রাত জেগে প্রায় ৩০ জন বাসিন্দা এলাকা পাহারা দিচ্ছেন। কাটোয়ার অগ্রদ্বীপের ভাঙনের জেরে গত এক সপ্তাহে তলিয়ে গিয়েছে বেশ কয়েকটি বাড়ি। শুধু তাই নয়, ভাগীরথীর ভাঙনের জন্য নদী যত গ্রামের দিকে এগিয়ে আসার সম্ভাবনা বাড়াচ্ছে, তত এলাকাবাসীরা অন্যত্র আশ্রয়ের খোঁজ করছেন।
রাজ্যের ভাঙনের মানচিত্রে অগ্রদ্বীপ অতি পরিচিত নাম। ভাঙনের ফলে বহু গ্রাম তো বটেই, তলিয়ে গিয়েছে অগ্রদ্বীপ-বেথুয়াডহরি রাজ্য সড়ক। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে নদিয়ার সঙ্গে। রাজ্য সড়ক তলিয়ে যাওয়ার ফলে অগ্রদ্বীপের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিগত বাম সরকার ‘জিও টেক্সটাইল’ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ভাঙন রোধের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সফল হয়নি সেই প্রচেষ্টা।
কয়েক বছর ভাঙন বন্ধ থাকার পর গত বছর থেকে ফের শুরু হয়েছে ভাগীরথীর গ্রাসে গ্রামের পর গ্রাম তলিয়ে যাওয়ার খেলা। গত বছর বাঁশের খাঁচা ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হয়েছিল। গ্রামবাসীরা জানান, সেই খাঁচা তলিয়ে গিয়েছে। এ বছর ভাগীরথীর জল বাড়ার জন্য আবার শুরু হয়েছে নতুন করে ভাঙন। বৃহস্পতিবার অগ্রদ্বীপের ঘোষপাড়ায় গিয়ে দেখা গেল, বাঁধ প্রায় ভাঙনের মুখে। কয়েক বছর আগে ভাঙন রোধে বোল্ডার পিচিং করা হয়েছিল। কিন্তু তা গ্রাস করেছে ভাগীরথী। |
ওই বাঁধের উপরেই বাড়ি ছিল ইচ্ছাময়ী দেবীর। ভাগীরথী সেই বাড়ি গিলে নিয়েছে। এখন পড়শিদের সাহায্যে মা-ছেলের পেট চলছে কোনও রকমে। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, “আমার বাড়ি ভাগীরথীতে তলিয়ে গিয়েছে। পলিথিন টাঙিয়ে রাত কাটাচ্ছি। পড়শিরা খাবার জোগাচ্ছে।” পাশেই বিমান ঘোষের বাড়ি। তিনি পাকা দেওয়াল ভেঙে ইট সরিয়ে রাখছেন। তাঁর কথায়, “ভাগীরথী আমার দুয়ারে ধাক্কা মারছে। যে কোনও সময়ে গিলে নেবে। সে কারণে ঘরের দেওয়াল ভেঙে ইটগুলি সরিয়ে রাখছি।” আর এক প্রৌঢ়া মিনতিদেবীর কথায়, “আমাদের রাতে ঘুম চলে গিয়েছে। কানের ভিতর যেন সব সময় ঝুপঝাপ আওয়াজ।” স্থানীয়দের দাবি, প্রায় ১২ হাজার লোক এই গ্রামে বাস করেন। ওই এলাকার বাসিন্দা কৃষ্ণ ঘোষ কিংবা রাধেশ্যাম ঘোষেরা বলেন, “গভীর রাতে বিপদ যাতে বাড়িতে হানা দিতে না পারে তার জন্য প্রায় ৩০ জন মিলে পালা করে রাত পাহারা দিচ্ছি। বিপদের গন্ধ পেলেই যেন বাসিন্দাদের সতর্ক করে দিতে পারা যায়।” বৃহস্পতিবার কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় এলাকার পরিস্থিতি দেখতে যান। তিনি বলেন, “সেচ কর্তাদের এলাকা ঘুরে গিয়ে জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন রোধের জন্য কাজ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।” দুপুরে দামোদর ক্যানাল ডিভিশনের বর্ধমান বিভাগের কর্তারা অগ্রদ্বীপের বর্তমান ভাঙন পরিস্থিতি দেখেছেন। ওই ডিভিশনের সুপারিটেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার ধীরাজকুমার ধর বলেন, “অগ্রদ্বীপ গিয়ে দেখেছি ভয়াবহ পরিস্থিতি। বাড়ি ভাগীরথীতে তলিয়ে গিয়েছে বলে জানি। জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন রোধের কাজ করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। বিধায়কের সঙ্গেও এ ব্যাপারে আমাদের কথা হয়েছে।”
|