লগ্ন এসে পড়ল প্রায়, কিন্তু তার দেখা নেই।
কাল, শুক্রবার জামাইষষ্ঠী। কিন্তু এ বার জামাইদের পাতে আর পড়বে না বাংলাদেশি ইলিশ। সেই রুপোলি মাখন দিয়ে হরেক জাদুকরি পদের কোনওটাই রাঁধতে পারবেন না শাশুড়িরা। কারণ, ইলিশ রফতানির উপরে বাংলাদেশ সরকারের নিষেধাজ্ঞা। তা ছাড়া, বাংলাদেশে ইলিশ এখনও সে ভাবে উঠছে না। সামান্য যা পাওয়া যাচ্ছে, তার আগুন দর।
ঢাকায় সে দেশের বাণিজ্য মন্ত্রকের সহকারী সচিব শহিদুল আলম জানিয়েছেন, দেশের বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য গত বছর অগস্টে সরকার ইলিশ রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। সেই নিষেধাজ্ঞা তোলার বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় নেই। কারণ পরিস্থিতির বিশেষ হেরফের হয়নি।
এ রাজ্যে ইলিশ আমদানিকারীদের অন্যতম সংস্থা ‘ফিশ ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি অতুলচন্দ্র দাস বলেন, “গত বছর জুলাই মাসে বাংলাদেশ সরকার ইলিশ, ভেটকি, পারশে-সহ এ দেশে সব ধরনের মাছ রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তী সময়ে অন্য মাছের উপর থেকে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও ইলিশের উপর থেকে তোলেনি।” |
গত বছর জামাইষষ্ঠীতে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে বাংলাদেশ থেকে হিমঘরের ইলিশ এনেছিলেন ব্যবসায়ীরা। পেট্রাপোল বন্দরে এই উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানও হয়। তার পরের চার-পাঁচ দিন আমদানিকারীরা ২৫০ টনের মতো পদ্মার ইলিশ আনতে পেরেছিলেন। এ বারও ইলিশ আমদানিকারী সংগঠনের তরফে রাজ্য সরকারের কাছে একাধিক বার বাংলাদেশ থেকে ইলিশ আমদানির জন্য পদক্ষেপ করতে অনুরোধ জানানো হয়েছিল। অতুলবাবুর অভিযোগ, “মে মাসে রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহের সঙ্গে আমরা বৈঠক করে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু রাজ্য সরকার উদ্যোগী হয়নি।” মৎস্যমন্ত্রী অবশ্য ওই অভিযোগ নস্যাৎ করে দাবি করেছেন, “আমরা কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলেছি। মুখ্যমন্ত্রীও কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছেন।” ভারতের আমদানিকারীরা যে ইলিশ নেওয়ার বিষয়ে বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করেছে, সরকারের কাছে অন্তত তেমন কোনও তথ্য নেই বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রকের সহকারী সচিব।
সরকার এ ভাবে হাত গুটিয়ে থাকায় খুবই হতাশ বাংলাদেশের ইলিশ রফতানিকারীরা। প্রধানত বরিশাল, চাঁদপুর ও ভোলা থেকেই এত কাল ভারতে ইলিশ আসত। বরিশালের ইলিশ রফতানিকারী সমিতির সহ-সভাপতি ইউসুফ শিকদার বলেন, “এই গোঁয়ার্তুমির জন্যই সরকার বিদেশি মুদ্রা আয়ের সুযোগ ও রাজস্ব হারাচ্ছে। রফতানি বন্ধ করেও বাংলাদেশে ইলিশের দাম সাধারণের নাগালে আনা যায়নি। অথচ প্রতিদিন বাঁকা পথে ইলিশ চলে যাচ্ছে ভারতে।” এ প্রসঙ্গেই তাঁর দাবি, “ভারতের ইলিশ আমদানিকারী সংস্থাগুলি উৎসাহ হারিয়েছে। তারাও বুঝে গিয়েছে, ঢাকা থেকে ইলিশ পাওয়ার আশা কম। তাই তারাও আর এ বছর বিষয়টি নিয়ে বিশেষ উচ্চবাচ্য করছে না। আর সরকারও সেটাকেই অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছে।”এ রাজ্যের বাজারগুলিতে এখন যে ইলিশ মিলছে, তা মূলত মায়ানমারের হিমঘর থেকে আসা বলে জানিয়েছেন আমদানিকারীরা। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো জামাইষষ্ঠীতে সেই ইলিশই অগত্যা হাতে ঝুলিয়ে বাড়ি ফিরবেন কেউ-কেউ। ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’ বলে জামাই বাবাজিরা বাড়ি ফিরতে পারবেন কি?
|