি। আমার পরিবারের অংশ হয়ে কেউ কংগ্রেসে ভিড়বে, তা হতে পারে না। তাই তাঁদের পরিবারের সঙ্গে কোনও রকম সম্পর্ক রাখব না বলেই ঠিক করেছি।” কিন্তু এলাকার লোকজনের তো দাবি, বহু আগেই ছেলে-বৌমা আপনার পরিবারের থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছে? সে কথা স্বীকার করে গোলাম কুদ্দুস বলেন, “পারিবারিক কারণে তিন বছর আগেই আমার মেজ ছেলে স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা থাকেন। কিন্তু সে কথা এলাকার অনেকেই জানেন না। বৌমা প্রার্থী হওয়ার পরে অনেকেই আমার কাছে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তাই ছেলের পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের কথা জনসাধারণকে জানাতেই এই লিফলেট বিলি।”
পঞ্চায়েত ভোটকে ঘিরে এমন গৃহযুদ্ধই লেগেছে রামপুরহাট থানার দখলবাটি গ্রামে। যেখানে রামপুরহাট ১ পঞ্চায়েত সমিতির একটি আসনে কংগ্রেসের হয়ে প্রার্থী হয়েছেন ওই জোনাল সম্পাদকের পুত্রবধূ শাহিনা সুলতানা। আলাদা হয়ে গেলেও শাহিনারা একই বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যে অন্য একটি জায়গায় ঘর করে থাকেন। তাঁর স্বামী সিরাজুল ইসলাম এলাকায় ‘সিটু মাস্টার’ নামে পরিচিত। বাংলায় স্নাতকোত্তর সিরাজুল আর ইতিহাসে স্নাতক শাহিনা এলাকায় টিউশন করেই নিজেদের সংসার চালান। সিরাজুলের দাবি, “এ বারের পঞ্চায়েত ভোটে সিপিএম আমার স্ত্রীকে গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রার্থী করতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি চেয়েছিলাম স্ত্রী পঞ্চায়েত সমিতিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করুক। পরে সিপিএমের থেকে তেমন সাড়া পাইনি। তাই গ্রামের রাজনীতির স্বার্থে কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত হতে হল।” শেষ পর্যন্ত পঞ্চায়েত সমিতির ওই মহিলা সংরক্ষিত আসনে কংগ্রেস মনোনীত প্রার্থী হয়ে গেলেন তাঁর স্ত্রী। ছেলের দুঃখ, “এখন বাবা যদি শুধু মাত্র রাজনৈতিক কারণে নিজের ছেলে-বৌমার সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করেন, তাহলে তার থেকে দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না!”
বৌমাকে প্রার্থী করা নিয়ে ছেলের দাবি সম্পর্কে গোলাম কুদ্দুসের আবার প্রতিক্রিয়া, “দলের অন্দরে একবার বৌমার নাম উঠেছিল বটে। কিন্তু ওই পর্যন্তই। তারপরে দল যেটা ঠিক মনে করেছে, সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি আদর্শগত ভাবে দলের সিদ্ধান্তের পাশেই আছি।” ছেলে-বৌমার সঙ্গে স্বামীর এই লড়াই রোখার শেষ চেষ্টা করেছিলেন সিরাজুলের মা রেকশোনা বিবি। চেষ্টা করেছিলেন ছেলে-বৌমাকে বোঝাতে। বরফ গলেনি। তাঁর কথায়, “ছেলে জেদ ধরে বসে ছিল। আমি ওকে অনেক করে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু ও শোনেনি।” তাই স্বামীর ওই সিদ্ধান্তের প্রতি পূর্ণ সমর্থন রয়েছে রেকশোনা বিবিরও।
এ দিকে জোনাল সম্পাদকের ঘোষণা, বৌমার আসনটিতে তিনি দলের প্রার্থীকেই সমর্থন করবেন। এমনকী তাঁকে জেতানোর জন্য বাড়ি বাড়ি ঘুরে জোরদার প্রচারও করবেন। কিন্তু রাজনৈতিক বিরোধিতার কারণে এ ভাবে ছেলের পরিবারকে কার্যত বয়কট করা, এটা কেমন গণতান্ত্রিক কাজ? ছেলে-বৌমা ভিন্ন আদর্শকে সমর্থন করেন বলে বাবার এমন সিদ্ধান্তকে কী ভাবে দেখছেন? সিপিএমের জেলা সম্পাদক দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায়ের স্বীকারোক্তি, “গোলাম কুদ্দুসের ওই সিদ্ধান্ত ব্যক্তিগত। তবে তাঁর ওই সিদ্ধান্তের প্রতি পার্টির পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।” গোটা ঘটনায় দল কোনও ভাবেই জড়িত নয় বলেও দিলীপবাবুর দাবি। যদিও এলাকার কংগ্রেস নেতৃত্বের দাবি, দলের কাছে নিজের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমাণ করতেই ওই জোনাল সম্পাদক ছেলে-বৌমাকে কার্যত ‘ত্যাজ্য’ করলেন। আর শাহিনা? বাপ-ছেলের এই লড়াইয়ে তাঁর কী অবস্থা? শাহিনা কিন্তু বলছেন, “শ্বশুরমশাই এমন সিদ্ধান্ত নিলে আমাদেরই বা কি করার আছে। এতদিন জীবনের যুদ্ধে স্বামীর সঙ্গে দাঁতে দাঁত চেপে লড়েছি। এ বার ভোটের লড়াইয়েও আমরা একসঙ্গে আছি। আশা করছি, জয়ী হব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.