সম্পাদকীয় ২...
বেতন ও স্বচ্ছতা
কদা দোর্দণ্ডপ্রতাপ কো-অর্ডিনেশন কমিটি অধুনা কিঞ্চিৎ মোলায়েম হইয়াছে। মন্ত্রীদের বেতনবৃদ্ধির প্রসঙ্গে কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক ‘তীব্র আপত্তি’ জানান নাই। প্রশ্ন করিয়াছেন, যেখানে সরকারি কর্মীদের ২৮ শতাংশ মহার্ঘভাতা বকেয়া পড়িয়া আছে, সেখানে মন্ত্রীদের বেতনবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত কেন? প্রশ্নটি এই বঙ্গভূমে মোক্ষম। পৃথিবীর যে কোনও সভ্য প্রান্তে দাবি করা হইত, মন্ত্রীদের বেতন বাড়ুক, সঙ্গে কর্মীদের বকেয়াও মিটাইয়া দেওয়া হউক। পশ্চিমবঙ্গে বিপরীত প্রান্ত হইতে দেখাই দস্তুর। কোনও চাকুরিজীবীর— সে তিনি মন্ত্রীই হউন অথবা দফতরের কর্মী— বেতন নির্ভর করা উচিত মাত্র দুইটি বিষয়ের উপর:
, তাঁহাদের দক্ষতা ও কাজের ভার;
, বেতন প্রদানকারীর আর্থিক ক্ষমতা। পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রীরা যদি কাজের তুলনায় কম বেতন পান, এবং সরকারের যদি অধিকতর বেতন প্রদানের সামর্থ্য থাকে, তবে তাঁহাদের বেতন বাড়িবে। আর পাঁচ জনের ন্যায় তাঁহারাও চাকুরিই করেন— আইনসভায় সাধারণ মানুষের প্রতিনিধিত্বের চাকুরি, প্রশাসনের কার্য নির্বাহ করিবার চাকুরি। মন্ত্রী বলিয়াই তাঁহারা অন্যদের হইতে পৃথক, এই ধারণাটির মধ্যে আসলে মহত্ত্ব আরোপের একটি অনতিপ্রচ্ছন্ন চেষ্টা রহিয়াছে। নিতান্তই অহেতুক চেষ্টা। বরং, মন্ত্রীরা যাহাতে যথার্থ বেতন বুঝিয়া লইবার পর নিজেদের দায়িত্ব পালনে যথাসাধ্য যত্নবান হন, তাহা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সরকারি কর্মীদেরও বাড়তি মহার্ঘভাতা জুটুক, এবং তাঁহারাও কাজে মন দিন।
তবে, কর্মীদের একটি বড় অংশের অন্য একটি প্রশ্নকে উড়াইয়া দেওয়ার উপায় নাই। তাঁহারা বলিয়াছেন, মন্ত্রীরা বেতন বাবদ যদি বা কিছু কম টাকা পানও, অন্যান্য প্রাপ্তির চোটে তাহা পুষাইয়া যায়। গাড়ি, বাড়িভাড়া, চিকিৎসার খরচ— সবই সরকার জোগায়। বাস্তবিকই, মন্ত্রী বলিয়া নয়, সাধারণ ভাবে রাজপুরুষদের অনেকাংশের ক্ষেত্রে ইহাই এ দেশে রীতি। এই রীতির আমূল সংস্কার জরুরি। সরকার যদি বোধ করে যে জনপ্রতিনিধি, মন্ত্রী বা রাজবৃত্তের অন্যান্য উচ্চবর্গের সদস্যদের বাড়ি, গাড়ি, চিকিৎসা বা অন্য কোনও প্রয়োজনের টাকা জোগানো সরকারের কর্তব্য— এবং সেই বোধটি যদি যুক্তিসঙ্গত হয়— তবে সেই কর্তব্য পালন করিবে, ইহাতে অযৌক্তিক কিছু নাই। কিন্তু, যে পন্থায় তাহা করা হয়, সেই পথে নহে। বাড়ি হউক, গাড়ি হউক, অন্য সুবিধা হউক, নির্ধারিত উপকরণের অর্থমূল্য বাজারদরে হিসাব করিয়া বেতনের সহিত যোগ করিয়া নগদে দেওয়াই বিধেয়। চিকিৎসা বা অন্য কোনও খরচের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। তাহার পর প্রাপক বুঝিয়া লইবেন তিনি কোথায় থাকিতে চাহেন, কোন গাড়ি চড়িতে চাহেন। নগদে হিসাব বুঝাইয়া দিলে জানা সম্ভব হইবে, কাহার জন্য রাজকোষ হইতে মাসে কত টাকা ব্যয় হয়। যে সরকারি কর্মীরা মন্ত্রীদের বেতন-বহির্ভূত প্রাপ্যের কথা তুলিয়াছেন, তাঁহাদের মনে সংশয় আছে। যাঁহারা কথাটি তোলেন নাই, হয়তো তাঁহাদের মনেও আছে। হিসাবে স্বচ্ছতা থাকিলে এই সংশয়ের অবকাশ থাকিবে না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.