লোকসভা বা পঞ্চায়েত, বামেদের ভোট পরিচালনার দায়িত্বে থাকতেন ওঁরা দু’জন। প্রার্থী পরিচয় করানোই হোক অথবা সভা-মিছিলের আয়োজন, ওদের ওপরে দায়িত্ব দিলে সিপিএম-ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা নেতারাও নিশ্চিন্ত থাকতেন বলে বাম অন্দরের খবর। বাম কর্মীসমর্থক থেকে এলাকার বাসিন্দা সকলের কাছে ‘মানিকজোড়’ নামেই পরিচিত তাঁরা। এ বারও দিনহাটা মহকুমা জুড়ে প্রচার চালাচ্ছেন ওঁরা। একই কায়দায় বাইকে পতাকাও লাগায়ো রয়েছে। বদলেছে পতাকার রং। লাল থেকে ঘাসফুল-তেরঙ্গা।
শিবির বদলে ফেলা এই দুই ‘ঘরের ছেলেকে’ নিয়েই চিন্তায় বাম শিবির। এক জন খগেশ্বর বর্মন। দিনহাটা ২ পঞ্চায়েত সমিতির সিপিএমের প্রাক্তন সভাপতি। অন্য জন জগদীশ বসুনীয়া। টানা দশ বছর সিতাইয়ের আদাবাড়ি পঞ্চায়েতের ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রধান ছিলেন। পঞ্চায়েত ভোটে দিনহাটা ২ ও সিতাই ব্লকে ভোট যুদ্ধে এ বার তাঁরা তৃণমূলের হয়ে ভোটের দায়িত্বে। দল বদলে ফেলায় সভা মিছিলে বাম নেতারা দু’জনের বিরুদ্ধে প্রচার চালালেও উদ্বেগ কাটছে না। ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ বলেন, “কেউ পুরানো ঝাল মেটাতে, কেউ আবার ব্যাক্তিগত আক্রোশে তৃণমূলকে ব্যবহার করছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাঁরাই গোলমাল পাকাচ্ছেন।” সিপিএম জেলা সম্পাদক তারিণী রায় বলেন, “খগেশ্বর যাওয়ায় দিনহাটার বাম দুর্গে তৃণমূল প্রার্থী দিতে পারছে। জনতার রায়ে জয় বামপন্থীদের হবে।” বাম শিবিরের অন্দরের খবর, দিনহাটা ২ ব্লকে বুড়িরহাট, নাজিরহাট, বাসন্তীরহাট, শালমারার দায়িত্বে থাকতেন খগেশ্বর বর্মন। ২০০৮ সালে পঞ্চায়েত ভোটে খগেশ্বরবাবু সিপিএম ছেড়ে ফরওয়ার্ড ব্লকে যাওয়া বীরেন রায়ের কাছে হেরে যান। খগেশ্বরবাবু তৃণমূল শিবিরে নাম লেখানোর পর তাই বুড়িরহাটে ফরওয়ার্ড ব্লক কর্মীদের ওপর হামলায় পুরানো ঝাল মেটানোর অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। তবে এই অভিযোগকে গুরুত্ব দিতে রাজি নন খগেশ্বরবাবু। সকাল থেকেই শুরু হচ্ছে বাইক মিছিল। তৃণমূল কংগ্রেসের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “খগেশ্বর ও জগদীশকে বামেরা ভাল কাজে ব্যবহার করেননি। দুই জনেই এবার তৃণমূলের টিকিটে পঞ্চায়েত সমিতিতে লড়বেন।
বামেদের তোলা সন্ত্রাসের নালিশ উড়িয়ে খগেশ্বরবাবুর বক্তব্য, “২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে উদয়ন গুহের জয়ে আমারও অবদান ছিল। দল বদলানোয় দিনহাটা ২ ব্লকে বামদুর্গ তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়েছে।” অন্য দিকে জগদীশ বসুনীয়া বলেন, “এলাকার উন্নয়ন নিয়ে এতদিন বাম নেতারা ফাঁকা বুলি বলেছেন। আমার মতো জনগণও সেসব বিশ্বাস করে ঠকেছে। সেই হতাশার কথাই বলছি, তাতেই বামেদের ক্ষোভ হচ্ছে।” |