আনন্দবাজার এক্সক্লুসিভ
‘ভাইরা মনে রাখবে দুনিয়ায়
ফ্রি লাঞ্চ বলে কিছু হয় না’

প্রশ্ন: তিরিশ বছর পর প্রথম সাক্ষাতে ভারত আবার জিতল।
কপিল: আরে তিরিশ বছর পর যে দু’টো টিম এ দেশে প্রথম খেলছে আমি জানতামই না। কাল মাঠে শুনলাম। আমার খেয়ালই ছিল না। আমার খালি ওভালে ঢুকে মনে পড়ছিল এখানেই মাইকেল হোল্ডিংকে আমি একটা ছক্কা মেরেছিলাম। হোল্ডিংকে ছক্কা (হাঃ হাঃ) ভোলা যায় (হাঃ হাঃ)!

প্র: সে তো লর্ডসে এডি হেমিংসকে টানা চারটে ছক্কায় আপনি ফলো অনও বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন। টেস্ট ক্রিকেটে চারটে ছক্কা তা-ও সেই সময়!
কপিল: সেটা বড় কিছু নয়। সে তো সন্দীপ পাটিলও মেরেছিল ছ’টা চার। বব উইলিসকে। কী কী সব ম্যাচ খেলেছি আমরা এ দেশে।

প্র: ইংল্যান্ডে কপিল দেব কিন্তু একটা আলাদা ব্যাপার। হয় বোথামকে টেক্কা দিচ্ছেন ব্যাট-বলে। নইলে চারটে ছক্কা মেরে দিলেন। অধিনায়ক হয়ে টেস্ট সিরিজে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দিলেন ২-০। টানব্রিজ-এ ১৭৫ করে ফেললেন। বিশ্বকাপ হাতে তুললেন। কী রঙিন সব এক-একটা ফ্রেম আপনাকে জড়িয়ে!
কপিল: আসলে ইংল্যান্ডে খেলতে আমি ভীষণ আনন্দ পেতাম। এত পরিষ্কার পরিছন্ন সব কিছু। সবুজ পুরু ঘাসের আউটফিল্ড। এখানকার সামার মনে হত আমাদের দেশের উইন্টার। মনে হত সারা দিন এখানে বল করে যেতে পারি।

প্র: এক্সট্রা পারফরম্যান্স বেরিয়ে আসত সেই ভাল লাগা থেকে?
কপিল: আমার মনে হয় ইংল্যান্ডের মাঠ একটা নির্ভরতা দিত। আজ আমাদের দেশের স্টেডিয়ামগুলো যদি দেখেন, হায়দরাবাদ, ঝাড়খণ্ড, নাগপুর, মোহালি এরা কী সব বানিয়েছে। হাজার ভাগ উন্নতি হয়েছে আমাদের সময় থেকে। আমরা যে সব মাঠে খেলেছি, ডাইভ দিলে লোকে বলত খেলে উঠেই হাসপাতাল যাও। গিয়ে দেখো, কনুই বা হাঁটু এক্স রে করে কিছু ভেঙেছে টেঙেছে কি না। ইংল্যান্ডের ক্রিকেট মাঠ সেই সময় আমার কাছে দেবদূতের মতন দেখা দিত।

প্র: শিখর ধবনকে কাল ব্যাট করতে দেখে। বা উমেশ যাদব রান আপ শুরু করার সময় কখনও মনে হচ্ছিল না, একবার গিয়ে নেমে পড়ি!
কপিল: নাহ। একবার ছেড়ে দিয়েছি আর পিছনে ফিরে তাকানো নেই। ক্রিকেট আমার জীবনে প্রতিষ্ঠা-স্বীকৃতি-সম্মান ঠিকই। কিন্তু ওটা মোট জীবনের কতটুকু? ধরে নেওয়া যায় আমি পঁচাত্তর বছর অবধি বাঁচলাম। তা হলে ক্রিকেট হল আমার মোট জীবনের চার ভাগের এক ভাগ। সরি। তার চেয়েও কম। টোয়েন্টি পার্সেন্টের কিছু বেশি। ক্রিকেট ছেড়ে দেখেছি জীবন অনেক বড়। ভেরি বিউটিফুল। সেই জীবনে প্রাণভরে বাঁচতে জানাটাও জরুরি।

প্র: কী মনে হচ্ছে ধোনির টিমকে দেখে? পাকিস্তান সমস্যা হবে?
কপিল: হওয়া উচিত নয়। কী ক্রিকেটটা খেলছে এরা। আমি তো মুগ্ধ হয়ে শিখর ধবনকে দেখছি। কোথায় ছিল? এ তো বড় বড় নামকেও মনে পড়তে দিচ্ছে না। এক এক সময় বিস্ফারিত লাগে ভেবে গত পনেরো বছর ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে কী কী সব প্লেয়ারকে দু’চোখ ভরে দেখলাম। সচিন! দ্রাবিড়! সহবাগ! গাঙ্গুলি! হরভজন! কুম্বলে! গম্ভীর! লক্ষ্মণ! এতগুলো বড় ট্যালেন্ট একসঙ্গে ভাবাই যায় না।

প্র: ধোনি।
কপিল: অবশ্যই ধোনি।

প্র: এত বিতর্কিত ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সময়ে ধোনি যে ভাবে টিমকে নিয়ে যাচ্ছেন সেটা দেখে কি ২০১৫ বিশ্বকাপের জন্য এখনই ওঁকে নেতা বেছে রাখা যেতে পারে?
কপিল: না, এখন তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে। দেখতে হবে বিশ্বকাপের টিম সিলেকশনের ঠিক আগে ওর ফিটনেস কোন পর্যায়ে আছে।

প্র: এ দেশে এতগুলো স্মরণীয় সব ক্রিকেটস্মৃতির মধ্যে আপনার নিজের ফেভারিট কোনটা?
কপিল: অফ কোর্স ওয়ার্ল্ড কাপ।

প্র: ছিয়াশিতে অত শক্তিশালী ইংল্যান্ডকে সিরিজ হারানোটা বিশ্বকাপের আলোয় চাপা পড়ে গেল ভাবলে খারাপ লাগে না?
কপিল: না। আমাদের যা প্রাপ্য ছিল তাই পেয়েছি। কোনও অভিযোগ নেই।

প্র: কিন্তু টানব্রিজের ১৭৫ যে রেকর্ডেড থাকল না ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে, সেটা ভাবলে খারাপ লাগে না?
কপিল: ওটা রেকর্ড করা তো আমার হাতে ছিল না। আমার যেটা দরকার ছিল, ১৭ রানে পাঁচ উইকেট পড়ে গেছে ওই অবস্থা থেকে টিমের কাজে আসার ইনিংস খেলা। সেটা খেলতে পেরেছিলাম, তাতেই আমি খুশি।

প্র: কিন্তু ফুটেজটা থাকলে আজ মেয়ে তো দেখতে পেত?
কপিল: সেটা পেত (একগাল হাসি)। মেয়েকে তো স্কুলে একটা সময় সবাই ক্ষ্যাপাতো, কী রে তুই বাবার খেলাই দেখিসনি। কী মেয়ে হলি! তার পর ইদানীং ইউ টিউবে গিয়ে আমার কিছু ম্যাচ-ট্যাচ দেখেছে। সে দিন আমায় বলছে, বাবা তুমি তো বড় প্লেয়ার ছিলে দেখছি (হাঃ হাঃ)। আমি তখন বললাম, তুই বুঝলি তা হলে (হাঃ হাঃ)।
ওভালে কপিল ও সিধু। ছবি: দেবদূত রায়চৌধুরী।
প্র: লোকে নিজের জন্মদিন মনে রাখে। বাচ্চারটা মনে রাখে। বউয়েরটা রাখে। আর রাখে নিজের বিবাহবার্ষিকী। ভারতীয় ক্রিকেট প্রেমিক মানে এতগুলো তারিখের পর সে আরও একটা দিন মনে রাখবে। ২৫ জুন। তাই না?
কপিল: সত্যি। ক’দিন আগে থেকে লোকের মেসেজ আসতে শুরু করে। এগুলোই প্রতিবার মনে করিয়ে দেয়।

প্র: ভাবলে কেমন লাগে যে এ দেশে এমন একটা ঘটনা আপনার নেতৃত্বে সম্ভব হয়েছিল যা জাতির জীবনে মাইলস্টোন হয়ে গিয়েছে?
কপিল: উৎসবের কারণ ঠিকই। কিন্তু আমার মনে পিছনে চলে গিয়েছে। এখন নতুন চ্যাম্পিয়নরা এসে গিয়েছে। নতুন প্রজন্মের স্বপ্ন সত্যি। তারা ধোনির ভারতকে দেখেছে কাপ তুলতে। এখন ওদের সময়।

প্র: আপনি কী করছিলেন ২ এপ্রিল ওয়াংখেড়ের রাতে?
কপিল: টিভি স্টুডিয়োয় ছিলাম। আর ফাঁকে ফাঁকেই আনন্দে নাচছিলাম।

প্র: ধোনির ভারতের হয়ে আজ খেলতে নামলে কপিল দেব নিজেকে কতটা বদলাতেন?
কপিল: অনেকটাই। ব্যাটিংয়েও। বোলিংয়ে তো বটেই। সেই সময় এত অভিজ্ঞ ছিলাম না। মোশনে চলে গিয়েছি। আজকের দিন হলে কী ভাবে এনার্জি বাঁচাব, কখন এনার্জি খরচ করব অনেক বিচক্ষণতা দেখাতে পারতাম।

প্র: আপনার বিরুদ্ধে হালফিল একটা অভিযোগ উঠছে।
কপিল: কী?

প্র: যে আপনি বোর্ডকর্তাদের পরোয়া না করে আইসিএল করলেন। সাসপেন্ড হয়েও একমাত্র আপনিই ক্ষমা চাইলেন না। সে-ই তিনিই স্পট ফিক্সিংয়ের কাল ছায়ায় ভারতীয় ক্রিকেট আক্রান্ত দেখেও মুখ খোলেননি। তা হলে আর স্পষ্টবক্তার ধারাবাহিকতা কোথায় থাকল?
কপিল: মুখ খুলিনি কারণ প্রথমত আমি গোটা ব্যাপারটা নিয়ে ভীষণ উত্তেজিত ছিলাম। আপসেটও হয়ে পড়ি খুব। তখন কথা বলতে চাইনি। আরও একটা বড় কারণ, পুরো তথ্যটা আমাদের কারও হাতের সামনে নেই। সেটা না পেলে ছবিটাই তো পরিষ্কার নয়। তার ওপর দাঁড়িয়ে কথা বলব কী করে? এই যে ‘ট্রায়াল বাই দ্য মিডিয়া’ প্রতিদিন ঘটছিল, এতে আমার সায় নেই।

প্র: শ্রীসন্তের খবরটা প্রথম জানার পর কী মনে হয়েছিল?
কপিল: প্রচণ্ড রাগ হচ্ছিল যে এত লোভ কেন? এখন তো এত ভাল থাকার সুযোগ পাস। দেশের হয়ে খেলছিস। কোথাও মনে হয় না যে রাত্তিরে বালিশে শুয়ে হেলান দিলে ঘুমটাও তোর এত অপ-চিন্তায় ঠিকমতো আসবে না।

প্র: অনেকে পরামর্শ দিচ্ছেন আইপিএল যুগে ক্রিকেটারদের অনেক সতর্ক হতে হবে নন ক্রিকেটার বন্ধু বাছার ব্যাপারে। কপিল, আপনার বন্ধুর সংখ্যা বরাবর বেশি। এই সাজেশনের সঙ্গে আপনি কি একমত?
কপিল: আমি বলব একটা কথা মাথায় রাখতে যে যারা চারপাশে ভাল ভাল কথা বলছে। খাওয়াতে নিয়ে যাচ্ছে। ভাল ভাল গিফট দিচ্ছে। তাদের অনেকে জেনুইন হতে পারে। কিন্তু বেশির ভাগের অভিসন্ধিটা যাচাই করার চেষ্টা করো। ভাইরা মনে রেখো দুনিয়ায় ফ্রি লাঞ্চ বলে কিছু হয় না। সব কিছুর গায়ে একটা অদৃশ্য ট্যাগ আছে। আর মনে রেখো নিজেদের পেশাটার বদনাম কোরো না। এমন ব্যবস্থা কোরো না যে ক্রিকেটার শুনলে লোকে তোমাকে ঘেন্না করতে শুরু করে। অবিশ্বাস করে।

প্র: আপনি কেবল ক্রিকেটারদের কথা বলছেন। এখন তো দেখা যাচ্ছে রোগ অনেক বেশি ভয়ঙ্কর। স্বয়ং ক্রিকেটকর্তারাও এর মধ্যে জড়িত। সাংঘাতিক নয়?
কপিল: সাংঘাতিক তো নিশ্চয়ই। কিন্তু আমি তথ্যগুলো সব হাতে আসার অপেক্ষায় রয়েছি। এই পর্যায়ে আমার মনে হয়, না আমরা সব কিছু জানি। না মিডিয়া জানে!




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.