|
|
|
|
পদমর্যাদার বিন্যাস ভাঙল ভোটের ডিউটি
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঝাড়গ্রাম |
কর্মক্ষেত্রের চেনা বিন্যাসটাই বদলে গেল ভোটের ডিউটিতে।
ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজের অর্থনীতির অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর দেবাশিস সরকারের ফোর্থ পোলিং অফিসারের ডিউটি এসেছে। কলেজের অঙ্কের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর শশধর মান্নার প্রিসাইডিং অফিসারের ডিউটি এসেছে। আবার এই কলেজের চতুর্থ শ্রেণির তিন জন কর্মী—বাগানের মালি শশীভূষণ মাহাতো ও সন্তোষ মাহাতো এবং সাফাই কর্মী গোপাল মুখির প্রিসাইডিং অফিসারের ডিউটি এসেছে। রাজ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিমাইচাঁদ মাসান্ত বলেন, “পদমর্যাদা অনুযায়ী অ্যাসোসিয়েট প্রফেসরদের মাইক্রো-অবজার্ভার বা অবজার্ভার হওয়ার কথা। কী ভাবে এটা হল বোধগম্য হচ্ছে না। এক জন বরিষ্ঠ অধ্যাপককে ভোটারদের আঙুলে কালি লাগানোর ডিউটি দেওয়া হয়েছে। অন্য জনকে বুথের দায়িত্বে পাঠানো হচ্ছে। এটা কখনই মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। জেলা প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।”
শুধু এই কলেজে নয়, ভুলভাল চিঠি পৌঁছেছে জঙ্গলমহলের আরও কিছু সরকারি দফতরে।
ঝাড়গ্রামের সহ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) দীনেশকুমার পাল আগেই ঝাড়গ্রাম মহকুমার ৮টি জেলা পরিষদ আসনের অ্যাসিস্ট্যান্ট পঞ্চায়েত রির্টানিং অফিসারের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। তিনিও প্রিসাইডিং অফিসারের ডিউটি-চিঠি পেয়েছেন। দীনেশবাবু বলেন, “ভুল কোথাও একটা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দফতরকে বিষয়টি জানিয়েছি।” দীনেশবাবুর অফিসের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী পূর্ণচন্দ্র সরেনকে ফাস্ট পোলিং অফিসারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পূর্ণচন্দ্রবাবু বলেন, “ফাস্ট পোলিং অফিসারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়। ফোর্থ পোলিং অফিসারের দায়িত্ব চেয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি।”
পঞ্চায়েত ভোটের কাজে সচরাচর মহিলাদের ভোট কর্মীর ডিউটি দিয়ে বুথে পাঠানো হয় না। কিন্তু মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের আপার ডিভিশন ক্লার্ক ভগবতী বসাক-এর প্রিসাইডিং অফিসারের ডিউটি এসেছে। দু’বছর আগে বদলি হয়ে যাওয়া মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের এক কর্মীর নামেও ভোটের ডিউটি এসেছে। ওই দফতরেরই লোকরঞ্জন শাখার বাদ্যযন্ত্রী লক্ষ্মীকান্ত হেমব্রম গত বছর সেপ্টেম্বরে মারা যান। তাঁর নামেও থার্ড পোলিং অফিসারের ডিউটি এসেছে।
ঝাড়গ্রাম ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের (বিএলআরও) চতুর্থ শ্রেণির কর্মী ডমন মাইতির ফাস্ট পোলিং অফিসারের ডিউটি এসেছে। ঝাড়গ্রামের কুমুদকুমারী ইনস্টিটিউশনের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী গৌতম ধবলদেব স্কুলে ঘণ্টা বাজান। স্কুলের ফাইমরমাশ কাজ করেন। প্রিসাইডিং অফিসারের ডিউটি পেয়ে তিনি হতবাক। আরও বিস্মিত স্কুলের শিক্ষকেরা। স্কুলের ২২ জন সহ-শিক্ষককে থার্ড পোলিং অফিসারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গৌতমবাবু বলেন, “আমি কোনও মতে নিজের নাম লিখতে পারি। আমার পক্ষে এই দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়।” প্রধান শিক্ষক অনুপকুমার দে বলেন, “শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য যথাসময়ে প্রশাসনের কাছে জমা দেওয়া সত্ত্বেও এমন হাস্যকর ভুল হয় কী করে?”
পশ্চিম মেদিনীপুরের ওসি (ইলেকশন) বিশ্বরঞ্জন মুখোপাধ্যায় বলেন, “অসম্পূর্ণ তথ্য পাঠানোর ফলে কিছু ক্ষেত্রে এমন হয়েছে।” তা হলে বদলি হয়ে যাওয়া কর্মী অথবা মৃত কর্মীর তথ্যও কী সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে পাঠানো হয়েছিল? জবাব মেলেনি। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে যে সব ত্রুটি নজরে এসেছে, সেগুলি সংশোধন করার কাজ চলছে। কিন্তু গাফিলতি কার তা জানা যায়নি। |
|
|
|
|
|