|
|
|
|
ত্রিস্তরের বহু আসনেই প্রার্থী নেই |
নির্দলদের সমর্থন করেই মুখরক্ষার চেষ্টা বামেদের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
প্রতীকে নয়, বহু জায়গাতেই দলীয় কর্মীদের নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছে সিপিএম। এ বারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রাক্তন শাসকদল এই কৌশল নিয়েছে একদা ‘লালদুর্গ’ কেশপুর, শালবনি, বিনপুর-সহ পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকায়।
হঠাৎ কেন এমন সিদ্ধান্ত? সিপিএম সূত্রের খবর, পঞ্চায়েত ভোটে এটাই দলের রণকৌশল। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অনেকেই প্রার্থী হতে চাননি। দলীয় প্রতীকে প্রার্থী হলে তাঁদের উপর হামলা হতই। যেমন এখন বিভিন্ন এলাকায় হচ্ছে। তাই এই কৌশল বলে সিপিএম নেতৃত্বের একাংশের মত। যদিও রাজনৈতিক মহল মনে করছে, রাজ্যে পালাবদলের পর জেলার বহু এলাকাতেই সিপিএমের সংগঠনে ধস নেমেছে। তাই এখন নির্দলদের সমর্থন করে আসলে মুখরক্ষা করতে চাইছে দল। বার্তা দিতে চাইছে, প্রত্যক্ষ ভাবে না থাকলেও পরোক্ষ ভাবে লড়াইয়ে রয়েছে তারা।
বহু আসনে নির্দলদের সমর্থন করা হবে, এমন ইঙ্গিত আগেই দিয়েছিলেন জেলা সিপিএম নেতৃত্ব। যদিও এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে সিপিএমের জেলা সম্পাদক দীপক সরকারের প্রতিক্রিয়া, “এ নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা হবে। আমাদের রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে সংবাদমাধ্যমে বলব কেন? আলোচনার পরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।” তবে দীপকবাবু মানছেন, যাঁরা দলের কর্মী, সিপিএমের মিটিং-মিছিলে যান, তাঁরা নির্দল হিসেবে দাঁড়িয়েছেন। সিপিএমের জেলা সম্পাদকের কথায়, “ওঁদের তো সমর্থন করতেই হবে।” দলীয় সূত্রে খবর, গ্রাম পঞ্চায়েতে দুশো’রও বেশি আসনে দলীয় কর্মীদের নির্দল হিসেবে দাঁড় করিয়েছে সিপিএম। এই কৌশল নিয়েছে সিপিআইও। অন্তত ১৪টি আসনে সিপিআই কর্মীরা নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে গ্রাম পঞ্চায়েতের ১২টি আসন। পঞ্চায়েত সমিতির ২টি আসন। সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক সন্তোষ রাণা বলেন, “সামান্য কিছু আসনে আমরা নির্দল প্রার্থীকে সমর্থন করছি। তবে ফ্রন্টের আসন বণ্টনের সিদ্ধান্তের বাইরে যাইনি।”
পরিবর্তনের পর দলের ‘শক্ত ঘাঁটি’ গড়বেতা, কেশপুর, চন্দ্রকোনায় সাংগঠনিক অবস্থা কোথায় এসে ঠেকেছে, পঞ্চায়েতের প্রার্থী চূড়ান্ত করতে গিয়ে তা টের পেয়েছে সিপিএম। এমনকী, বেশ কিছু আসনে দলের কর্মীরা নির্দল প্রার্থী হিসেবেও মনোনয়ন দাখিল করতে রাজি হননি। ফলে, ওই সব আসনগুলোয় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিততে চলেছে তৃণমূল। গ্রাম পঞ্চায়েতে সিপিএম প্রার্থী দিতে পেরেছে ২,৪৯৩টি আসনে। সিপিআই ২৬৮টি আসনে। পঞ্চায়েত সমিতিতে সিপিএম প্রার্থী দিতে পেরেছে ৬০২টি আসনে। সিপিআই ৬৩টি আসনে। গড়বেতায় তো সিপিএমকে দূরবীন দিয়ে খোঁজার দশা। গড়বেতা ১ ব্লকে গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৬২টি আসনের একটিতেও সিপিএমের প্রার্থী নেই। পঞ্চায়েত সমিতির ৩৫টি আসনের মধ্যে মাত্র ৩টিতে প্রার্থী রয়েছে। গড়বেতা ৩ ব্লকে গ্রাম পঞ্চায়েতের ১১৫টি আসনের মধ্যে সিপিএমের প্রার্থী রয়েছে মাত্র ৫টিতে। পঞ্চায়েত সমিতির ২১টি আসনের মধ্যে ৫টিতে প্রার্থী দিয়েছে সিপিএম। কেশপুরে গ্রাম পঞ্চায়েতের ২৩০টি আসনের মধ্যে সিপিএমের প্রার্থী রয়েছে ২৩টি আসনে। পঞ্চায়েত সমিতির ৪৫টি আসনের মধ্যে ৮টি আসনে তাদের প্রার্থী রয়েছে।
এই পরিস্থিতির জন্য শাসকদলের সন্ত্রাসকে দায়ী করছে সিপিএম। অভিযোগ, বহু জায়গায় প্রার্থী ঠিক করেও শেষ মুহূর্তে মনোনয়ন দাখিল করা যায়নি। সম্ভাব্য প্রার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছে। এখনও মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। দীপক সরকারের কথায়, “সর্বাত্মক আক্রমণ চলছে। নির্বাচনে মানুষই সন্ত্রাসের জবাব দেবে।” অভিযোগ মানতে নারাজ তৃণমূল। দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের কটাক্ষ, “আমরা তো ভাল ফুটবলই খেলতে পারলাম না। আসলে আমাদের তো ভাল কোচ নেই! যে শেখাবে, কী ভাবে ফাঁকা মাঠে গোল দিতে হয়!” তাঁর কথায়, “সন্ত্রাসের নালিশ না করে সিপিএম বরং ২০০৩ আর ২০০৮-এর পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরিসংখ্যানটা একবার দেখুক। কতগুলো আসনে ওরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিল। মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েই এখন অপপ্রচার করছে।” তবে সব ছাপিয়ে সামনে আসছে বহু সিপিএম কর্মীর নির্দল প্রার্থী হিসেবে লড়ার বিষয়টি। এই কৌশলে সিপিএমের কতটা রাজনৈতিক সুবিধে হয়, সেটাই এখন দেখার। |
|
|
|
|
|