বক্সিংয়ে দক্ষ নেতা ডরাতেন না কিছুকেই
লেজে পড়ার সময়ে বক্সিং করতেন। তাই মেজাজটাও ছিল ডাকাবুকো। শ্রমিকদের দাবিদাওয়া থেকে দলীয় কর্মীদের নানা সমস্যা, কানে এলেই ঝাঁপিয়ে পড়তেন তিনি। রাজনীতির মানুষ হলেও সকলের সঙ্গেই সদ্ভাব রেখে চলতেন দিলীপ সরকার। রবিবার তাই প্রকাশ্যে সিপিএমের এই প্রাক্তন বিধায়কের গুলিতে খুন হওয়ার ঘটনায় হতভম্ব সকলেই। দলীয় কর্মী-সমর্থক থেকে পাড়াপড়শি, কেউই বুঝে উঠতে পারছেন না, কেন এ ভাবে খুন হতে হল দিলীপবাবুকে।
ছাত্রাবস্থা থেকেই খেলাধুলোয় আগ্রহ ছিল দিলীপবাবুর। প্রথমে কলকাতার মেট্রোপলিটন স্কুল, পরে বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে বিএসসি পাশ করেন তিনি। এলাকার বক্সিং খেলোয়াড় হিসাবে পরিচিত ছিলেন।
প্রাক্তন বিধায়ক খুন হওয়ার পরেই ঝাঁপ পড়ল দোকানে। সুনসান হল পথঘাট।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, জেলা ও রাজ্য স্তরের প্রতিযোগিতায় সুনামের সঙ্গে খেলেছেন। বক্সিং প্রশিক্ষক হিসাবে ১৯৬৫ সালে তিনি বার্ন স্ট্যান্ডার্ড সংস্থায় চাকরি পেয়ে বার্নপুরে আসেন।
কিন্তু কারখানায় বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন দিলীপবাবু। তখনই তিনি বার্নপুরের শ্রমিক নেতা সিপিএমের চন্দ্রশেখর মুখোপাধ্যায়ের সংস্পর্শে আসেন। যুক্ত হন সিটুর সঙ্গে। আন্দোলন করে প্রথমে সাসপেন্ড, পরে বরখাস্ত হন। তার পরে পুরোপুরি রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে যান।
দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে হিরাপুর থানায় বিক্ষোভ দেখাল জনতা।
দিলীপবাবুর মূল কাজের ক্ষেত্র ছিল শ্রমিক সংগঠন। ইস্পাত ও খনি শিল্পে তিনি সিটু নেতৃত্বের পুরোভাগে ছিলেন বহু বছর। ২০০৬ সালে বিধানসভা ভোটে প্রার্থী হয়ে বারাবনিতে তৃণমূলের মানিক উপাধ্যায়কে প্রায় ছ’হাজার ভোটে হারিয়ে দেন তিনি। বিধায়ক থাকাকালীনই তিনি শারীরিক ভাবে অসুস্থ হন।
চিকিৎসার জন্য কয়েক বার তাঁকে দক্ষিণ ভারতের হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। অসুস্থতার জন্য বিধায়কের পদ ও শ্রমিক সংগঠনের দায়িত্ব এক সঙ্গে পালন করতে পারছিলেন না। ২০১১-এর বিধানসভা ভোটে তাই আর প্রার্থী হননি। রাজ্যে ক্ষমতায় হাতবদলের পরেও শ্রমিক সংগঠন ও দলের কাজকর্ম থেকে দূরে থাকেননি।
অকুস্থল
বিস্তারিত...
সকালে খবরটা আসার পরেই পুরানহাটে দিলীপবাবুর আবাসন জনারণ্য হয়ে ওঠে। সদ্য নির্মিত একটি চারতলা আবাসনের দোতলায় দু’কামরার ঘরে স্ত্রীকে নিয়ে থাকছিলেন তিনি। পরিবার সূত্রে জানা যায়, বেশ কিছুদিন ধরে দিলীপবাবু কোমরের যন্ত্রণায় ভুগছিলেন। ছ’মাস আগে এক জন নিরাপত্তা রক্ষী দিয়েছিল সরকার। মাসখানেক আগে তাঁকে পত্রপাঠ বিদেয় করে দেন দিলীপবাবু নিজে। প্রাতর্ভ্রমণেও নিয়মিত বেরোতেন না। বেরোলেও আলাদা রাস্তায়, আলাদা সময়ে যেতেন। বাড়ি থেকে এক কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে যেতেন না। পাঁচ দিন পরে রবিবার ভোরে বেরিয়েছিলেন। শেফালীদেবী বলেন, “রাজ্যে পট পরিবর্তনের পর থেকেই আমার মনে কু ডাকত। আজ সকালেও যেতে নিষেধ করেছিলাম। আমার কথা শুনলে এ ভাবে চলে যেতে হতো না!”
বিকেলে দিলীপ সরকারের শেষযাত্রায় ঢল নামল মানুষের।
রাস্তার এককোণে দাঁড়িয়ে দিলীপবাবুর আবাসনের দিকে চেয়ে ঘনঘন চোখ মুছছিলেন শঙ্কর চট্টোপাধ্যায়। বললেন, “দেখা হলেই পরিবারের কুশল জানতে চাইতেন। আর কখনও জিজ্ঞাসা করবেন না!” বাড়ির কাজে বাইরে যাওয়ার কথা ছিল দর্পণ পালের। কিন্তু খবরটা পাওয়ার পরে মাঝপথ থেকে ফিরে এসেছেন। তিনি বলেন, “পরিবারের অভিভাবক হয়ে উঠেছিলেন দিলীপবাবু। এ বার বিপদে পড়লে কার কাছে ছুটে যাব, বুঝতে পারছি না।” লিলি মুখোপাধ্যায় নামে আর এক পড়শি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “এলাকায় অন্যায় হলেই প্রতিবাদ করতেন। এ বার কী হবে?” শুধু তাঁর পাড়া নয়, বার্নপুরের নানা এলাকাতেই বাজার-দোকানের ঝাঁপ পড়ে যায় এ দিন। যানবাহন বন্ধ হয়ে পড়ে।
প্রাক্তন বিধায়ক দিলীপ সরকারের খুনের প্রতিবাদে দুর্গাপুরে সিটি সেন্টারে মিছিল সিপিএমের।
জেলায় প্রাক্তন বিধায়কের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা এই প্রথম নয়। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বর্ধমানের দেওয়ানদিঘিতে পিটিয়ে খুন করা হয় সিপিএমের প্রদীপ তা-কে। সেই ঘটনায় নিহত হন দলের জেলা কমিটির সদস্য কমল গায়েনও। সেক্ষেত্রে সিপিএম-তৃণমূল বিবাদ থেকেই গোলমালের সূত্রপাত। দিলীপবাবুকে এ দিন যে ভাবে খুন করা হয়, সেই একই কায়দায় খুন বার্নপুরে আগে হয়েছে। গত বছরই মে মাসে প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়ে খুন হন প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক বামাপদ মুখোপাধ্যায়ের ছেলে অর্পণবাবু। তারও বছরখানেক আগে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হন সিপিএম কর্মী নির্গুণ দুবে। অর্পণ-হত্যায় পেশাগত বিবাদ ও নির্গুণ-হত্যার পিছনে ব্যক্তিগত বিবাদ থাকতে পারে বলে প্রথম থেকে অনুমান পুলিশের। কিন্তু দিলীপবাবু খুন হওয়ার পরে কার্যত অন্ধকারে পুলিশ। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমল হালদার অভিযোগ করেন, পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলের কাজকর্ম দেখার জন্য দিলীপবাবু বারাবনি যাতায়াত শুরু করেছিলেন। তা হয়তো শাসকদলের নেতা-কর্মীরা ভাল ভাবে নেননি। খুনের পিছনে এই কারণও থাকতে পারে বলে দাবি করেছেন অমলবাবু। যদিও রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী মলয় ঘটকের বক্তব্য, “শাসকপক্ষের লোকজন এত বোকা নয় যে ভোটের আগেই প্রভাবশালী এক সিপিএম নেতাকে খুন করে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করবে।” এডিসিপি (পশ্চিম) সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “আমরা কোনও সম্ভাবনাই উড়িয়ে দিচ্ছি না।” রবিবার বিকাল ৪টে নাগাদ প্রয়াত নেতার শেষযাত্রায় সামিল হন হাজার হাজার মানুষ। বক্সিংয়ে দক্ষ নেতা চলে গে রিংয়ের বাইরে।
ছবি: শৈলেন সরকার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.