ধবনের বিক্রম চাপা পড়ে গেল অ্যাসেজের আগের এক ঘুষিতে
ংল্যান্ডে এখন বিকেল পাঁচটা। ভারতে রাত সাড়ে ন’টা।
এখুনি দুটি এসএমএস এল আইসিসি থেকে পর পর! একটার বয়ান বার্মিংহ্যামে কাল দুপুর দুটো থেকে পাকিস্তান ট্রেনিং করবে। দ্বিতীয়টার বয়ান, ভারত আগামিকাল ট্রেনিং রাখেনি।
পাকিস্তান ম্যাচের আগের আগের দিন ট্রেনিং না রাখা মানে খুব সহজ। কেবল ম্যাচের আগের দিনের নেট প্রস্তুতি সেরে ভারত খেলবে পাকিস্তানকে! কস্মিনকালে হয়েছে কি না সন্দেহ। কিন্তু এটাই ধোনি মডেল যে আজকালকার দিনে এত খেলতে হয় আগের ঠিকুজি মানার মানে হয় না। মাঠে না গিয়ে যত পারো জিমে থাকো। পুল সেশন করো। সাদা বাংলায় ফিটনেসটা ঠিক রাখো। ওটাও নেট প্র্যাক্টিস!
স্পট ফিক্সিং অধ্যুষিত সময়ের বোঝা ঘাড়ে নিয়ে ভারত এই গ্রীষ্মে যা ক্রিকেট খেলছে, তাতে সবাই থ। ব্যতিক্রম ইংল্যান্ডের পত্র পত্রিকা। তারা যেমন ফেডেরার-নাদালকে ছেড়ে অ্যান্ডি মারেতে আচ্ছন্ন থাকে, এখানেও তাই। ধোনির টিমকে আলোকিত করার চেয়ে তাদের অনেক বেশি কৌতূহল বিষ্যুৎবার ওভালে মালিঙ্গার ইয়র্কারে মর্গ্যানরা স্কুপ শট খেলতে পারবেন কিনা তা নিয়ে? আর এ দিন দুপুর থেকে তো নতুন আলোড়ন শুরু হয়েছে বার্মিংহ্যামের নাইটক্লাবে ইংল্যান্ডের জো রুটকে মারা ডেভিড ওয়ার্নারের ঘুষিতে। অ্যাসেজ সিরিজ আগামী ১০ জুলাই শুরু নিয়ে এমনিতেই ক্রিকেটমহল প্রবল উত্তেজিত। তার উপর বিনা প্ররোচনায় ঘুষি মারাকে কেন্দ্র করে তো বিতর্কের প্লাবন বয়ে যাচ্ছে। ওয়ার্নারকে এ দিনের নিউজিল্যান্ড ম্যাচে সাসপেন্ড করে জল বইয়েছে অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু তাতে বিন্দুমাত্র প্রশমিত হয়নি বিতর্কের মাইক্রোওভেনে ওয়ার্নারের ঢুকে পড়া!
রুট ও ওয়ার্নার।
আইপিএল যুগে এখন প্লেয়ারে প্লেয়ারে এত বন্ধুত্ব আর যার যার নিজেরটা বুঝে নেওয়ার থাকে। বন্ধুত্ব যদি বা গাঢ় না হয়, দেশের জার্সির গায়ে শত্রুতা দেখাই যায় না। ওয়ার্নারের ঘটনা সে জন্যই ব্যতিক্রমই যে যতই তিনি বদমেজাজি হিসেবে পরিচিত থাকুন। যতই ইংল্যান্ডের কাছে ঘণ্টাখানেক আগে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে হেরে মেজাজ বিগড়ে থাক! কথা নেই বার্তা নেই হঠাৎ করে রাত্তির দুটোর সময় কেউ বিপক্ষের ওপর চড়াও হয় নাকি? ঘটনার রেশ এমন পর্যায়ে যে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া এবং ইংলিশ ক্রিকেট বোর্ড আলাদা বিবৃতি দিতে বাধ্য হয়েছে। বলেছে, এর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হবে।
টিম হোটেলের কাছেই ‘ওয়াক অ্যাবাউট’ পাবে বসেছিলেন অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের কিছু ক্রিকেটার। টিমে এক রকম অনভিজ্ঞ বাইশ বছরের জো রুট একটা পরচুলা নিয়ে মাথা থেকে নিজের গালে নামাচ্ছিলেন। আর খুব হাসছিলেন। সেটা দেখেই রাগ হয়ে যায় ওয়ার্নারের। তিনি পরচুলোটা টেনে নিয়ে রুটের গালে এক ঘুষি মারেন। পাশেই ছিলেন স্টুয়ার্ট ব্রড। আকস্মিকতার রেশ কাটিয়ে তিনি রুটকে সরিয়ে দেন। ওয়ার্নারকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান অস্ট্রেলিয়ার ক্লিন্ট ম্যাকে। ছাব্বিশ বছরের ওয়ার্নারের শৃঙ্খলাভঙ্গের নানান ইতিহাস এরই মধ্যে রয়েছে। সে দিনই তো দেশজ সাংবাদিককে টুইটার কটুক্তির জন্য সাজা পেয়েছেন। কিন্তু এ বারেরটার ঘনত্ব বিশাল। জোনাথন অ্যাগ্নিউর মতো কেউ কেউ টুইট করেছেন, অত রাত্তিরে ইংল্যান্ডের ছ’জন ক্রিকেটারই বা পাবে কী করছিল? চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মধ্যে কি কোনও কোড অব কনডাক্ট নেই যে রাত্তির দুটোর সময় হোটেলের বাইরে থাকা যাবে না?
কিন্তু জনমত সে সব শুনতে রাজি নয়। তারা পরিষ্কার স্পট লাইট রাখছে ওয়ার্নারের ওপর। বাকি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি কি তিনি সাসপেন্ড হয়ে যাবেন? লর্ডসে অ্যাসেজের প্রথম টেস্টে কি এর পর তাঁকে খেলাবে অস্ট্রেলিয়া?
উত্তর যা-ই হোক বাঁ হাতের ওই ঘুষিতে যেন শিখর ধবনের বাঁ হাতের গ্রহণ হয়ে গিয়েছে। উপর্যূপরি দুটো ওয়ান ডে সেঞ্চুরিতে শিখর স্বীকৃত হচ্ছিলেন-টচ্ছিলেন ব্রিটিশ প্রেসে ‘নতুন ভারতের অসমসাহসী মুখ’ হিসেবে। টুইটারে এখনও তাঁর ভক্তসংখ্যা মাত্র সাড়ে পাঁচ হাজারের কিছু ওপরে সীমাবদ্ধ। কিন্তু ব্রিটিশ মিডিয়া রবীন্দ্র জাডেজাকে পিছনে ফেলে ধবনকে নিয়ে সবে পড়ে ছিল। ওয়ার্নারের ঘটনা ফোকাস একেবারে অন্য দিকে সরিয়ে দিল।
লর্ডসে অ্যাসেজ টেস্ট ম্যাচ দেখতে গেলে দেখবেন আবার
ওয়ার্নার স্ট্যান্ড-এ বসবেন না যেন। ঘুষি খেতে পারেন!
ওয়ার্নারের এখনকার স্টেটাসটা পড়তে ভাল লাগবে না। ১২ নৈশ অভিযান, ৪.২১ পাঁইট গড়ে মদ্যপান,
৭টা পাঞ্চ, তার মধ্যে ১টা ল্যান্ড করেছে (তাও ডিআরএসে খারিজ)।
আরে জো রুটের বয়স তো মাত্র ১২! মনে হয় ওয়ার্নার ওর হোমওয়ার্ক কেড়ে নিতেই গিয়েছিল!
ভারতীয় ক্রিকেটমহল অবশ্য শিখরকে টুর্নামেন্ট জেতার সেরা বাজি হিসেবেই দেখছে। কপিল দেব এ দিনও বারবার উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়ছিলেন শিখর সম্পর্কে। দুপুরে মুম্বই থেকে ফোনে দিলীপ বেঙ্গসরকরও বললেন, “কী খেলছে ছেলেটা! যদি জেতায় ওর মতো ব্যাটসম্যানেরাই জেতাবে। আমাদের বোলিং এখনও ভয়াবহ। যতই আমরা জিতি।” বেঙ্গসরকরের মতে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ যে ভাবে ১০১-১ থেকে পরপর দায়িত্বজ্ঞানহীন স্ট্রোক খেলে ম্যাচটা উপহার দিয়ে গিয়েছে সেটা রোজ রোজ ঘটবে না। এই ব্যাখ্যার সঙ্গে সস্পূর্ণ একমত প্রাক্তন ইংরেজ অধিনায়ক। এক সময় ইনি ইংলিশ ক্রিকেটের একক হর্তাকর্তাও ছিলেন। রে ইলিংওয়ার্থ।
একাশি বছরের ইলিংওয়ার্থ ইয়র্কশায়ারের বাড়ি থেকে এ দিন ফোনে আনন্দবাজারকে বললেন, “টিভিতে যা বুঝলাম ম্যাচটা তো ওয়েস্ট ইন্ডিজ দিয়ে গেল। অন্তত ২৭০ ওদের করার কথা।” ইলিংওয়ার্থ ক্রিকেটে সেই দুর্মূল্য নাইন মেম্বার ক্লাবের অন্যতম যাঁদের প্রত্যেকের ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে কুড়ি হাজার রান আর দু’শো উইকেট আছে। ক্যাপ্টেন হিসেবেও এক রকম অপরাজেয় ছিলেন। সোর্বাসের ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মজিদ খানদের পাকিস্তান। চ্যাপেলের অস্ট্রেলিয়া। সকলকে একটা সময় পরপর হারিয়েছেন। শুধু একটা দলের কাছে অদ্ভুত ভাবে আটকে যান। ১৯৭১-এর ভারত!
ধোনির ক্যাপ্টেন্সি সম্পর্কে বলতে গিয়ে ইলিংওয়ার্থ যা বললেন, তাতে মনে হল, তাঁর সমস্যা ধোনি নন। ভারতীয় বোলিং না। তাঁর সমস্যা একাত্তরের সিরিজের বিপক্ষ অধিনায়ক অজিত ওয়াড়েকর। “কী অসম্ভব লাকি ছিল অজিত। সে বার প্রথম দু’টো টেস্টেই ওদের হারার কথা। বৃষ্টি বাঁচিয়ে দিয়ে গেল। শেষ টেস্টটা ওরা ভাল খেলে জিতল ঠিকই। কিন্তু সিরিজের প্রকৃত ফল হয় আমাদের দিকে ২-১,” বললেন ইলিংওয়ার্থ।
গলায় এমনই তিক্ততা যে ওয়াড়েকর শুনলে অবধারিত বলতেন ব্যাটাছেলে বিয়াল্লিশ বছর বাদে এই বয়সে এসেও হারের জ্বালা ভুলতে পারছে না।
ইলিংওয়ার্থ সত্যিই যত না ২০১৩-তে। তার চেয়ে বেশি ১৯৭১। বললেন, “কাল ওভালে ইন্ডিয়ান সাপোর্টরদের হাবভাব দেখে আমার মনে পড়ছিল সে বার ওভাল টেস্টের শেষ দিনও এমনই ছিল। সাপোর্টটাররা কী নাচছিল ওদের। সে দিনও ইন্ডিয়া যেন হোম টেস্টই জিতেছিল!”
বর্তমানে ফেরত আসা ইলিংওয়ার্থ মেনে নিচ্ছেন, “বোলিং যতই দুর্বল দেখাক। ইন্ডিয়া যে ভাবে খেলছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ওরাই ফেভারিট!”
বোঝা গেল, ওয়ার্নারের বাঁ হাতের ঘুষিতে এতটা গ্রহণ হয়নি যে টুর্নামেন্টের ভাগ্যবিচার নিয়ে ক্রিকেট-দিগ্গজদের নত্বসত্ব লোপ পাবে।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.