|
|
|
|
|
পশ্চিমে প্রায় ৩০০ আসনে লড়াই |
বিক্ষুব্ধ নির্দলরাই তৃণমূলের ভাবনা
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
|
এই ক’দিন আগেও যাঁরা প্রতিবেশীদের বলেছেন, ‘ভোট আসছে। এ বার দেখবেন। প্রার্থী হচ্ছি। ভোটটা কিন্তু জোড়াফুলেই দিতে হবে।” গিয়েছেন তৃণমূলের মিটিং- মিছিলে। প্রতীক না- পেয়ে তাঁরাই রাতারাতি জার্সি বদল করে নির্দল প্রার্থী হয়ে যাওয়ায় বিড়ম্বনায় তৃণমূল নেতৃত্ব। তাঁরা না- পারছেন এই ‘বিক্ষুব্ধ’দের দল থেকে বের করে দিতে। আবার না- পারছেন পাশে দাঁড়াতে। এককথায়, ‘বিক্ষুব্ধ’ প্রার্থীরাই যেন পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আসলে এই প্রার্থীদের সংখ্যাটা তো কম নয়, সবমিলিয়ে প্রায় তিনশোর কাছাকাছি। ফলে, তড়িঘড়ি এঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাও নিতে পারছেন না নেতৃত্ব।
প্রতীক না পেয়ে দলের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হওয়ায় মন খারাপ ‘বিক্ষুব্ধ’দেরও। মেদিনীপুর সদর পঞ্চায়েত সমিতির অন্তর্গত চাঁদড়ার একটি আসনে প্রার্থী হয়েছেন নয়ন দে। এলাকায় তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী হিসেবে পরিচিতি রয়েছে। তবে এ বার তিনি নির্দল প্রার্থী। এই আসনে দলের প্রতীক পেয়েছেন সোমনাথ দে। নয়নবাবু বলেন, “সেই কবে থেকে দলটা করছি। দুর্দিনেও দল ছেড়ে যাইনি। একদিকে, মাওবাদীদের উৎপাত, অন্যদিকে সিপিএমের সশস্ত্র বাহিনীর তাণ্ডব। তাও মাটি কামড়ে পড়ে থেকেছি। প্রতীক পাব আশাতেই মনোনয়ন জমা দিয়েছিলাম।” তাই বলে দলের বিরুদ্ধে প্রার্থী? নয়নবাবুর বক্তব্য, “খারাপ লাগছে। তবে যে দলকে এত ভালবাসি, সেই দলের কাছে এটা আশা করিনি। মানুষ পাশে আছে। এটাই ভরসা।”
একই পরিস্থিতি কঙ্কাবতীর সাধন খিলার। এলাকায় তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী হিসেবে পরিচিত সাধুনবাবু। তবে নির্বাচনে লড়ছেন নির্দল প্রার্থী হিসেবে। তাঁকে প্রতীক না দিয়ে দল এই আসনে প্রার্থী করেছে পলাশ হ্যান্ডেলকে। সাধনবাবু বলছিলেন, “দুর্দিনে দলের হয়ে লড়েছি। এই লড়াইতেও আমি জিতব।” শুধু মেদিনীপুর সদর পঞ্চায়েত সমিতির এলাকাই নয়, গড়বেতা-কেশপুর-নারায়ণগড় থেকে ঝাড়গ্রাম-জামবনি-শালবনি, জেলার অধিকাংশ পঞ্চায়েত সমিতির এলাকাতেই এই পরিস্থিতি। দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধেই লড়ছেন তৃণমূলের ‘বিক্ষুব্ধ’রা। সংখ্যাটা যেহেতু তিনশোর কাছাকাছি, তাই দলও এঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করছে না।
দলের নির্দেশ মেনে যাঁরা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি, নির্দল হিসেবে তৃণমূলের প্রার্থীর বিরুদ্ধেই লড়াই করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কী কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে? তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের কৌশলী জবাব, “আমাদের প্রচুর যোগ্য প্রার্থী আছেন। কিন্তু, আসন তো নির্দিষ্ট। তাই সকলে প্রার্থী করা যায়নি। আলোচনা চলছে। আশা করি, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হবে।” তৃণমূলের জেলা সভাপতির ইঙ্গিত, দলের যাঁরা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি, নির্দল প্রার্থী হয়েছেন, আলোচনার পর তাঁরাও দলের প্রার্থীর হয়ে প্রচার করবেন। নিজেদের নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে নেবেন। তবে এখনও পর্যন্ত যা পরিস্থিতি, তাতে সর্বত্র আলোচনার মাধ্যমে জট কাটার সম্ভাবনা কম। কারণ, ‘বিক্ষুব্ধ’রা ইতিমধ্যে প্রচারের কাজ শুরু করে দিয়েছেন। তৃণমূলেরই এক সূত্রে খবর, গ্রাম পঞ্চায়েতে দলের অন্তত ২৩৪ জন কর্মী নির্দল প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়েছেন। দল এঁদের প্রতীক দেয়নি। এরমধ্যে গড়বেতা- ১ এ রয়েছেন ৩০ জন, গড়বেতা- ৩ তে ৬ জন, শালবনিতে ২১ জন, মেদিনীপুর সদরে ২ জন, ডেবরায় ২৭ জন, খড়্গপুর- ১ এ ২ জন, নারায়ণগড়ে ১২ জন, বিনপুর- ২ এ ৯৭ জন, ঝাড়গ্রামে ৫ জন, দাসপুর- ২ তে ৪ জন, চন্দ্রকোনা ২ ব্লকে ১৩ জন, জামবনিতে ১৫ জন। পঞ্চায়েত সমিতিতে দলের অন্তত ৫৫ জন কর্মী নির্দল প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়েছেন। এরমধ্যে গড়বেতা ১ ব্লকে ৫ জন, শালবনিতে ৩ জন, মেদিনীপুর সদরে ৪ জন, ডেবরায় ৩ জন, খড়্গপুর- ১ এ ১ জন, নারায়ণগড়ে ৬ জন, বিনপুর- ২ এ ২৯ জন, জামবনিতে ৪ জন।
ডেবরায় আবার জেলা পরিষদের একটি আসনেও ‘বিক্ষুব্ধ’ প্রার্থী রয়েছে। ক’দিন আগে মেদিনীপুরের এক সভায় জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব বার্তা দিয়েছিলেন, দলের মধ্যে কোনও উপদল, গোষ্ঠী বরদাস্ত করা হবে না। কারও প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছে থাকতেই পারে। তাঁর নাম প্রস্তাব হয়ে জেলায় আসবে। সঙ্গে আরও যাঁরা যোগ্য বলে বিবেচিত হবে, তাঁদের নামও আসবে। তবে দল যাঁকে প্রতীক দেবে, তাঁকেই মেনে নিতে হবে। দলের সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করা চলবে না। আর সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করলে কী হতে পারে, তার উদাহরণ হিসেবে পিংলার প্রবীণ নেতা গৌর ঘোড়ইয়ের কথা সামনে এনেছিলেন নেতৃত্ব। প্রকাশ্যে দলের কাজকর্মের প্রতিবাদে সরব হওয়ায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে যাঁকে দল থেকে বহিষ্কারই করেন রাজ্য নেতৃত্ব। কিন্তু, এ বার?
দলের নির্দেশ মেনে যাঁরা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি, নির্দল প্রার্থী হিসেবে তৃণমূলের প্রার্থীর বিরুদ্ধেই লড়াই করছেন, তাঁদের কী হবে? সদুত্তর নেই জেলা নেতৃত্বের কাছে। তৃণমূলের এক জেলা নেতার মন্তব্য, “বহিষ্কার? অসম্ভব। ঠগ বাছতে গেলে তো গাঁ উজাড় হয়ে যাবে! পরে নিচুতলায় দলটাকে দেখবে কে!” |
|
|
|
|
|