পঞ্চায়েত সমিতিতে ১৬ শতাংশ এবং গ্রাম পঞ্চায়েতে ১৯ শতাংশেরও বেশি আসনে নিষ্কণ্টক জয় পেয়েছে রাজ্যের শাসকদল। অথচ বর্ধমানে অন্তত ১০টি ব্লকে তারা ওই দুই স্তরে সব আসনে প্রার্থী দিতে পারেনি। জেলা পরিষদে অবশ্য সব আসনেই তাদের প্রার্থী রয়েছে।
বুধবার পর্যন্ত জেলা প্রশাসন সূত্রে যে হিসেব পাওয়া গিয়েছে তাতে ৪০৬৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনের মধ্যে ৮০৯টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে তৃণমূল। পঞ্চায়েত সমিতির ৭৭৯টি আসনের মধ্যে তাদের লড়তে হচ্ছে না ১২৬টিতে। কিন্তু গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে প্রায় ৪০টি এবং পঞ্চায়েত সমিতির আটটি আসনে তাদের প্রার্থী নেই।
এই তথ্য সামনে আসার পরে প্রত্যাশিত ভাবেই কিছুটা বিব্রত দলের জেলা তথা রাজ্য নেতারা। জেলায় দলের পরিদর্শক অলোক দাসের বক্তব্য, “আমরা এই হিসেব বিশ্লেষণ করছি। কেন এতগুলি আসনে কম প্রার্থী দেওয়া হল, তা এখনও বুঝতে পারিনি।” দলের নেতাদের সন্দেহ, কিছু ক্ষেত্রে কংগ্রেস বা নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে পড়া দলেরই কোনও নেতার জেতার রাস্তা সুগম করতে ‘বোঝাপড়া’ হয়েছে। তবে ভুল বোঝাবুঝির সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
প্রশাসনের দেওয়া হিসেব বলছে, কাঁকসা ব্লকে ৫টি, গলসি ১ ব্লকে ৮টি, কাটোয়া ১ ও ২ ব্লকে যথাক্রমে ১০ ও ৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে তৃণমূলের প্রার্থী নেই। দুর্গাপুর-ফরিদপুর, গলসি ২ এবং জামালপুর ব্লকে দু’টি করে এবং বারাবনি, পাণ্ডবেশ্বর, রায়না ১ ও কালনা ১ ব্লকেও একটি করে আসন ফাঁকা। পঞ্চায়েত সমিতি স্তরেও গলসি ১ ব্লকে ৫টি, কাটোয়া ২ ব্লকে দু’টি এবং কাঁকসায় একটি আসনে তারা প্রার্থী দিতে পারেনি।
ঘটনা হল, প্রাথমিক ভাবে এই সব ব্লকেই কিন্তু আসনসংখ্যার তুলনায় অনেক বেশি প্রার্থী তৃণমূলের নামে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। বারাবনির ৯২টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে জমা দেন ১০৩ জন। গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে কাঁকসায় ১৩২টি আসনে ১৫৬ জন, দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকে ৮৮টি আসনে ৯৬ জন, গলসি ১ ব্লকে ১৪১টি আসনে ১৯৫ জন, পাণ্ডবেশ্বরে ১১২টি আসনে ১৩৫ জন, রায়না ১ ব্লকে ১৩৯টি আসনে ২৫৬ জন, জামালপুরে ২০৬টি আসনে ২৮৮ জন, কালনা-১ ব্লকে ১৫৫টি আসনে ১৭৭ জন, কাটোয়া ১ ব্লকে ১২৯টি আসনে ১৫৬ জন ও কাটোয়া ২ ব্লকে ১০১টি আসনে তৃণমূলের ৯৮ জন মনোনয়ন জমা দেন।
অর্থাৎ, কাটোয়ার একাংশ ছাড়া অন্য সব ব্লকেই আসনের তুলনায় বেশি মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। তবে আসন ফাঁকা পড়ে রইল কী করে? কাটোয়া ২ ব্লকেও চার তৃণমূল প্রার্থী শেষমেশ মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। ফলে তলায়-তলায় কংগ্রেসের সঙ্গে দলের একাংশের সমঝোতা হয়ে থাকতে পারে বলে সন্দেহ করছেন তৃণমূলের রাজ্য নেতারা। কংগ্রেস অবশ্য সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
তৃণমূলের নেতাদের অনেকে আবার অন্য ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। তাঁদের বক্তব্য, দলের বিভিন্ন গোষ্ঠীর সমর্থকেরা নানা আসনে নিজেদের প্রার্থীর নামে প্রচুর মনোনয়ন জমা করেছিলেন। পরে দফায়-দফায় দলের সমস্ত গোষ্ঠীকে নিয়ে বৈঠক করে রাজ্য নেতৃত্ব অনেককে মনোনয়ন প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। তাতেই ‘অভিমান’ করে বেশি আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন কিছু নেতা। আবার একাধিক নেতার নির্দেশে একাধিক গোষ্ঠী একযোগে মনোনয়ন তুলে নিয়ে থাকতে পারে। সেই ভুল বোঝাবুঝিতেও কিছু আসনে কোনও প্রার্থী থাকেনি।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথ অবশ্য দাবি করেন, “সিপিএমের সন্ত্রাসে আমরা তো কোনও দিনই সব আসনে প্রার্থী দিতে পারিনি। এ বারও কিছু-কিছু জায়গায় একই ঘটনা ঘটেছে। এই আসনগুলিতে নির্দলদের কাউকে সমর্থন করা সম্ভব কি না, আপাতত সেটাই আমরা খতিয়ে দেখছি।” |