গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় চালু হওয়ার পর ৬ বছর কেটে কেটেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজস্ব বিধি (স্ট্যাটিউট) তৈরি করতে পারেননি বলে অভিযোগ। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক, ছাত্র, অভিভাবক মহলে ক্ষোভ দেখা দিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, দেড় বছর আগে বিধি তৈরির কমিটি গড়া হলেও বৈঠকই হয়নি। সম্প্রতি বিষয়টি জানার পরই শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু তিন মাসের মধ্যে ওই বিধি তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছেন। দেড় মাস ধরে উপাচার্য ছুটি থাকায় সময়সীমার মধ্যে বিধি কী ভাবে তৈরি হবে তা নিয়ে সমস্যায় কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার শ্যামসুন্দর বৈরাগ্য বলেন, “গত ১৭ মে শিক্ষামন্ত্রী কলকাতায় রাজ্যের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের বৈঠকে ডাকেন। আমি উপাচার্যের প্রতিনিধি হিসাবে গিয়েছিলাম। শিক্ষামন্ত্রী তিন মাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি তৈরি করা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়টি উপাচার্যকে জানানো হয়েছে।” এই প্রসঙ্গে উপাচার্য অচিন্ত্য বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগের বহু চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর মোবাইল টেলিফোনও বন্ধ রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১২ সালের ২৫ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় বিধি তৈরির জন্য একটি কমিটি তৈরি হয়েছিল। কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সিলের সদস্যরা ছাডাও ফিনান্স অফিসার, ডেভলপমেন্ট অফিসারকে রাখা হয়। কাউন্সিল সদস্য তথা বিধি কমিটির সদস্য দুলাল ঘোষ বলেন, “সেই কমিটির একটি বৈঠক ডাকা হয়নি। নিজস্ব বিধির উপর বিশ্ববিদ্যালয় চলে। ছয় বছরেও তা হল না, এটা ভাবতে অবাক লাগছে।” তিনি জানান, গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ব্যর্থতার জন্যই এই পরিস্থিতি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এই রকম ‘দশায়’ ক্ষুব্ধ স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী। তিনি বলেছেন, “শিক্ষামন্ত্রী সবই জানেন। পঞ্চায়েত ভোটের পরে উপাচার্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা শিক্ষামন্ত্রীকে বলব।” বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন রাজ্য বিধানসভার উচ্চ শিক্ষা দফতরের স্টান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান জীবন মুখোপাধ্যায়ও। তৃণমূলের কলেজ শিক্ষক সংগঠন ‘ওয়েবকুপা’র উত্তরবঙ্গের সম্পাদক নরেশ রায় বলেন, “কাউন্সিলের ১৯ সদস্যের মধ্যে ১৬ জন মালদহ-সহ দুই দিনাজপুর জেলার বাইরে। স্থানীয়রা কাউন্সিলে থাকলে সমস্যা হত না।”
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, বিধি তৈরি না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে যাওয়া ছাত্রছাত্রীরা কোনও সার্টিফিকেট পাচ্ছেন না। এতে অনেক ছাত্রছাত্রী গবেষণার কাজ করতে পারছেন না। বিষয়টি নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। ইউজিসি-র অনেক অনুদান মিলছে না। এখনও কোনও সমাবর্তন হয়নি। শিক্ষকদের ছুটির নিয়মও চালু করা যায়নি। এর পাশাপাশি, বিভিন্ন বিভাগের ‘ডিন’ নিয়োগ ও ১৭ শিক্ষকের স্থায়ীকরণের প্রক্রিয়া আটকে রয়েছে। |