অভিষেক চট্টোপাধ্যায় • কলকাতা |
বছর ষাটের এক তৃণমূল কর্মী আপেক্ষ করছিলেন ডোমজুড় বাজারে চায়ের দোকানে বসে। বলছিলেন, “৯৮ সাল থেকে জোড়াফুল চিহ্নে ভোট দিয়ে আসছি। এই প্রথম ব্যালটে জোড়াফুল প্রতীকটাই থাকবে না।”
হাওড়ার জগৎবল্লভপুর বিধানসভা কেন্দ্রের জগৎবল্লভপুর পঞ্চায়েত সমিতির একটি আসন ও দক্ষিণ ঝাঁপড়দহ গ্রাম পঞ্চায়েতের একটি আসনে এ বছর জোড়াফুল প্রতীকে কোনও প্রার্থী নেই।
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে পর্যন্ত ডোমজুড় ও জগৎবল্লভপুর ব্লকে দাপট ছিল সিপিএমের। ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বদলে যায় চিত্রটা। ডোমজুড় ও জগৎবল্লভপুর দু’টি পঞ্চায়েত সমিতিই দখল করে তৃণমূল। ২০১১ সালে জগৎবল্লভপুর বিধানসভা কেন্দ্রে জয়ী হন আবুল কাশেম মোল্লা। এলাকায় সিপিএম এখন দুর্বল। কিন্তু তারপরেও কেন এমন হল?
ব্লক প্রশাসন ও জেলা তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, জগৎবল্লভপুর পঞ্চায়েত সমিতির ৩৫ নম্বর বুথে তৃণমূলের প্রতীকে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন ফতেনুর রহমান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আছেন নির্দল প্রার্থী স্বপন মান্না।
এই ঘটনায় দলীয় বিধায়ক আবুল কাশেম মোল্লার ভূমিকা রয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন তৃণমূলের একাংশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জগৎবল্লভপুরের এক তৃণমূল নেতা জানান, ফতেনুর রহমানকে হুমকি দিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহারে বাধ্য করেছেন বিধায়ক। স্বপনবাবু ‘তৃণমূল সমর্থিত নির্দল’ হিসেবে প্রচার শুরু করেছেন।
একই সমস্যা দক্ষিণ ঝাঁপড়দহ পঞ্চায়েতেও। এই পঞ্চায়েতের একটি আসনে লাবণ্য পাল তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দল তাঁকে প্রতীক দেয়নি। ওই বুথে বিজেপির এক প্রার্থী রয়েছেন। তৃণমূলের একাংশের অভিযোগ, বিধায়ক কাশেম মোল্লার অনুগামীরা বিজেপি প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার জন্য প্রচার করছেন। লাবণ্যদেবী বলেন, “এলাকার বিধায়কের ইচ্ছা থাকলে এই বুথে তৃণমূলের প্রার্থী থাকত।”
যদিও সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে জগৎবল্লভপুরের তৃণমূল বিধায়ক আবুল কাশেম মোল্লা বলেন, “অনেক সময় রাজনৈতিক কৌশলেই আমরা নির্দল প্রার্থীকে সমর্থন করি। দক্ষিণ ঝাঁপড়দহের ক্ষেত্রে লাবণ্য পালকে নির্দল হিসেবে সমর্থন করার কথা আমরা চিন্তা করছি। জগৎবল্লভপুরের ক্ষেত্রে ওই আসনে এলাকায় দলেরই দু’জন সদস্য প্রার্থী হয়েছিলেন। যিনি দলের প্রতীক পেয়েছিলেন তাঁর তুলনায় অন্য প্রার্থীর জনপ্রিয়তা বেশি। তাই দলে আলোচনা করেই আমরা ফতেনুর রহমানকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে বলেছি।”
সিপিএম অবশ্য লড়াইকে হালকা ভাবে নিচ্ছে না। দলের বেগড়ি-দক্ষিণ ঝাঁপড়দহ লোকাল কমিটির সম্পাদক অনিরুদ্ধ বসু বলেন, “তৃণমূল, কংগ্রেস কিংবা বিজেপি এই দলের প্রার্থীরা ভোটের আগে প্রতিবারেই ঝগড়া করে। কিন্তু ভোটের সময় ওরা এক সঙ্গেই লড়ে। তাই আমরা লড়াইকে মোটেই হালকা ভাবে নিচ্ছি না।”
সিপিএমের জগৎবল্লভপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক কাজি জাফর আহমেদ বলেন, “স্বপন মান্না তৃণমূলেরই নেতা। ও আগে সমিতির কমার্ধ্যক্ষও ছিল। ফলে তৃণমূলের প্রার্থী না থাকলেও লড়াই হবে।”
জোড়াফুলহীন আসনে কাস্তের নিশান কতটা স্পষ্ট হয়, এখন সেটাই দেখার। |