বয়সকে বুড়ো আঙুল, মুখোমুখি দুই বেয়াই
তুনদের জায়গা ছেড়ে দিতে ছেদ টেনেছিলেন প্রায় ৪৬ বছরের রাজনৈতিক জীবনে। তার পরে পেরিয়েছে দশটা বছর। ক্ষমতার হাতবদল দেখেছে রাজ্যবাসী। পাল্টে গিয়েছে পরিস্থিতি। যাঁদের জায়গা ছাড়তে সরে দাঁড়িয়েছিলেন, এখন ‘সন্ত্রাসের’ আশঙ্কায় সেনাপতি হতে দোনামনা করছেন তাঁরাই। আর তা দেখে ফের ভোটের লড়াইয়ে নেমে পড়লেন কালনার পূর্ব সাতগাছিয়া পঞ্চায়েতের ৮৪ বছরের বৃদ্ধ গুরুদাস মালো। এ বার লড়াইয়ে প্রতিপক্ষ আর কেউ নয়, তাঁর নিজের বেয়াই।
কালনা শহর থেকে এসটিকেকে রোড ধরে কিলোমিটার পাঁচেক গেলে বন্দেবাজ মোড়। সেখান থেকে মোরাম রাস্তা ধরে আরও প্রায় দু’কিলোমিটার এগোলে কালনা ২ ব্লকের পূর্ব সাতগাছিয়া পঞ্চায়েতের মালোপাড়া গ্রাম। পথের পাশে দেওয়ালে চোখ পড়লেই বোঝা যায়, জমে উঠেছে ভোট-যুদ্ধ। গ্রামের পথেঘাটে, চায়ের দোকানে, বাঁশের মাচায় আলোচনার বিষয়বস্তু এখন দুই বেয়াইয়ের লড়াই। সিপিএম প্রার্থী গুরুদাসবাবু এক সময়ে পঞ্চায়েতের প্রধান, উপ-প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন। আর তাঁর বেয়াই, তৃণমূলের প্রার্থী অতুল বিশ্বাস এখন ওই পঞ্চায়েতের সদস্য।
গ্রামের মোরাম রাস্তার পাশেই বাড়ি গুরুদাসবাবুর। এই বয়সে আবার প্রার্থী হতে গেলেন কেন? বৃদ্ধ বলেন, “আমাকে কেউ এখনও ভয় দেখায়নি বটে, তবে এলাকায় হুমকি, সন্ত্রাসের আবহ রয়েইছে। দলকে বলেছি, আমার ভয়ডর নেই। যা বয়স তাতে হয়তো যে কোনও দিন অসুস্থ হয়ে মারা যাব। ভোটের ময়দানে নেমে মরলে তো তবু শহিদ হব। তাই এগিয়ে এসেছি।” সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, গুরুদাসবাবু বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন ১৯৫৭ সালে। ১৯৭৮ সালে পূর্ব সাতগাছিয়ার উপপ্রধান হন। ১৯৮৩-তে পঞ্চায়েত সমিতির আসনে জিতে মৎস্য কর্মাধ্যক্ষের দায়িত্ব পান। ১৯৮৮-৯৮ পূর্ব সাতগাছিয়ার প্রধান ছিলেন। এর পরে ২০০৩ পর্যন্ত পঞ্চায়েতের সাধারণ সদস্য ছিলেন।
৮৪ বছরের গুরুদাস মালো ও ৬২ বছরের অতুল বিশ্বাস। —নিজস্ব চিত্র।
গুরুদাসবাবু বলেন, “২০০৩-এর পরে নতুনদের জায়গা ছেড়ে দিই। কিন্তু এ বার পরিস্থিতি অন্য রকম হওয়ায় ফের দলকে প্রার্থী হওয়ার কথা জানাই। দল আমার উপরে আস্থা রেখেছে।” তাঁর মেজো মেয়ের বিয়ে হয়েছে ওই গ্রামেই। সেই মেয়ের শ্বশুর অতুলবাবু এ বার তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী। অতুলবাবু গত বার পঞ্চায়েত ভোটেও তৃণমূলের হয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
প্রচারে গিয়ে বেয়াইয়ের বিরুদ্ধে কী বলবেন? গুরুদাসবাবুর জবাব, “ব্যক্তিগত আক্রমণের কোনও প্রশ্ন নেই। নীতির লড়াই হবে। একশো দিনের কাজ-সহ পঞ্চায়েতের নানা দুর্নীতির কথা প্রচারে তুলব।” যে পঞ্চায়েতের ‘দুর্নীতি’ মানুষকে বোঝাতে চান গুরুদাসবাবু, অতুলবাবুও তো তার সদস্য। সেক্ষেত্রে নাম জড়াতে পারে বেয়াইয়েরও। প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগেই গুরুদাসবাবু বলে ওঠেন, “আমাদের দল তৃণমূলের সমালোচনা করলে আশা করি, আমার ও বেয়াইয়ের মধ্যে মুখ দেখাদেখি বা বাড়িতে যাতায়াত বন্ধ হবে না।”
গুরুদাসবাবুর বাড়ি থেকে শ’দুয়েক মিটার দূরেই অতুলবাবুর বাড়ি। ৬২ বছর বয়সেও এলাকার মিল থেকে মুড়ি কিনে সাইকেলে করে বিক্রি করেন নদিয়ার নানা গ্রামে। ২০০৮ সালে সিপিএম প্রার্থীকে ৯২ ভোটে হারান তিনি। বাড়ির সামনে বসে বলেন, “আগের বার ২৮টি ভোট নষ্ট হয়েছিল। এ বার পঞ্চায়েত চালিয়েছি আমরা। রাস্তা সংস্কার, ইন্দিরা আবাস যোজনা-সহ নানা উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। আশা করি, এ বার বড় ব্যবধানে জিতব।” প্রতিদ্বন্দ্বী বেয়াই, সে প্রসঙ্গে অতুলবাবুর বক্তব্য, “এই বয়সে ওঁকে প্রার্থী করা সিপিএমের উচিত হয়নি। তবে দাঁড়িয়েছেন যখন লড়াই তো হবেই। উনি যদি প্রচারে দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন, আমি উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরব।” তবে এমন কিছু ঘটবে না যাতে পারিবারিক সম্পর্ক নষ্ট হয়, দাবি তাঁরও।
তৃণমূলের পূর্ব সাতগাছিয়ার সভাপতি বলাই উপাধ্যায়ের দাবি, “কোথাও কোনও সন্ত্রাসের বাতাবরণ নেই। স্রেফ প্রার্থী না পেয়ে সিপিএম গুরুদাসবাবুকে দাঁড় করিয়েছে।” সিপিএমের কালনা জোনাল সদস্য স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য এ কথা মানেননি। তাঁর দাবি, “এই এলাকায় প্রার্থী হওয়ার মতো বেশ কয়েক জন তরুণ ছিলেন, তবু গুরুদাসবাবুকে প্রার্থী করা হয়েছে। কারণ, চারপাশের হুমকি, সন্ত্রাসের পরিস্থিতিকে উপেক্ষা করে তিনি যে ভাবে এগিয়ে এসেছেন, দল তার মর্যাদা দিতে চেয়েছে। তাঁর অভিজ্ঞতাও প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রাধান্য পেয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.