বর্ষা আসন্ন। এ দিকে, সামনে পঞ্চায়েত ভোট।
এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনী বিধি লাগু হয়ে যাওয়ায় বন্যাপ্রবণ আরামবাগ মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় নদীবাঁধ তৈরির কাজ থমকে গিয়েছে। এত দিন যে সব এলাকায় বাঁধ মেরামতির কাজ চলছিল, সে সব জায়গাতেও তদারকির অভাবে কাজ হচ্ছে ঢিমেতালে। কিন্তু দ্রুত বাঁধ নির্মাণ বা মেরামতির কাজ না হলে বর্ষায় বাঁধ ভেঙে গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে বলে আশঙ্কা গ্রামবাসীদের।
পরিস্থিতির কথা মেনে নিয়েও হুগলির জেলাশাসক মনমীত নন্দার আশ্বাস, “বাঁধ নির্মাণের যে সব কাজ থমকে রয়েছে, সেগুলি যাতে দ্রুত শুরু করা যায়, তার জন্য নির্বাচন কমিশনের থেকে অনুমতি নেওয়া হবে।” আরামবাগের মহকুমাশাসক অরিন্দম রায় জানিয়েছেন, নির্বাচনের কারণে নতুন ভাবে বাঁধ তৈরি করা সম্ভব না হলেও যে ক’টি কাজ শুরু হয়েছে তা চলবে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মহকুমার ছ’টি ব্লকের ৬৩টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৫৩টিই বন্যাপ্রবণ। এমনকী, বাঁধ ভেঙে বা উপচে আরামবাগ পুরসভার ১৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ছ’টি জলমগ্ন হয় প্রতি বর্ষায়। মহকুমার মধ্যে দিয়ে বয়ে গিয়েছে দ্বারকেশ্বর, দামোদর, মুণ্ডেশ্বরী এবং রূপনারায়ণ। রয়েছে বেশ কিছু খাল-বিল। অতি বর্ষণে বাঁধ ভেঙে যেমন গ্রাম প্লাবিত হয়, তেমনই ডিভিসি-র ছাড়া জলেও অনেক সময়েই মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। সে কারণে প্রতি বছর বন্যা-সংক্রান্ত বিপর্যয় মোকাবিলা নিয়ে প্রশাসনের তৎপরতা এই সময়ে তুঙ্গে থাকে। বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতির কাজ হয় জোরকদমে। মানুষ কিছুটা হলেও ভরসা পান। কিন্তু এ বার ২ জুলাই এই জেলায় ভোট। প্রশাসনের কর্তাদের অনেকেই এখন সেই কাজে ব্যস্ত।
মহকুমার নদীবাঁধগুলির মধ্যে সেচ দফতরের অধীনে রয়েছে ৯৮.৫ কিলোমিটার এলাকা। পঞ্চায়েত সমিতি এবং পঞ্চায়েত দেখভাল করে প্রায় ২৪০ কিলোমিটার নদীবাঁধ। সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, যে সব এলাকার নদীবাঁধের কাজ জরুরি ভিত্তিতে করা প্রয়োজন তার মধ্যে রয়েছে গোঘাটের মঙ্গলগাঁতি মৌজা, বালি পঞ্চায়েতের মসজিদতলা, দিঘড়া গ্রামের দক্ষিণপাড়া এবং চাষিপাড়া, খানাকুলের তাঁতিশাল, মাড়োখানা, নতিবপুরের মতো বেশ কিছু এলাকা। রয়েছে পুড়শুড়ার আটটি পঞ্চায়েত এলাকার কাজও। আরামবাগের চকবেঁশে-সহ কয়েকটি এলাকার বাঁধের অবস্থা তথৈবচ। মহকুমা সেচ দফতরের সহকারী বাস্তুকার প্রিয়ম পাল জানিয়েছেন, খানাকুলের বন্দর এলাকার বাঁধের একটি বড় প্রকল্পের কাজ চলছে। আটটি ছোট কাজের ওয়ার্ক-অর্ডার হয়ে গিয়েছে।
ভোটের জন্য ইতিমধ্যেই চালু প্রকল্পগুলির কাজ যে ঢিমেতালে হচ্ছে তা মেনে নিয়েছেন ব্লক প্রশাসনের কর্তারা। আরামবাগের বিডিও প্রণব সাঙ্গুই বলেন, “সহজেই ভেঙে যায়, এমন নদীবাঁধ কম নয়। ১০০ দিনের প্রকল্পে ওই সব বাঁধে মাটি ফেলার কাজ হচ্ছে। কিন্তু ভোটের জন্য তদারকির অভাব হচ্ছে, এটা ঠিক।” খানাকুল-২ বিডিও অনুপকুমার মণ্ডল বলেন, “পঞ্চায়েত নির্বাচনের ব্যস্ততায় নদীবাঁধ মেরামত ও সংরক্ষণের কাজ নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বাঁধ মেরামত-সংক্রান্ত অনেকগুলি প্রকল্প জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে।” প্রায় একই বক্তব্য খানাকুল-১ বিডিও গোবিন্দ হালদার এবং পুড়শুড়ার বিডিও সমর দত্তেরও। |