ভোটে নতুন মুখ তৃণমূলের
প্রতিবন্ধীদের জন্য অনেক কিছু করার স্বপ্ন সাকারে প্রার্থী
বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষার পরে, উঠোনের ভিড়টা চঞ্চল হয়ে উঠেছে। ক্রাচে ভর দিয়ে বেরিয়ে এলেন মালতি বৈদ্য। ভিড় থেকে এক যুবক জানালেন, অনেকটা দূরের বস্তিতে প্রচারে যেতে হবে। ক্রাচে ভর দিয়ে এতটা পথ যেতে কষ্ট হবে না? মৃদু হেসে চার চাকার বাইক দেখিয়ে বললেন, “যতটা সম্ভব বাইক চালিয়ে যাব। বাকিটা পথ ক্রাচে ভর দিয়ে হাঁটব। বাইকেই বেঁধে নিই ক্রাচ দুটো। কোনও সমস্যা হবে না।”
প্রতিবন্ধীদের জন্য তৈরি চারচাকার বাইকটি, ২০০৯ সালে রাজীব গাঁধী সদ্ভাবনা পুরস্কারে পান জলপাইগুড়ির মুন্ডা বস্তির মালতি বৈদ্য। বছর দুয়েক আগে এলাকার রাস্তা পাকার দাবিতে বাসিন্দাদের নিয়ে ক্রাচে ভর দিয়েই অরবিন্দ পঞ্চায়েতের দফতরে বিক্ষোভ দেখান। এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগের দাবিতে, বাসিন্দাদের সই সংগ্রহ করে চিঠি লিখেছিলেন রাজ্য বিদ্যুৎ ভবনে। সেই সময় থেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নজরে পড়েন তিনি। তার ভিত্তিতে এ বার পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বেশ কিছু দলের পক্ষ থেকে তাঁকে ভোটে দাঁড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। মঙ্গলবার বিকেল প্রচারে বের হওয়ার সময় বলেন, “পাড়াপড়শি মিলে বলায় তৃণমূলের হয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছি। এই অভিজ্ঞতা আগে ছিল না। আরও একটা লড়াই শুরু হল।”
মালতি বৈদ্য।
লড়াই আসলে শুরু হয়ে গিয়েছিল জন্মের তিন বছর পর। ডান দিকের কোমর থেকে নীচের অংশ পুরোটাই অসাড় হয়ে যায় টাইফয়েডে। লাঠির সাহায্যে বড়দিঘি বাগান থেকে ৪ কিমি হেঁটে লাটাগুড়িতে স্কুলে যাতায়াত। উচ্চ মাধ্যমিকের পরে পড়া ছাড়তে হয়। জলপাইগুড়ি শহর সংলগ্ন একটি প্রতিবন্ধী স্কুলে চাকরি নিয়ে ডুয়ার্স ছেড়ে যান। তাঁর ইচ্ছে, প্রতিবন্ধীদের নিয়ে একটা নিজের সংস্থা তৈরির। তাই ছেড়ে দিলেন স্কুলে চাকরি। এই এসাকার বেশ কয়েক জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে খুঁজে নিয়ে তৈরি করেন সমবায় সমিতি।
ডিএম দফতর, বিডিও অফিস, বিদ্যুৎ পর্ষদে গিয়ে কয়েক দফায় স্মারকলিপি দিয়ে প্রতিবন্ধীদের মাধ্যম্যে বিদ্যুৎ বিল বিলির দাবি করতে শুরু করেন মালতিদেবী এবং তাঁর সঙ্গীরা। অবশেষে ১৯৯২ সালে সেই দায়িত্ব পায় প্রতিবন্ধী সমিতি। এর পরে বাইক থেকে পড়ে গিয়ে পর পর দুটি দুর্ঘটনা। এক বার মস্তিস্কে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। আর এক বার কোমর ভেঙে বিছানায় শুয়ে ছিলেন কয়েক মাস। সুস্থ হয়ে এঠার পরে তৈরি করেছেন, হ্যান্ডিক্যাপড পিপলস রাইট গ্রুপ। শহর সংলগ্ন পাদ্রি কুটিরের শিক্ষক প্রশান্ত খাঁ-র সঙ্গে বিয়ের পর থেকে মুণ্ডাবস্তিতে পাকাপাকি থাকা শুরু। এলাকার প্রতিবন্ধীদের নিয়ে তৈরি করেছেন ৬টি স্বনির্ভর গোষ্ঠী। সংস্থা, গোষ্ঠী মিলিয়ে প্রতি মাসে ১০০ জন প্রতিবন্ধীর উপার্জনের ব্যবস্থা হয়।
জলপাইগুড়ি শহর এবং লাগোয়া এলাকার প্রায় ৪২ হাজার গ্রাহককে বিদ্যুতের বিল বিলি করার দায়িত্ব মালতিদেবীর। প্রতি দিন সকালে রান্না সেরে স্বামী-ছেলেকে খাইয়ে, দশটার মধ্যে সমাজপাড়ায় পর্ষদের অফিসে পৌঁছতে হয়। বর্তমানে গ্রাহকদের বাড়ি থেকে বিদ্যুতের মিটার রিডিং নেওয়ার কাজও করেন মালতিদেবীর গোষ্ঠীর প্রতিবন্ধীরা। বিকেলে কাজ শেষ করার পরে, বাড়ি ফিরতে রাত ৯টা। এত ব্যস্ততার মধ্যে প্রচার করবেন কখন? “সকলের কথাতে ভোটে দাঁড়িয়েছি, জেতা-হারার দায়িত্ব ওঁদের ওপরেই” বললেন মালতিদেবী। ভোটে দাঁড়ালেন কেন? “প্রথমে দাঁড়াতে চাইনি। পরে বুঝলাম জিতে গেলে প্রতিবন্ধী এবং মহিলাদের জন্য কিছু করা যাবে, সেটা ভেবেই রাজি হয়ে গেলাম।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.