পড়লে কি খেলা বাদ? উঠছে প্রশ্ন
মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকের মেধা তালিকায় উপরের দিকে যাদের নাম রয়েছে, তাদের অনেকেরই খেলা বা বিনোদনের সঙ্গে কোনও বিরোধ নেই। কেউ নিয়মিত ফুটবল, ভলিবল খেলেছেন। কেউ টিভিতে সিনেমা দেখা বাদ দেননি। কিন্তু সেটাই সার্বিক চিত্র নয়। পড়াশোনায় তুখোড় ছেলে বা মেয়েদের বেশিরভাগেরই চেনা হয়নি ফুটবল খেলার মাঠ, নাটক-আবৃত্তি-গান-নাচের অনুমতি মেলেনি বাবা-মায়ের কাছ থেকে। ছাত্র রাজনীতি? পাগল নাকি! শুধু আরও আরও নম্বরের জন্যই এক আশ্চর্য জীবনযাপন।
কিন্তু এই ‘ভাল ছেলেমেয়েদের’ জীবনকে কী ভাবে দেখেন সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের সেই মানুষজন, যারা প্রতি দিন মানুষের সঙ্গে সরাসরি জুড়ে থাকেনকেউ রাজনীতির ময়দানে, কেউ খেলার মাঠে, কেউ আবার সাংস্কৃতিক মঞ্চে।
মনোযোগ টেনে রাখছে পড়াশোনাই...ফাইল চিত্র।
সংস্কৃতির গণ্ডির বাইরে
সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে কী উত্‌সাহ আছে প্রচুর নম্বর পাওয়া ভালদের? কল্যাণী নাট্যচর্চা কেন্দ্রের পরিচালক-অভিনেতা কিশোর সেনগুপ্ত সাফ বলেন, “না। আমি আমার অভিজ্ঞতায় পাইনি। খেলার ব্যাপারে তবু একটা প্যাশন কাজ করে। কিন্তু যারা পড়াশোনায় খুব ভাল, তারা নাটকের দলে আসছে, এটা কষ্টকল্পনা।” শান্তিপুর সাংস্কৃতিকের কৌশিক চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সন্ধ্যাবেলায় টিউশন কামাই করে নাটক দেখতে আসার কথা বললে আঁতকে উঠে অভিভাবকরা।” কলকাতায় পড়াশোনায় ভাল ছেলেমেয়েরা নাটকেও উত্‌সাহী। কিন্তু মফস্‌সলে ছবিটা উল্টো। কৌশিকের কথায়, “অথচ ৭৭-৭৮ সালে আমরা যখন নাটক করতে আসি, তখন স্কুলে পড়তাম এবং ক্লাসে প্রথম হতাম।” কৃষ্ণনগরের গোপা মুখোপাধ্যায়ের অভিজ্ঞতা হল, “অভিভাবকেরাই ছোটদের হাত ধরে নাচের স্কুলে নিয়ে আসেন। কিন্তু সন্তান ক্লাসে ভাল ফল করলেই, নাচের ক্লাস বন্ধ করে দেন।” শিবনাথ ভদ্রেরও বক্তব্য, “নাটকের মহলার বদলে সন্তানকে গৃহশিক্ষকরে কাছেই পাঠাতে চান অভিভাবকেরা।” অভিনেতা-পরিচালকেরা জানান, নাটক তো ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা দিতে পারে না, তাই বাধ্য হয়েই ছেড়ে দিতে হয় দলের উজ্জ্বল সদস্যদের।

প্রভাব বাড়াতেই রাজনীতি
পরীক্ষায় দুর্দান্ত ফল করা ভাল ছেলেমেয়েরা আগে মতাদর্শকে ভালবেসে রাজনীতিও করতে আসত। এখন ভাল পড়ুয়ারা রাজনীতিকে এড়িয়ে চলেন। কলেজ শেষে তাঁদের আর মূলধারার রাজনীতির ত্রি-সীমানায় দেখা যায় না। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি জয়ন্ত পাল বলেন, “ভাল ছেলেরা রাজনীতিতে মানিয়ে নিতে পারে না। অনেক ভাল ছেলে রাজনীতি করতে এসেও সরে গিয়েছে। যারা থাকে, তারা নানা উদ্দেশ্য নিয়েই থাকে। কেউ আসে প্রভাব বাড়াতে, কেউ আসে মাতব্বরি করতে, আবার কেউ আসে বন্ধু তৈরি করতে। কলেজ শেষ, রাজনীতিও শেষ।” এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক জাহাঙ্গির আলি বিশ্বাস বলেন, “আসলে রাজনীতির কদর্য যে রূপটি রয়েছে তাতে মেধাবি ছাত্ররা এদিকে আসছে না।” ডিওয়াইএফআইয়ের জেলা সম্পাদক সুমিত বিশ্বাস বলেন, “কেরিয়ার সর্বস্ব ভাল ছেলেরা সেই সব কাজে জড়ায় না, যেখানে অনেকের জন্য কাজ করতে হয়। তবে এই নিয়মেরও ব্যতিক্রম আছে।”

মাঠেও যাচ্ছে না
কৃষ্ণনগরে দীর্ঘদিন ধরে ফুটবল কোচিং করান নির্মল দাস। তাঁর কথায়, “ধরুন একটি ছেলে ভাল খেলে। কিন্তু সে পরীক্ষায় ভাল ফল করলেই অভিভাবকেরা খেলা বন্ধ করে দেন। বেশ কয়েক বছর ধরে দেখছি, সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশ থেকেই ছেলেরা খেলতে আসছে।” আঞ্চলিক ক্রীড়া সংস্থার প্রাক্তন সম্পাদক তথা নদিয়া ক্লাবের ক্রীড়া সম্পাদক গোবিন্দ বাগ বলেন, “পড়াশোনায় মনোযোগ নেই, মাঝারি মানের ছাত্র যারা নিয়মিত মাঠে আসে, তাদের সংখ্যাও এমন কমেছে যে, আমাদের ফুটবল কোচিং ক্যাম্প গত বছর থেকে তুলে দিয়েছি।” তিনি জানান, নবদ্বীপে ৪৮টি ক্লাব রয়েছে। অথচ সাব-জুনিয়র বা জুনিয়র কোনও ফুটবল দল পাওয়া যাচ্ছে না। অথছ ছবিটা এমন ছিল না। ৮০’র দশক পর্যন্ত ভাল ছেলেরা মাঠে আসতেন। আবার পড়তেনও।

স্কুলের অনুষ্ঠান অন্য কথা
তবে আশার কথা শুনিয়েছেন কৃষ্ণনগর একাডেমি স্কুলের অধ্যক্ষ সুব্রত চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “স্কুলের বার্ষিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি অন্য অনুষ্ঠানেও ছাত্রছাত্রীদের সমান ভাবে যোগ দিতে দেখি। খুব উত্‌সাহের সঙ্গেই তারা যোগ দেয়।” অন্য কিছু স্কুলেও একই কথা শোনা গিয়েছে। কেউ বলছেন, ভাল ছাত্রছাত্রীরা স্কুলের নিজস্ব অনুষ্ঠানে আবৃত্তি থেকে নাচ, খেলা সবেতেই জড়িয়ে পড়ে। কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলের বাংলার শিক্ষক স্মরজিত্‌ মণ্ডল অবশ্য বলেন, “স্কুলে সরস্বতী পুজো থেকে রবীন্দ্রজয়ন্তীতে ভাল ছেলেরা যোগ তো দেয়ই না, এমনকী সেদিন স্কুলেও আসে না।” তবে শিক্ষক উত্‌পল ভট্টাচার্যের অভিজ্ঞতা একটু অন্যরকম। তিনি বলেন, “স্কুলের অনুষ্ঠানে ক্লাসের ভাল ছেলেদেরও দেখেছি। স্কুল বলেই হয়তো সেখানে অভিভাবকদের বাধা কম থাকে।
তাই আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতাটাও পায় ছাত্রছাত্রীরা।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.