সাতটি লাউ, ৫ কাঁদি কলা, অন্তত ৭ কেজি আলু। এই হল ‘বিষ্ণু’র সারা দিনের খাবারের তালিকা। চিকিৎসকের পরামর্শ মতোই তৈরি হয়েছে তালিকা। অত্যধিক গরম থেকে শরীরকে ঠান্ডা রাখতে কেজিখানেক গ্লুকোজও রয়েছে তালিকায়। মায়ের সঙ্গে জঙ্গলে ঘোরার সময়ে ঘাস-পাতা ছাড়া কিছুই জুটত না। তবে বন দফতরের হেফাজতে আসায় তালিকা মতো লোভনীয় খাবার মুখের কাছে পেয়ে চেটেপুটে নিমেষে সাবাড় করে দিচ্ছে বিষ্ণু। চিকিৎসক তালিকা তৈরি করে দিলেও রোজ এত পরিমাণ লাউয়ের যোগান কী ভাবে মিলবে তা নিয়ে চিন্তিত বন কর্মীরা। বাড়ি বাড়ি চলছে লাউয়ের খোঁজ।
বাঁকুড়ার বাঁকাদহ রেঞ্জ থেকে ৫ জুন উদ্ধার করা হয় দলছুট হাতিটিকে। যার নাম দেওয়া হয় বিষ্ণু। মায়ের কাছে ফেরাতে চেষ্টা করা হলেও মানুষের ছোঁয়ার কারণে শাবকটিকে দল ফিরিয়ে নেয়নি। বাঁকুড়ার ডিএফও কুমার বিমল বলেন, “বাঁকুড়ায় কোন কুনকি নেই বলে এত ছোট বাচ্চাকে আমাদের এখানে রেখে বড় করা সম্ভব নয়। তাই জলদাপাড়া পাঠানো হয়েছে। দলমার হাতিটি জলদাপাড়ায় ভাল ভাবে বেড়ে উঠবে।” শাবকটির বয়স মাত্র চার মাস হওয়ায়, মায়ের দুধ ছাড়া বাঁচানো সম্ভব হবে না ভেবে তিতি, তিস্তা, দ্বারকা প্রসাদ, বালাসুন্দরদের মত পালিতা মা কুনকি হাতি চম্পাকলি বা সুন্দরমণির দুধ খাইয়ে বড় করে তোলার জন্য তোড়জোড় শুরু হয়। তবে শাবকটির বয়স যা বলা হয়েছে তার সঙ্গে তার শারীরিক গঠন সহ অন্য মিল খুঁজে না পেয়ে স্থানীয় পশু চিকিৎসক অশোক সিংহ জানিয়ে দেন, শাবকটির আসল বয়স এক বছর। আর সে কারণে তার আর মায়ের দুধ বা বাইরের কৌটোর দুধ খাওয়ানোর প্রয়োজন নেই। চিকিৎসকের কথায়, “এখানে গরম, বাঁকুড়া থেকে অনেক কম। তা হলেও শরীর ঠাণ্ডা রাখে এমন খাবারের তালিকা করে দেওয়া হয়েছে। কিছু দিন লাউ, কলা, আলু খাওয়ার পরে বিষ্ণুর খাদ্য তালিকা পরিবর্তন করা হবে।”
গত মঙ্গলবার ট্রাকে চড়িয়ে তাকে হলং পিলখানায় নেওয়া হয়। রাতে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় জলদাপাড়া পিলখানায়। সকালে কিছুক্ষণ মনমরা হয়ে কাটে তার। তবে চাঙ্গা হলে সময় লাগেনি। পিলখানার কাছে মাহুতের কাঠের ঘরের নীচে নতুন অতিথিকে দেখে বিষ্ণুর কাছে চলে আসে কুনকি সুন্দরমণির ছেলে চার বছরের ‘সৌরভ’ আর সমবয়সী অপর এক উদ্ধার হওয়া অনাথ জঙ্গলি হস্তিশাবক ‘রামু’। পশু চিকিৎসকের কথায়, “ছোট হাতি পাশে পাওয়ায় শীঘ্র বিষ্ণু জলদাপাড়ার নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেবে।”
|