নেতারা নন, মোদীকে বেছে নিয়েছেন কর্মীরাই
লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে লালকৃষ্ণ আডবাণীকে প্রথম রাউন্ডে হারিয়ে দিলেন নরেন্দ্র মোদী।
যে আডবাণী ১৯৪২ সালে আরএসএসে যোগ দিয়ে তাঁর রাজনৈতিক যাত্রা শুরু করে ১৯৫২ সালে জনসঙ্ঘে যোগ দেন এবং ১৯৭৫ সালে সেই জনসঙ্ঘেরই সভাপতি হন, যে আডবাণী
কার্যত নরেন্দ্র মোদীর ‘স্রষ্টা’, সেই আডবাণীকে আজ কী ভাবে হারাতে পারলেন গুজরাতের হ্যাটট্রিক করা এই মুখ্যমন্ত্রী?
লোকসভা ভোটে প্রচার কমিটির প্রধান হিসেবে মোদীর নাম ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গে যে ভাবে গোয়ার কর্মসমিতিতে কর্মীদের উন্মাদনা দেখা গেল, যে ভাবে পটনা থেকে লখনউ নানা শহরে বিজেপি কর্মীদের মিছিল বেরলো, তা দেখে বিজেপি সূত্র বলছে, রাজনৈতিক দল আসলে গুটিকতক নেতা দিয়ে তৈরি নয়। রাজনৈতিক দল গড়ে ওঠে কর্মী-সমর্থক-শুভাকাঙ্খী জনসমাজকে নিয়ে।
এই মুহূর্তে গোয়ায় প্রবল বর্ষণ শুরু হয়েছে। অরুণ জেটলি বললেন, “কালো মেঘ দূর হয়ে গিয়েছে। এখন নেমেছে বর্ষা।” বিজেপি নেতাদের বক্তব্য, এই উৎসাহের প্লাবনই নরেন্দ্র মোদীকে স্বাভাবিক নিয়মেই ২০১৪ সালের ভোটের প্রধান মুখ হিসেবে তুলে ধরেছে। এই মুহূর্তে মোদীই যে দলের সব থেকে জনপ্রিয় নেতা, সেটা বারবারই প্রকাশ্যে মেনে নিয়েছেন দলের সভাপতি রাজনাথ সিংহ। রাজস্থানে বসুন্ধরা রাজের জন্য সভা করতে গিয়ে রাজনাথ দেখেছেন, তিনি বক্তৃতা দিতে উঠতেই দলীয় কর্মীরা ঘনঘন স্লোগান তুলেছে, ‘মোদী লাও, দেশ বাঁচাও’। ভরদুপুরে প্রবল গরমে ছত্তীসগঢ়ে রমন সিংহের বিকাশ যাত্রাতেও মোদীর উপস্থিতিতে কর্মীদের মধ্যে একই রকম উন্মাদনা দেখা গিয়েছে।
সবারে আমি নমি। নতুন দায়িত্ব পাওয়ার পরে মোদী। গোয়ায়, রবিবার। ছবি: পি টি আই
অতীতে কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা গোষ্ঠী, যাকে ‘সিন্ডিকেট’ বলা হতো, তাদের হারিয়েছিলেন ইন্দিরা গাঁধী। ১৯৬৭ সালের নির্বাচনে ইন্দিরার নেতৃত্বে কংগ্রেস বড় ধাক্কা খায়। ১৯৬২ সালের ৩৬১টি আসন এক ধাক্কায় নেমে আসে ২৮৩তে! ইন্দিরা বাধ্য হয়ে দলে তাঁর চরম বিরোধী হিসেবে পরিচিত মোরারজি দেশাইকে উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেন। কিন্তু সমস্যা মেটেনি। উল্টে দু’বছরের মধ্যেই কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে যান মোরারজি দেশাই, রামমনোহর লোহিয়ারা। সে সময় কেন্দ্রে ফের ক্ষমতায় ফেরার ব্যাপারে সন্দিহান ছিলেন কংগ্রেসের অনেক নেতাই। কিন্তু ১৯৭১ সালে বিপুল ভাবে জিতে ফের কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসেন ইন্দিরা। তখনই বোঝা গিয়েছিল, সাংগঠনিক ক্ষমতার সিলমোহর থাকা সত্ত্বেও দলের ওই প্রবীণ নেতারা আদতে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন। উল্টো দিকে ইন্দিরা কিন্তু দলের সাধারণ কর্মী এবং আমজনতার সমর্থন নিয়েই ’৭১ সালে বিপুল সাফল্য পেয়েছিলেন। ’৭১-এর নির্বাচনী সাফল্যের আগে ইন্দিরা সম্পর্কে বলা হতো, তিনি সাহসী প্রধানমন্ত্রী। ’৭১ সালে তিনি হয়ে গেলেন ‘দেবী দুর্গতিনাশিনী’। আবার মানুষ পরিত্যাগ করায় সেই ইন্দিরাই ’৭৫ সালে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করলেন।
একই ভাবে প্রদেশ কংগ্রেসের সাংগঠনিক নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারিয়ে দিয়েছিলেন সোমেন মিত্র। কিন্তু কর্মী-সমর্থক ও বিপুল সংখ্যক মানুষের সমর্থন নিয়ে মমতাই পশ্চিমবঙ্গে প্রধান সিপিএম-বিরোধী শক্তি হয়ে উঠলেন। তৃণমূল কংগ্রেসই হয়ে গেল প্রধান বিরোধী দল এবং মমতা পৌঁছে গেলেন সাফল্যের শীর্ষে। সমস্যা হচ্ছে, ভারতে প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক দলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নিজেদের এত বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভাবতে শুরু করেন যে, নিচুতলার সংগঠন বা সমর্থকরা কী চাইছেন, সেটা তাঁদের কাছে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যায়। ছবিটা আলাদা নয় সিপিএমের ক্ষেত্রেও।


এই সিদ্ধান্তে শুধু বিজেপি নয়,
গোটা দেশের উপকার হবে।
শিবরাজ সিংহ চৌহান

মোদীর নতুন দায়িত্বে ওঁর জন্য
আমার শুভেচ্ছা রইল।
সুষমা স্বরাজ

দলে সর্বস্তরের কর্মীরা এটাই
চেয়েছিলেন। মানুষ চেয়েছিল।
অরুণ জেটলি


মোদীর সমর্থনে সবার
আগে মুখ খোলাদের দলে
আমিও ছিলাম।
যশবন্ত সিন্হা

আডবাণীজির কথা ভাবলে
কষ্ট হচ্ছে। বিজেপি অত্যন্ত
অকৃতজ্ঞ একটা দল।

দিগ্বিজয় সিংহ

যে দল নিজেদের নেতাদের
একসঙ্গে রাখতে পারে না, তারা
দেশ চালাবে কী করে?
রাজীব শুক্ল

গোয়ার ঘোষণার অনেক আগে থেকেই আডবাণী বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে দেখতে চান না। শুধু আডবাণী নন, বিজেপির বেশ কিছু শীর্ষ নেতাও মোদীকে অহঙ্কারী বলে মনে করেন। বিজেপির অনেক নেতাই আডবাণীকে সামনে রেখে গোয়ায় মোদীর ব্যাপারে দলের ঘোষণা রদ করতে মরিয়া ছিলেন। সুষমা স্বরাজ, অনন্ত কুমার, বেঙ্কাইয়া নায়ডুরা চাননি, আডবাণীর অনুপস্থিতিতে এই ঘোষণা হোক। যশবন্ত সিন্হা, উমা ভারতী, যশোবন্ত সিংহ, শত্রুঘ্ন সিন্হা, রবিশঙ্কর প্রসাদ, ভুবনচন্দ্র খান্ডুরির মতো বহু নেতা গোয়ায় এ বারের ঐতিহাসিক কর্মসমিতির বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন। এমনকী মানেকা ও বরুণ গাঁধীও ফ্রান্সে ছুটি কাটাতে ব্যস্ত! কিন্তু এত বাধা, এত টালবাহানা পেরিয়েও মোদী জিতলেন কারণ তাঁর সঙ্গে দলের কর্মী-সমর্থকরা সব থেকে বেশি সংখ্যায় রয়েছেন বলে। শীর্ষ নেতাদের মধ্যে অরুণ জেটলি ছাড়া বাকি যে নেতারা মোদীকে সমর্থন করছেন, তাঁরা কিন্তু সকলেই গুরুত্বের বিচারে বিজেপির দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্তরের নেতা। যেমন স্মৃতি ইরানি, অমিত শাহ, প্রকাশ জাভড়েকর। মোদী জানেন তাঁর এই অভিষেক সম্ভব হল কারণ এই মুহূর্তে দলের সিংহভাগ কর্মী মনে করেন, একমাত্র মোদীই দলকে হৃতমর্যাদা ফিরিয়ে দিতে পারেন। তাই আডবাণীর অনুপস্থিতি এবং শেষ কর্মিসভায় সুষমা স্বরাজের মতো শীর্ষ নেতৃত্ব গরহাজির থাকলেও মোদীর রথ কিন্তু বর্ষার গোয়ায় কাদায় আটকে গেল না!

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.