|
|
|
|
মোড়ের মাথায় নীতীশ, বাছতেই হবে পথ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি-র প্রচার কমিটির চেয়ারম্যান পদে নরেন্দ্র মোদীর নাম ঘোষণার সঙ্গে-সঙ্গেই সর্বভারতীয় রাজনীতিতে সেই অমোঘ প্রশ্নটি আজ মাথা তুলল! এ বার কী করবেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার? তিনি কি এনডিএ ছাড়বেন? নাকি রাজনৈতিক ভাবে মোদীর সমালোচনা করেও শেষমেষ কোনও কৌশলে থেকে যাবেন বিরোধী জোটে?
নীতীশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য এর উত্তর খোঁজাটা জরুরি। কিন্তু প্রশ্নটা ঢের বেশি গুরুত্বপূর্ণ কংগ্রেস-বিজেপি-র কাছে। কারণ, ভোটের আগে জোট মজবুত করতে পারলে মসনদ দখলের লড়াইয়ে বেশ খানিকটা এগিয়ে থাকা যায়।
মোদী প্রশ্নে নীতীশের বিরোধিতা যে কতটা তীব্র, সম্প্রতি এক বৈঠকে তিনি তা বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, ভোটের আগে এনডিএ-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দিতে হবে। তা না করে কেবল প্রচার কমিটির চেয়ারম্যানের নাম ঘোষণা করলে চলবে না। কারণ, তাতেও এটাই প্রতিপন্ন হবে যে আখেরে সেই প্রচারের মুখই হলেন প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী।
মূলত সেই কারণে ‘গোয়া ঘোষণা’-র আগেই কাল নীতীশকে ফোন করেছিলেন বিজেপি সভাপতি। বিহারের মুখ্যমন্ত্রীকে রাজনাথ বলেন, এটা আমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নয়। সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত। তা ছাড়া মোদীকে কেবল বিজেপি-র লোকসভা ভোটের প্রচার কমিটির প্রধান করা হচ্ছে। এর সঙ্গে এনডিএ-র কোনও সম্পর্ক নেই। নীতীশ যাতে বিজেপি-র এই অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন মেনে নেন, সে জন্য রাজনাথ এই যুক্তিও দেন যে অতীতে দলের যাঁরা লোকসভা ভোটের প্রচার কমিটির প্রধান হয়েছেন, তাঁরা কেউই প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ছিলেন না।
লালকৃষ্ণ আডবাণী, প্রমোদ মহাজন, অরুণ জেটলি এই দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে এর পরেও যদি আপত্তি থাকে, তবে নীতীশ যেন শুধু রাজনৈতিক ভাবে এর সমালোচনা করেই ক্ষান্ত হন। কোনও অবস্থাতেই যেন এনডিএ না ছাড়ে তাঁর দল।
নীতীশকে বোঝানোর এই চেষ্টার কথা রাজনাথ আজ প্রকাশ্যে নিয়ে এলেও সূত্রের খবর, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে কোনও স্পষ্ট জবাব দেননি। বরং জানিয়েছেন দলের অভিমত জেনে নিয়ে তবেই তাঁর চূড়ান্ত মত জানাবেন তিনি। গোয়াতে আজ বিজেপি-র ঘোষণার পর সংযুক্ত জনতা দলের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়েছিল দলের মুখপাত্র দেবেশকুমার ঠাকুরের কাছে। তাঁর বক্তব্যে নীতীশকে বলা রাজনাথের কথাগুলিরই পরোক্ষ একটা প্রতিফলন ধরা পড়েছে। জেডিইউ মুখপাত্র বলেছেন, “এটা নিতান্তই বিজেপি-র অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এর সঙ্গে এনডিএ-র কোনও সম্পর্ক নেই।” এনডিএ-র দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিকের এই গা ছাড়া প্রতিক্রিয়া স্বাভাবিক ভাবেই অর্থবহ। শিবসেনা, অকালি দলের মতো বাকি শরিকদের প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে এর বৈপরীত্য ছিল স্পষ্ট। বিশেষ করে অকালি নেতা তথা পঞ্জাবের উপমুখ্যমন্ত্রী সুখবীর বাদল এ দিন বলেন, “মোদী প্রচার কমিটির
প্রধান হওয়ায় তা লোকসভা ভোটে এনডিএ-র জয়ে অনুঘটকের
কাজ করবে।”
এটা ঘটনা যে অকালি দল ও নীতীশের রাজনৈতিক মতাদর্শ এক নয়। এবং সেই কারণেও উভয়সঙ্কটে পড়েছেন নীতীশ। কারণ, বিজেপি-র সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলে বিহারে উচ্চ বর্ণের ভোট হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে কেবল পিছিয়ে পড়া ও সংখ্যালঘু ভোট নিয়ে জেতা সম্ভব কি না তা-ও স্পষ্ট নয়। এবং এই যুক্তিতেই শরদ যাদবের মতো জেডিইউয়ের অনেক নেতাই বিজেপি-র সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে চান না। তাঁরা মনে করেন, এটা হারাকিরি হয়ে যাবে। তা ছাড়া সম্প্রতি মহারাজগঞ্জে লোকসভার উপনির্বাচনের ফলও দেখিয়ে দিয়েছে যে, বিজেপি সহযোগিতা না করলে কী পরিণাম হতে পারে! তবে একই সঙ্গে নীতীশের আশঙ্কার দিকগুলিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয় তাঁর দলের ভবিষ্যতের পক্ষে। তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রে বলা হচ্ছে, বিজেপি মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তুলে ধরলে সংখ্যালঘু ভোট হারাতে পারেন তাঁরা। তা ছাড়া, মোদীর নেতৃত্বে লোকসভা ভোটে লড়লে ধর্মনিরপেক্ষ নেতা হিসেবে নীতীশের ভাবমূর্তিতে আঁচ পড়তে পারে। সংখ্যালঘু ভোট হারালে ভবিষ্যতে বিজেপি-র ওপর নীতীশের নির্ভরতাও বেড়ে যাবে। সংযুক্ত জনতা দলের রাজনৈতিক অস্তিত্বই সঙ্কটে পড়তে পারে তখন।
নীতীশের এই সঙ্কটকে কাজে লাগাতে ইতিমধ্যেই মাঠে নেমে পড়েছে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। এবং মূলত সেই কারণেই লোকসভা ভোটের আগে লালুপ্রসাদ যখন জোটের জন্য কংগ্রেসের দরজায় হত্যে দিয়ে পড়ে রয়েছেন তখনও সনিয়া-রাহুল নির্বিকার। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, কংগ্রেস নেতারা এখন নীতীশকুমারকে বিজেপি-সঙ্গ ছাড়ার জন্য ক্রমাগত উস্কানি দিয়ে যাচ্ছেন। নীতীশকে তাঁরা এ-ও বলছেন যে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নে জোট ছাড়ার এটাই মোক্ষম সময়। কারণ, সাম্প্রদায়িক নেতার নেতৃত্বে ভোটে লড়লে কোনও যুক্তিতেই নিজের ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি অটুট রাখা সম্ভব নয়। এতে নেতা হিসেবে তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতাতেও আঁচ পড়তে বাধ্য।
কংগ্রেসের এক নেতা আজ এই প্রসঙ্গে বলেন, “নীতীশের ব্যাপারে কংগ্রেসের আশাবাদী মূলত দু’টি কারণে। প্রথমত, নীতীশ জেদি নেতা। মোদীর বিরুদ্ধে যে জেহাদ তিনি ঘোষণা করেছেন, তার পর আপস করলে তাঁর মুখ পুড়বে। নীতীশের আত্মাভিমান সেটা হতে দেবে বলে মনে হয় না।
দ্বিতীয়ত, এমনিতেই জাতপাতের সমীকরণে মহারাজগঞ্জে লালুপ্রসাদের দলের পাল্লা ভারী ছিল। কিন্তু নীতীশ নিজেও মনে করেন, সেখানে জেডিইউয়ের হারের ব্যবধান এই কারণেই বেড়েছে যে সংখ্যালঘুরা তাঁকে ভোট দেননি। এবং জাতীয় রাজনীতিতে মোদীর উত্থানের জেরেই এটা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এই অবস্থায় নীতীশকে নিয়ে বিজেপি-কংগ্রেসের দড়ি টানাটানি এ বার আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। বিজেপি নেতৃত্ব যদি এর পরেও নীতীশকে ধরে রাখতে পারেন, তা হলে ভোটের আগে তাঁদের জোট ও মনোবল দুই অটুট থাকবে। নীতীশ জোট ছাড়লে লোকসভা ভোটের আগেই বড় রকম ধাক্কা খাবে বিজেপি। সেটা সুনিশ্চিত করতে এখন সব
রকম চেষ্টা শুরু করে দিয়েছেন
কংগ্রেস নেতৃত্ব। |
|
|
|
|
|