|
|
|
|
কাছাড়ে প্রৌঢ়কে পিটিয়ে খুন |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলচর |
দেবতার ‘রোষ’ থেকে বাঁচতেই স্ত্রী, সন্তানদের সামনে বিবস্ত্র করে প্রৌঢ়কে পিটিয়ে খুন করে কুসংস্কারে আচ্ছন্ন কাছাড়ের প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ। গলায়, পিঠে ঢুকিয়ে দেওয়া হল ত্রিশূলের ফলা। এখানেই শেষ নয়, গণপিটুনির পর অর্ধন্মৃত ওই প্রৌঢ়কে মাটিতে পুঁতে দেওয়া হয়।
কাছাড়ের লক্ষ্মীপুর মহকুমার নারায়ণপুর গ্রামে এক ব্যক্তিকে অন্ধবিশ্বাসের জেরেই এমনই পৈশাচিক ভাবে হত্যা করার বিবরণ পাওয়া গিয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, নিহত জওহরলাল মুড়ার (৫২) দেহ মাটি খুঁড়ে উদ্ধার করে ময়না তদন্তে পাঠানো হয়েছে। ঘটনায় জড়িত অভিযোগে এখনও পর্যন্ত তিন মহিলা-সহ ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে খুন ও পুলিশের কাজে বাধাদানের অভিযোগ আনা হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত কয়েকদিন আগে। নারায়ণপুর গ্রামে অজানা অসুখের প্রকোপে অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দা শিউকুমার মোড়া দাবি করে, স্বপ্নে মা কালী দেখা দিয়েছেন। দেবতার নজর পড়েছে জওহরলালের উপর। তাঁকে দেবীর কাছে বলি দিলেই রোগ সারবে সকলের। ওই কথা মুখে মুখে রটে যায়। |
|
উদ্ধার করা হচ্ছে প্রৌঢ়ের দেহ। ছবি: কবীর আহমেদ লস্কর |
জেরায় ধৃতরা জানিয়েছে, জওহরলালের সঙ্গে কারও শত্রুতা ছিল না। ওই স্বপ্নের বিষয়ে জানার পর বৈঠকে বসেন এলাকার মানুষ। ডাকা হয় জওহরলালের তিন ছেলেমেয়েকেও। জনতার সিদ্ধান্ত তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়। অসহায় তিন সন্তানকে শাসানির সুরে বলা হয়, মায়ের স্বপ্নাদেশতাই ওই কাজে কেউ বাধা দিলে রেহাই মিলবে না।
গ্রামের লোকেদের কাছ থেকে তদন্তকারীরা জেনেছেন, বৃহস্পতিবার সূর্য ওঠার আগেই পুজোর আয়োজন শুরু হয়। বেলা বাড়তে লোকের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। সবাই উঁকি দিচ্ছিলেন জওহরলালের ঘরে। কড়া প্রহরায় তখন সেখানে বন্দি অসহায় ওই প্রৌঢ়। সময় হওয়ার পর পুজোর জায়গায় ধরে আনা হয় তাঁকে। স্ত্রী, ছেলেমেয়েরা বারবার সকলকে এ কাজ না-করার আর্জি জানিয়েছিলেন। অঝোরে কাঁদছিলেন তাঁরা। ওই পরিবারের সবাইকে ঘরে আটকে দেওয়া হয়।
পুলিশ জেনেছে, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কুসংস্কারাচ্ছন্ন উন্মত্ত জনতার হাতপায়ে ধরে প্রাণভিক্ষা চেয়েছিলেন জওহরলাল। কেউ শোনেনি তাঁর কথা। স্নান করিয়ে এনে বিবস্ত্র অবস্থায় তাঁর গলায় ফুলের মালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। যে ভাবে বলির আগে পশুর গলায় মালা পরানো হয়। অসহায় প্রৌঢ়কে ঘিরে এরপর শুরু হয় উদ্দাম নৃত্য। তাতে সামিল হয় গ্রামের নারী-পুরুষ, কিশোর-বৃদ্ধ সবাই। ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলে দেওয়া হয় জওহরলালকে। শুরু হল গণপিটুনি। উল্লাসে চাপা পড়ে যায় প্রৌঢ়ের আর্তনাদ। গলায়, পিঠে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় ত্রিশূলের ফলা।
ধৃতরা জেরায় পুলিশকে জানিয়েছে, গ্রামের পাশে গর্তও খোঁড়া ছিল। টেনেহিঁচড়ে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয় রক্তাক্ত দেহটিকে। ভেতরে ফেলে মাটি ভরাট করে দেওয়া হয়। গর্তে ফেলার সময়ও হয়তো বেঁচে ছিলেন জওহরলাল।
তদন্তকারী পুলিশ অফিসার জানান, শুক্রবার সকালেও ওই গ্রামে পুজো চলছিল। গর্তটিকে ঘিরে নাচছিল এলাকার মানুষ। পুলিশ দেখেই খেপে ওঠে তারা। লাঠিচার্জ করে জনতাকে সরানো হয়। উদ্ধার করা হয় নিহতের দেহটিকে। |
|
|
|
|
|