তৃণমূলের এক ছাত্র নেতাকে পরীক্ষায় নকল করতে বাধা দিয়েছিলেন কলেজের শিক্ষক। অভিযোগ, সেই আক্রোশে ট্রেনে উঠে ওই শিক্ষককে ছাত্রনেতার দলবল মারধর করে। এক বার নয়, দু-দু’বার। শেষ পর্যন্ত এক সহকর্মী এবং কামরার অন্য যাত্রীরা রুখে দাঁড়ালে মারমুখী ছাত্রেরা রণে ভঙ্গ দেয়। বুধবার সন্ধ্যায় হুগলির হরিপাল স্টেশনের ঘটনা।
প্রহৃত শিক্ষক অর্ণব বসু তারকেশ্বর ডিগ্রি কলেজে কমার্স পড়ান। বাড়ি হাওড়ায়। পুলিশ ও কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা চলছে। হরিপাল বিবেকানন্দ মহাবিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের আসন পড়েছে তারকেশ্বর ডিগ্রি কলেজে। এ দিন শারীরশিক্ষার পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছিলেন হরিপালের কলেজটির তৃণমূল ছাত্র পরিষদ পরিচালিত ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক সুমিত সরকার। অভিযোগ, নকল করার অভিযোগে অর্ণববাবু তাঁকে ধরেন। প্রথমে সতর্ক করা সত্ত্বেও সুমিত না শোনায় অর্ণববাবু তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন। তাঁকে দশ মিনিটের জন্য পরীক্ষা দিতে দেওয়া হয়নি। পরে অবশ্য উত্তরপত্র দিয়ে দেওয়া হয়।
অর্ণববাবু বলেন, “আমার উপরে হামলা হতে পারে, তা আঁচ করেই আমরা কয়েক জন মিলে এক সঙ্গে সন্ধ্যায় কলেজ থেকে তারকেশ্বর স্টেশনের দিকে যাচ্ছিলাম। সুমিত
আর ওর কিছু সঙ্গী আমাদের
পিছু নিয়েছিল। আমার মোবাইলে ফোন করে ক্রমাগত ওরা গালিগালাজ করে যাচ্ছিল।”
তারকেশ্বর থেকে হাওড়াগামী লোকালে ওঠেন অর্ণববাবু। সঙ্গে ছিলেন এক মহিলা সহকর্মী। অর্ণববাবুর অভিযোগ, হরিপাল স্টেশনে সুমিতের নেতৃত্বে বেশ কিছু ছাত্র ট্রেনে
উঠে তাঁকে নামিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। ধাক্কাধাক্কি করা হয়। কেন তিনি ওই ছাত্রনেতাকে নকলে বাধা দিয়েছেন, তার জবাবদিহি চাওয়া হয়। এখানেই শেষ নয়। অর্ণববাবু বলেন, “ট্রেন নালিকুলে পৌঁছলে ফের এক দল ছাত্র উঠে আমাকে ধাক্কাধাক্কি করে। কলার ধরে টানা হেঁচড়া করতে থাকে।” অর্ণববাবুকে হেনস্থ হতে দেখে তাঁর সহকর্মী ও অন্য যাত্রীরা রুখে দাঁড়ান। বেগতিক দেখে ট্রেন থেকে নেমে পড়ে হামলাকারী ছাত্রেরা। অর্ণববাবু সমস্ত ঘটনা জানান তারকেশ্বর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ অমলকান্ত হাটিকে। অমলকান্তবাবু পুলিশ-প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেন। অর্ণববাবুর কথায়, “ছাত্রদের হাতে যে কোনও দিন এ ভাবে হেনস্থা হতে হবে, কখনও ভাবতে পারিনি।”
সুমিতের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে, হরিপালের বিধায়ক তথা কৃষি প্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্না বলেন, “কোনও শিক্ষককে হেনস্থায় যদি আমাদের দলের কেউ যুক্ত থাকে, তবে তা বরদাস্ত করা হবে না। এ ক্ষেত্রে আইন আইনের মতো চলবে। আমি বিশদে খোঁজ নিয়ে দেখছি।”
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডার বক্তব্য, “পুলিশ তদন্ত করছে। জেলা টিএমসিপি-র সভাপতিকে তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। যদি কেউ দোষী প্রমাণিত হয়, সংগঠন কড়া ব্যবস্থা নেবে। তবে, প্রাথমিক ভাবে জেনেছি, এই ঘটনায় রাজনীতি যুক্ত নয়।”
|