শঙ্খদীপ দাসের ‘পারানির কড়ি জমাতেও ভিক্ষেই ভরসা’ শীর্ষক মর্মান্তিক প্রতিবেদন (২১-৫) পড়লাম। বৃন্দাবনে নিরুপায় বাঙালি ও ওড়িশি বিধবাদের সকরুণ অবস্থার দিকে সবিশেষ নজর দিয়ে এঁদের প্রতি যথোপযুক্ত সুব্যবস্থা অবলম্বনের জন্য ওই দুই রাজ্য সরকারের ওপর গত বছরের গোড়ায় কঠোর নির্দেশ জারি করেছিল শীর্ষ আদালত। ওই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এবং ওড়িশায় নবীন পট্টনায়কের সরকার সুপ্রিম কোর্টের কাছে সংশ্লিষ্ট বিধবাদের সামান্য কিছু টাকা মাসিক ভাতা হিসাবে প্রদানের প্রস্তাব দিয়ে আবশ্যিক দায়মুক্ত হতে চেয়েছিল। কিন্তু ওই ভাতা দুঃস্থাদের পরিবর্তে এক শ্রেণির মনুষ্যত্বহীন দালালের খপ্পরে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল থাকায়, পত্রপাঠ শীর্ষ আদালত ওই প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছিল।
বস্তুত, আর এক ধাপ এগিয়ে সুপ্রিম কোর্ট পরিষ্কার ভাষায় জানিয়ে দিয়েছিল; বৃন্দাবনে নির্বাসিত অসহায় বিধবাদের মাথা গোঁজার জন্য মাথার ওপরে কোনও রকমে একটা আচ্ছাদন নির্মাণ করলেই সমস্যার কোনও সুষ্ঠু সমাধান হবে না। কারণ, ওই বিপন্ন মহিলারাও জানেন, সরকারি পান্থশালার পরিবেশ কত জঘন্য তথা গ্লানিময়। এর চার দেওয়ালের অভ্যন্তরে নিরন্তর চলে বৈষম্য, পীড়ন এবং দুর্নীতির ঢালাও কারবার। অন্যায় প্রতিবিধানে নজরদারির কোনও ব্যবস্থা নেই, নেই জবাবদিহির কোনও দায়। অতএব, গ্লানি ও হীনম্মন্যতা লাঘবের জন্য এঁদের সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে এনে কী ভাবে মর্যাদাপূর্ণ জীবন দেওয়া যায়, সরকারদ্বয়কে সে ব্যাপারে ব্যাপক ভাবনা-চিন্তা করে যথা শীঘ্র সম্ভব ঠিক পরিকল্পনা রূপায়ণ করতে হবে। একই সঙ্গে করুণাপ্রার্থীর পরিবর্তে এঁদের পূর্ণ নাগরিকের সম্মান দিতে হবে। |
পরিতাপের বিষয়, বৃন্দাবনের প্রতিটি অসহায় বিধবার জীবন যথেষ্ট মূল্যবান মনে করে চলতি কুনিয়ম ও কুপ্রথা পরিবর্তনে সংশ্লিষ্ট দুই সরকার সার্থক উদ্যোগ গ্রহণ না করায়, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের এক বছর বাদেও কাজের কাজ এক চুলও অগ্রসর হয়নি। সামগ্রিক ঘটনাবলি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, আমাদের দেশে দরিদ্র-নিম্নবিত্ত বিধবারা কত নিরুপায়। এঁদের আর্থ-সামাজিক অবস্থান কত ভঙ্গুর তথা নিরাপত্তাহীন। পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশা সরকারের বিবেক পচতে শুরু করায় এ নিয়ে মাথা ঘামানোর বিন্দুমাত্র তাগিদ অনুভব করে না। এ লজ্জা সমগ্র জাতির।
মানস কুমার রায়চৌধুরী কলকাতা-২৬
|
সুধীর চক্রবর্তী মহাশয় লিখেছেন, “...সবচেয়ে তথ্যভিত্তিক ও অনুসন্ধিৎসু গবেষণার কাজটি করে গিয়েছেন ১৮৭০ সাল বরাবর অক্ষয়কুমার দত্ত। তাঁর ‘ভারতবর্ষীয় উপাসক সম্প্রদায়’ বইয়ের দুই খণ্ডে।” (‘আমার প্রথম বই’, রবিবাসরীয়, ২৮-৪) এই প্রসঙ্গে জানাই, অক্ষয়কুমার দত্ত (১৫-৭-১৮২০ থেকে ২৮-৫-১৮৮৬) তাঁর গবেষণামূলক কাজকে ‘ভারতবর্ষীয় উপাসক সম্প্রদায়’ বইয়ের তৃতীয় ভাগেও প্রসারিত করেছিলেন। তবে শেষ জীবনে দুরারোগ্য শিরোরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি বইটির প্রথম, দ্বিতীয় ভাগের সংশোধিত সংস্করণ ও তৃতীয় ভাগ গ্রন্থাকারে প্রকাশ করতে পারেননি।
ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, “অক্ষয়কুমার ‘ভারতবর্ষীয় উপাসক সম্প্রদায়’-এর ৩য় ভাগ প্রকাশ করিয়া যাইতে পারেন নাই। তাঁহার মৃত্যুর পর ইহার পাণ্ডুলিপি হইতে মাসিক পত্রে কোন কোন প্রবন্ধ প্রকাশিত হইয়াছে। আমরা এই কয়টির সন্ধান পাইয়াছি—
১) ‘জৈন’—‘হিতৈষী’, পৌষ, ফাল্গুন-চৈত্র ১৩০৫।
২) “বাবালালি উপাসক সম্প্রদায়”— ‘হিতৈষী’, মাঘ ১৩০৫।
৩) “শিবনারায়ণী সম্প্রদায়”— ‘সাহিত্য’, বৈশাখ ১৩০৬।
৪) “ভারতবর্ষীয় উপাসক সম্প্রদায়”— ‘প্রবাসী’, শ্রাবণ ১৩১৭। (তথ্যসূত্র: ‘অক্ষয়কুমার দত্ত’, সাহিত্য-সাধক-চরিতমালা, প্রথম খণ্ড, বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষৎ, ষষ্ঠ মুদ্রণ, মাঘ ১৩৮৮, পৃ-৩৮।)
স্বপনকুমার দে। শিক্ষক, বাংলা বিভাগ, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা-৭৩ |